Online Fraud

অনলাইন গেমে আলাপ, আমেরিকায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে লেক গার্ডেন্সের মহিলাকে ২৩ লাখের প্রতারণা!

তিন দশকেরও বেশি সময় লন্ডনে থাকার পর ওই মহিলা কলকাতায় পাকাপাকি ভাবে থাকা শুরু করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৪:১৯
Share:

অনলাইন গেমেও এখন প্রতারকদের আনাগোনা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

অনলাইন গেমেও এ বার বিপদের ভয়! অনলাইন জালিয়াতদের ফাঁদে পা দিয়ে ২৩ লাখ টাকার বেশি খোয়ালেন লেক গার্ডেন্সের এক মহিলা। যিনি নিজেই খোদ লন্ডন পুলিশের সঙ্গে কাজ করেছেন ২০ বছর। বুধবারই ওই মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে কলকাতা পুলিশের সাইবার অপরাধ দমন শাখা। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের ধারণা, নিউইয়র্ক থেকে দিল্লি, সর্বত্র রয়েছে প্রতারকদের জাল।

Advertisement

প্রতারিত ওই মহিলা পুলিশকে তাঁর অভিযোগে জানিয়েছেন, তিন দশকেরও বেশি সময় লন্ডনে থাকার পর তিনি কলকাতায় পাকাপাকি ভাবে থাকা শুরু করেন। তদন্তকারীদের তিনি জানিয়েছেন, অনলাইনে তিনি নিয়মিত ওয়ার্ডগেম খেলেন। সে রকমই একটি ওয়ার্ড গেম খেলার সূত্রে এ বছর জুলাই মাসে তাঁর আলাপ হয় মার্ক অ্যান্ডারসন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। মার্ক নিজেকে আমেরিকার বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন এবং জানিয়েছিলেন যে তিনি একটি তেলের খনিতে উচ্চপদে চাকরি করেন।

প্রতারিত মহিলা পুলিশকে জানিয়েছেন, ‘‘ওয়ার্ড গেমের মাধ্যমে শুরু হলেও আমাদের আলাপ হলেও ধীরে ধীরে আরও গাঢ় হয়। আমরা এর পর হোয়াটস্অ্যাপে নিয়মিত কথা বলতে শুরু করি।’’ সেই সূত্রেই মার্ক ওই মহিলাকে গল্পের ছলে জানান যে তাঁর স্ত্রী ভারতীয় ছিলেন। কিন্তু একটি মোটর দুর্ঘটনায় পাঁচ বছর আগে স্ত্রী এবং মেয়ের মৃত্যু হয়। ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ার পর মার্ক ওই মহিলাকে বিয়ে করার প্রস্তাবও দেন। পুলিশকে প্রতারিত ওই মহিলা জানিয়েছেন যে মার্ক তাঁকে জানিয়েছিলেন যে তিনি আমেরিকায় ভিসার ব্যবস্থা করছেন। ভিসা নিশ্চিত হলেই তাঁরা বিয়ে করবেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: অসমে কার্ফু ভেঙে রাস্তায় মানুষ, চলছে বিক্ষোভ, ট্রেন বন্ধ, বাতিল উড়ান​

এরই মধ্যে মার্ক প্রতারিতকে জানান যে তিনি কাজে যাচ্ছেন মেক্সিকো উপসাগরে। সমুদ্রতল থেকে তেল খননের কাজে। সেখানকার অনেক ছবিও প্রতারিতকে পাঠিয়ে নিজেকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলেন প্রতারিতের কাছে। কলকাতা পুলিশকে করা অভিযোগে প্রতারিত জানিয়েছেন, মেক্সিকো উপসাগরে পৌঁছনোর কথা বলার কয়েক দিন পরেই তিনি মার্কের ফোন পান। মার্ক তাঁকে জানান যে তাঁদের জাহাজে আগুন লেগে যায়। তাঁর এক সহকর্মী গুরুতর জখম। তাঁর ভারতীয় টাকায় ২৫ লাখ টাকা লাগবে। না হলে তাঁর খুব বিপদ হবে। প্রতারিতের দাবি, তিনি সরল বিশ্বাসে ওই টাকা দেন। মার্কের দেওয়া ভারতের দু’টি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে ৫ লাখ টাকা করে ১০ লাখ টাকা ট্রান্সফার করেন। ওই একই দিনে নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের একটি অ্যাকাউন্টে ১০ লাখ টাকা ট্রান্সফার করেন প্রতারিত মহিলা। গত অগস্টের ১৩ তারিখ ওই ২০ লাখ টাকা দেওয়ার পর ফের মার্কের অনুরোধে আরও ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা তিনি দেন সেপ্টেম্বর মাসের ১৬ তারিখ। মোট ২৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা তিনি মার্ককে দেন। কিন্তু তার পর মার্কের কথা মতো ফেরত না পাওয়ার পর তাঁর সন্দেহ হয় যে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। তার পরই তিনি প্রথমে লেক থানায় অভিযোগ করতে যান। সেখান থেকে তাঁকে লালবাজারে সাইবার থানায় যোগাযোগ করতে বললে তিনি সেখানে অভিযোগ দায়ের করেন।

আরও পড়ুন: চিন্তা নেই অসম, টুইট মোদীর ॥ কং খোঁচা, নেট নেই পড়বে কী করে?​

প্রাথমিক তদন্তের পর সাইবার অপরাধ দমন শাখার তদন্তকারীদের একজন বলেন, ‘‘ এই প্রতারণার সঙ্গে নাইজেরীয় প্রতারকদের মোডাস অপারেন্ডি-র মিল রয়েছে। তবে এখন পূর্ব ইউরোপেরও অনেক দেশ এ ধরনের প্রতারণায় হাত পাকিয়েছে।’’ এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘ একটি বিষয় স্পষ্ট, ওই চক্র ভারত থেকে আমেরিকা সর্বত্রই সক্রিয়। না হলে আমেরিকার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে পারত না।’’ তদন্তকারীরা অভিযোগকারিনীর সঙ্গে কথা বলে মারিয়া কর্টেজ নামে এক মহিলার নামও পেয়েছেন যিনি মার্কের হয়ে অ্যাকাউন্ট নম্বরগুলো জানিয়েছিলেন প্রতারিত মহিলাকে। সূত্রের খবর, ভারতের যে অ্যাকাউন্টগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, সে গুলো ‘ভাড়া’-র অ্যাকাউন্ট। অর্থাৎ প্রতারকরা অ্যাকাউন্টের মালিককে অল্প কিছু টাকা দিয়ে নিজেরাই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন। তবে অনলাইন গেমকেও যে ভাবে প্রতারকরা ব্যবহার করছে জালিয়াতির জন্য তা তাজ্জব করেছে গোয়েন্দাদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement