ধৃতের নাম পিঙ্কি দাস। —ফাইল চিত্র।
প্রায় ১৪ বছর আগে এক শিশুকন্যাকে পাচারের অভিযোগের তদন্তে নেমে এক মহিলাকে গ্রেফতার করল পর্ণশ্রী থানার পুলিশ। ধৃতের নাম পিঙ্কি দাস। তাঁকে বৃহস্পতিবার আলিপুরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের আদালতে পেশ করা হয়। বিচারক তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি, বারুইপুর থানা এলাকার সুভাষগ্রামের বাসিন্দা এক দম্পতির কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বর্তমানে ১৫ বছর বয়সি ওই কিশোরীকে। তাকে হোমে পাঠানো হয়েছে।
সুভাষগ্রামের বাসিন্দা ওই দম্পতিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁদের বক্তব্যও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, পিঙ্কির মারফত ১৪ বছর আগে ওই শিশুটিকে পাচার করা হয়েছিল।
পুলিশ এবং আদালত সূত্রের খবর, অভিযোগকারী দম্পতি পর্ণশ্রী থানা এলাকার বাসিন্দা। কয়েক মাস আগে তাঁরা থানায় অভিযোগে জানান, ১৪ বছর আগে তাঁদের এক বছর বয়সি শিশুকন্যাকে পাচার করা হয়েছিল। সম্প্রতি সূত্র মারফত তাঁরা মেয়ের বিষয়ে জানতে পেরে পুলিশের পাশাপাশি কলকাতা হাই কোর্টেরও দ্বারস্থ হন।
হাই কোর্টের নির্দেশ এবং শিশুটির বাবা-মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। সূত্রের খবর, ঘটনায় পিঙ্কি নামে ওই মহিলা জড়িত বলে খবর পায় পুলিশ। যার ভিত্তিতে বুধবার সন্ধ্যায় পিঙ্কিকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, বেহালা এলাকায় মন্দিরের বাইরে ফুল বিক্রি করেন পিঙ্কি। বছর ১৫ আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুভাষগ্রামের নিঃসন্তান ওই দম্পতি সেখানকার একটি মন্দিরে পুজো দিতে আসতেন। সেই সূত্রে পিঙ্কির সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। পুলিশের দাবি, পিঙ্কি জেরায় জানিয়েছেন, ওই দম্পতি বাচ্চার খোঁজ করছেন জানতে পেরে সেই বন্দোবস্ত করে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
এ দিকে, বাচ্চা হওয়ার খবর পেয়ে পর্ণশ্রীর দম্পতির সঙ্গে লোক মারফত যোগাযোগ করেন শিশুসন্তানের অনুসন্ধান করতে থাকা পিঙ্কি। সেই সময়ে দ্বিতীয় বার কন্যাসন্তান ঘরে আসে পর্ণশ্রীর দম্পতির। আত্মীয়স্বজন মারফত যোগাযোগ করে তাঁদের কাছ থেকে সেই শিশুকন্যাকে নিয়ে সুভাষগ্রামের দম্পতিকে দিয়ে দেন পিঙ্কি। তখন থেকে ওই দম্পতির কাছেই বেড়ে উঠছিল মেয়েটি। পুলিশি জেরায় এমনই দাবি করেছেন পিঙ্কি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সুভাষগ্রাম এলাকার ওই দম্পতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁরাও পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই শিশুটিকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল। যদিও দত্তক সংক্রান্ত কোনও নথিপত্র তাঁরা দেখাতে পারেননি। টাকার বিনিময়ে বাচ্চাটিকে বিক্রি করা হয়েছিল
কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখছে পর্ণশ্রী থানার পুলিশ।
এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘দম্পতি দত্তক নেওয়ার কথা বললেও কোনও নথি দেখাতে পারেননি। টাকার বিনিময়ে শিশুটি কেনা হয়েছিল কিনা, দেখা হচ্ছে। পর্ণশ্রীর অভিযোগকারী দম্পতির অজানতে শিশুটিকে নেওয়া হয়েছিল, নাকি তাঁরা বিষয়টি জানতেন, সেই দিকটিও তদন্তে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’