প্রতীকী ছবি।
জোড়াবাগানের ৭৯ বছরের বৃদ্ধা বাসন্তী লাহার মৃত্যুতে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হল। ওই ঘটনায় ধৃত বছর ষাটেকের প্রৌঢ়া শোভা মল্লিক লাহাকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে পুলিশের অনুমান, সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদেই বৌদিকে খুন করেছে ননদ শোভা। হোমিসাইড শাখা সূত্রের খবর, বুধবার তাকে লালবাজারে জিজ্ঞাসাবাদের পরে এ বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে।
যদিও গ্রেফতারির পর থেকে শোভাকে নিয়ে যথেষ্ট বেকায়দায় পড়ে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়ার পরে ৩০ ঘণ্টারও বেশি সে থানায় মুখ খোলেনি বলে জানা গিয়েছে। উপরন্তু থানার বিভিন্ন জায়গায় শৌচকর্ম করে পুলিশকে বিপাকে ফেলেছিল। এমনকি, পুলিশকে উদ্দেশ্য করে কুরুচিকর মন্তব্যও ওই প্রৌঢ়া করেছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। সব থেকে সমস্যায় পড়তে হয় মঙ্গলবার শোভাকে আদালতে তোলার সময়ে। শৌচাগারে গিয়ে বেশ খানিকটা দেরি করে শোভা। এর পরে আদালতে যাওয়ার পথে শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে সে অজ্ঞান হওয়ার অভিনয় করে, এমনই দাবি পুলিশের। দ্রুত নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ
হাসপাতালে তার শারীরিক পরীক্ষা করানো হলে রিপোর্ট স্বাভাবিক মেলে। এ সবে ধৃতকে আদালতে তুলতে দেরি হয় ঘণ্টা তিনেক। শেষে বিচারকের বিশেষ অনুমতি নিয়ে হাজির
করানো হয় শোভাকে।
জোড়াবাগানের বাবুরাম ঘোষ লেনের একটি বাড়ি থেকে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বাসন্তীদেবীকে। ওই দিন দুপুর ১টা নাগাদ এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। বৃদ্ধার মৃত্যুকালীন জবানবন্দির ভিত্তিতে খুনের মামলা করে পুলিশ। এর সঙ্গে রয়েছে মৃতার স্বামী গোপাললাল লাহা এবং দেওর গোবিন্দলাল লাহার বয়ানও। গোবিন্দলালবাবু বলেছেন, ‘‘বহু দিন পরে বাড়িতে ফিরে এসে শোভা আমার ঘরেই ঘুমোত। ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ আগুন আগুন চিৎকার শুনে উঠে দেখি, বৌদির ঘর জ্বলছে। ওই দিক থেকে শোভা দৌড়ে আমার ঘরে ঢুকে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দেয়। পুলিশ দরজা ভেঙে ওকে বার করে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সেখানেই ছিল।’’ গোপাললালবাবু বলেন, ‘‘আগুন শুনে গিয়ে দেখি, যে ঘরে বাসন্তী শোয় তার দরজায় বাইরে থেকে ছিটকিনি দেওয়া। দরজা খুলে কোনও মতে জল ঢেলে আগুন নেভাতেই ও বলে, ‘খুব জ্বলছে। শোভা আগুন দিয়েছে’!’’
পুলিশি জেরায় শোভা জানিয়েছে, কয়েক বছর বিভিন্ন জায়গায় কাজ করলেও লকডাউনে আর্থিক অনটনের মুখে পড়ে সে। তাই দাদাদের কাছে ফিরে এসেছিল। বাজারে শোভার দেনা থাকায় টাকারও প্রয়োজন ছিল। কিন্তু টাকা পেতেই বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন বাসন্তীদেবী। তাই বৌদিকে সরিয়ে দেওয়াই ঠিক হবে বলে স্থির করে শোভা। তদন্তের নিষ্পত্তি করতে পুলিশ অবশ্য আরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে।