সিসি ক্যামেরা ফুটেজে এ ভাবেই দেখা গিয়েছে অনিতাকে।
ধরা পড়েছে ‘বান্টি’। কিন্তু চুরি করা আট থেকে দশ লক্ষ টাকার সোনার গয়না গায়ে পরে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে গিয়েছে ‘বাবলি’। অথচ আদালতে চুরির অভিযোগ প্রমাণ করতে হলে গয়না বাজেয়াপ্ত করতেই হবে। ফলে এখন ‘বান্টি’কে সঙ্গে নিয়ে হন্যে হয়ে ‘বাবলি’কে খুঁজছে আন্দামানের পুলিশ।
সিনেমার ‘বান্টি-বাবলি’-র মতো বাস্তবের এই জুড়ির আসল নাম বিনোদ ও অনিতা ঠাকুর। আন্দামানের পুলিশ আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, বছর আঠাশের অনিতার বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে। বছর তিরিশের বিনোদের বাড়ি রাজস্থানে। ১৮ জুন, মঙ্গলবার পোর্ট ব্লেয়ার থেকে স্পাইসজেটের বিমানে দু’জনে কলকাতায় পৌঁছয়। কিন্তু বিমানবন্দরে পুলিশ ও সিআইএসএফ-এর তৎপরতা দেখে অনিতা শৌচালয়ে ঢুকে পোশাক বদলে ফেলে মুখ ঢেকে পালিয়ে যায়। তার পর থেকেই বেপাত্তা সে। বন্ধ তার মোবাইল ফোনও। এ দিকে ধরা পড়ার পরে জেরায় পুলিশকে বিনোদ জানিয়েছে যে, বছর দেড়েক আগে অনিতার সঙ্গে বিয়ে হয় তার। তবে ক্যানিংয়ের শ্বশুরবাড়িতে কখনও না আসায় বাড়িটি চেনে না সে। পুলিশের সন্দেহ, ক্যানিংয়ের কোথাও গা ঢাকা দিয়ে আছে ‘বাবলি’ অনিতা।
পোর্ট ব্লেয়ার লাগোয়া আবেরদিন থানার বড়বাবু সঞ্জয় কুমার জানিয়েছেন, ছ’মাস আগে ওই এলাকায় এসে থাকতে শুরু করে বিনোদ-অনিতা। আশুতোষ কর্মকার নামে এক সোনার দোকানের মালিকের লন্ড্রিতে কাজ নিয়েছিল বিনোদ। পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিদিন পাশের সোনার দোকানটি খোলা-বন্ধে আশুতোষকে সাহায্য করত বিনোদ। তা করতে গিয়েই কোনও ভাবে দোকানের নকল চাবি বানিয়ে ফেলেছিল সে।
সাধারণত প্রতিদিন দুপুর ১টায় দোকান বন্ধ করে বাড়ি যেতেন আশুতোষ। গত মঙ্গলবারও দুপুরে বাড়ি যাওয়ার সময়ে দোকান বন্ধ করতে তাঁকে সাহায্য করে বিনোদ। দুপুর ৩টে নাগাদ ফিরে এসে বিনোদকে দেখতে পাননি আশুতোষ। এর পরে সোনার দোকান খুলে তিনি দেখেন, শো-কেস ফাঁকা। সঞ্জয় কুমার বলেন, ‘‘সময় নষ্ট না করে চটজলদি থানায় চলে আসেন আশুতোষবাবু। তাঁরই ভাড়া নেওয়া বাড়িতে বিনোদ-অনিতা থাকতেন। সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে দেখা যায়, দু’জনের কেউই নেই।’’ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুপুর ৩টেয় স্পাইসজেটের উড়ানেই কলকাতা উড়ে গিয়েছে ওই দম্পতি। পোর্ট ব্লেয়ার বিমানবন্দরের সিসি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা যায়, হলুদ গলাবন্ধ সালোয়ার কামিজ পরা অনিতার গা-ভর্তি গয়না রয়েছে। পুলিশের অনুমান, আগে থেকেই বিমানের টিকিট কেটে রেখেছিল ‘বান্টি-বাবলি’ দম্পতি।
এর পরেই কলকাতা বিমানবন্দরের পুলিশ ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ-কে জানানো হয় বিনোদ-অনিতার কথা। ছবিও পাঠানো হয়। বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে বিমানটি কলকাতায় নামার পরেই বিমানবন্দরের পুলিশের কাছেও খবর পৌঁছয়। পুলিশ ও সিআইএসএফ গিয়ে বিনোদকে ধরে ফেললেও পালিয়ে যায় অনিতা। গত বুধবার পোর্ট ব্লেয়ার থেকে দু’জন কনস্টেবল শহরে এসেছেন। বিনোদকে ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে ৫ দিনের জন্য ট্রানজিট রিম্যান্ড পান তাঁরা। ফলে কয়েক দিনের মধ্যে গয়না-সহ অনিতাকে না পাওয়া গেলে পোর্ট ব্লেয়ারে বিনোদকে নিয়ে গিয়েও লাভ হবে না। সে ক্ষেত্রে বিনোদ জামিনও পেতে পারে বলে পুলিশের আশঙ্কা।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।