সৌমেন কুণ্ডু।
হাওড়ার চ্যাটার্জিহাটের সিপিএম নেতা সৌমেন কুণ্ডুর রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় অবশেষে এক মহিলাকে গ্রেফতার করল রেল পুলিশ। শুক্রবার শিবপুরের ক্ষেত্র ব্যানার্জি লেন থেকে সোমা মণ্ডল (৩৯) নামে ওই মহিলাকে গ্রেফতার করে শালিমার জিআরপি। তাঁর বিরুদ্ধে ওই সিপিএম নেতাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। ধৃতকে এ দিনই হাওড়া আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর শাখার আবাদা এবং সাঁকরাইল স্টেশনের মাঝে রেললাইনের ধার থেকে উদ্ধার হয় সিপিএমের শাখা কমিটির সম্পাদক সৌমেনের দেহ। অবিবাহিত সৌমেনের পরিবারের তরফে প্রথমে কোনও অভিযোগ দায়ের করা না হলেও এক সপ্তাহ পরে সৌমেনের দাদা জয়দেব কুণ্ডু রেল পুলিশে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, আট বছর আগে সৌমেনের সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন সোমা। চ্যাটার্জিহাটে তাঁদের বাড়ির কাছে ওই মহিলাকে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে দিয়েছিলেন সৌমেন। সেটির ভাড়াও মেটাতেন তিনি। শিবপুর ট্রাম ডিপোর কাছে সোমার স্বামীর একটি মিষ্টি ও চায়ের দোকান রয়েছে। তদন্তকারীরা জানান, সোমাদের আর্থিক অবস্থা বিশেষ ভাল ছিল না। সংসারের অভাব মেটাতে গিয়েই তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে সৌমেনের।
রেল পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি সোমার সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখতে চাইছিলেন না ওই সিপিএম নেতা। মহিলা অবশ্য বিষয়টি মেনে নেননি। এই নিয়েই শুরু হয় দু’জনের টানাপড়েন। পুলিশ জানিয়েছে, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সেই মনোমালিন্য চরম আকার ধারণ করে। সৌমেন ও সোমার মধ্যে কথাবার্তা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তদন্তকারীদের দাবি, ওই সিপিএম নেতার মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দেখে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে রামরাজাতলা স্টেশনে সাইকেল রেখে বিভিন্ন ট্রেনে উঠে অন্তত পাঁচ বার রামরাজাতলা এবং আবাদা স্টেশনের মধ্যে যাতায়াত করেছিলেন। শেষে সাঁকরাইল ও আবাদা স্টেশনের মাঝে ট্রেনের নীচে আত্মঘাতী হন।
রেল পুলিশের ডেপুটি সুপার চন্দ্রশেখর দাস বলেন, ‘‘ওই যুবকের মোবাইলের কল লিস্ট দেখে জানা গিয়েছে, মৃত্যুর আগে পাঁচ মিনিটের মধ্যে তাঁকে ১০-১৫ বার ফোন করেছিলেন সোমা। তা দেখেই আমাদের সন্দেহ হয়। পাশাপাশি পাড়ার যে ক্লাবে সৌমেনের যাতায়াত ছিল, সেই ক্লাবের সদস্যদের গোপন জবানবন্দি থেকেও ওই মহিলা সম্পর্কে সব তথ্য উঠে আসে।’’