গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
একটি ফুড ডেলিভারি অ্যাপে খাবার অর্ডার করতে গিয়ে ফের প্রতারণার শিকার শহরবা্সী। এক যুবকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে দু’দফায় মোট ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিল সাইবার অপরাধীরারা।
মঙ্গলবার হরিদেবপুরের বাসিন্দা ঋষভ ঘোষ নামে এক যুবক ইন্টারনেট সার্চ করে একটি ফুড ডেলিভারি অ্যাপে তিনি খাবার অর্ডার দেন। কিন্তু অনেকটা সময় চলে যাওয়ার পরও খাবার না এলে তিনি ইন্টারনেটে ওই ফুড ডেলিভারির সংস্থার নম্বর খুঁজে বার করেন। তারপর সেই নম্বরে ফোন করে তাঁর অভিযোগ জানান। সংস্থার পক্ষ থেকে যিনি ফোন ধরেছিলেন, তিনি যুবককে জানিয়েছিলেন সংস্থা থেকে যুবকের মোবাইল নম্বরে একটি লিঙ্ক পাঠানো হচ্ছে। ওই লিঙ্কে ক্লিক করলেই তিনি ক্যাশ ব্যাক পাবেন।
সেই মতো পাঠানো লিঙ্কে ক্লিক করেন যুবক। কিন্তু ক্লিক করার পর কিছুক্ষণের জন্য তাঁর ফোন হ্যাং হয়ে যায়। তারপর মোবাইলে পিসি কানেক্ট ওয়াইফাই বলে একটা লেখা ফুটে ওঠে। তিনি বুঝতে পারেন ফোনে কিছু একটা গড়বড় হয়েছে। কিন্তু কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই যাদবপুরে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে দু’দফায় মোট ১০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়। প্রথমে সাড়ে সাত হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় দফায় আড়াই হাজার টাকা।
আরও পড়ুন: জামিন মঞ্জুর করল সুপ্রিম কোর্ট, ১০৫ দিন পর মুক্ত পি চিদম্বরম
পরে তিনি ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, মুম্বই থেকে এই টাকা তোলা হয়েছে। প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝতে পেরে তিনি বুধবার সকালেই যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। লালবাজারের সাইবার অপরাধদমন শাখাতেও অভিযোগ জানাবেন তিনি।
আরও পড়ুন: যাদবপুর ছাড়িয়ে প্রতারণার জাল কড়েয়া-নাকতলা-কালীঘাটেও, প্রতারণার অঙ্ক পেরলো ১২ লাখ!
সম্প্রতি অনেকটা একই কায়দায় বাইপাসের ধারে একটি রেস্তরাঁয় টেবিল বুকিং করতে গিয়ে একই ভাবে প্রতারণার শিকার হন এক ব্যক্তি। তিনিও ইন্টারনেটে সার্চ করে রেস্তরাঁর নম্বর পেয়েছিলেন। ফোনের ওপার থেকে প্রথমে তাঁর কাছে টেবিল বুকিংয়ের টোকেন মানি হিসাবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হয়। তারপর একটি ওটিপি পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। ওই ওটিপি ব্যবহার করতেই তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: আইটিবিপি-র জওয়ানদের মধ্যে গুলি বিনিময়, ছত্তীসগঢ়ে বেনজির সংঘর্ষে নিহত ৬, আহত ২
গত কয়েকদিনে নানাভাবে সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন শহরবাসী। যাদবপুর, কড়েয়া, নেতাজি নগর এবং চারুমার্কেট এলাকার একাধিক ব্যাঙ্কগ্রাহক থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছেন। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলিধর শর্মা মঙ্গলবার জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র যাদবপুরেই অভিযোগ জমা পড়েছে ৪৪টি। ১৩টি জমা পড়েছে চারু মার্কেট থানায়। এই দু’টি থানা এলাকা মিলে প্রায় ১২ লাখ টাকার প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। এগুলো অবশ্য সবকটিই ছিল এটিএম জালিয়াতি। এতদিন এই এটিএম জালিয়াতিকে কেন্দ্র করেই আতঙ্কিত ছিলেন সাধারণ মানুষ। এ বার তার সঙ্গে সমান তালে নতুন ধরনের অনলাইন প্রতারণার শিকার হতে শুরু করেছেন মানুষ। বিশেষ করে এই ধরনের ইন্টারনেট সার্চ করে কোনও কিছু অর্ডার দেওয়ার ক্ষেত্রেই গ্রাহকেরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
এই সমস্ত অপরাধের পিছনে কে বা কোনও গ্যাং জড়িত রয়েছে কি না, তার খোঁজ শুরু করে দিয়েছেন তদন্তকারীরা।