জোড়াতালি: ফ্রেম চুরি যাওয়ায় প্লাস্টিক দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে একটি পুলিশ কিয়স্ক। নিজস্ব চিত্র
পুলিশের ঘরেই চুরি! আর তার কিনারা করতে গিয়ে বার বার নাজেহাল হচ্ছিল পুলিশ! অবশেষে শনিবার রাতে ধরা পড়ল সেই চোর। হেস্টিংস থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে শেখ আফরোজ় নামে এক যুবককে।
গত কয়েক মাস ধরে শহরের একাধিক পুলিশ কিয়স্ক থেকে একের পর এক জানলার অ্যালুমিনিয়ামের ফ্রেম চুরি হচ্ছিল। সেই খবর থানা থেকে পৌঁছে গিয়েছিল লালবাজারের বড় কর্তাদের কাছেও। কিন্তু কিছুই করা যাচ্ছিল না। পুলিশকর্মীদের দাবি, বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল আমপানে বিধ্বস্ত সিসি ক্যামেরাগুলি। যার বেশ কিছু এখনও সারানো যায়নি। ফলে বার বার চুরি হলেও ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এর মধ্যেই আবার বাহিনীর অনেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে অথবা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসায় কোয়রান্টিনে থাকছেন। ফলে দিন-রাত কিয়স্কে ডিউটি করার মতো লোক মিলছিল না বাহিনীতে। এই সুযোগও কাজে লাগিয়েছিল চোর।
পুলিশ সূত্রের খবর, বন্দর এলাকার কিছু থানা এবং ট্র্যাফিক গার্ডের পাশাপাশি এই ধরনের চুরি হচ্ছিল ময়দান ও হেস্টিংসেও। বছর বাইশের আফরোজ়ের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে কয়েকটি বস্তা। যার মধ্যে চুরি যাওয়া অ্যালুমিনিয়ামের ফ্রেমগুলি পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বিদ্যাসাগর সেতুর নীচে ধৃতের আস্তানা থেকে মিলেছে চুরি যাওয়া আরও সামগ্রী।
কী করে ধরা পড়ল চোর?
হেস্টিংস থানা সূত্রের খবর, পর পর চুরির ঘটনায় একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়। এর মধ্যেই হেস্টিংস থানা এলাকার টি১-২৪ নম্বর ট্র্যাফিক কিয়স্কেও সম্প্রতি একই রকম চুরি হয়। কিয়স্কটি প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। ওই কিয়স্কের কাছের সিসি ক্যামেরাও বিকল ছিল, জানিয়েছে পুলিশ। হেস্টিংস থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক প্রশান্ত মজুমদার সম্প্রতি একটি সূত্র মারফত খবর পান আফরোজ় নামের এক যুবককে কয়েক দিন ধরে ওই কিয়স্কের আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে। প্রশান্তবাবু জানান, এর পর থেকেই তার উপরে নজর রাখা শুরু হয়। তাঁর কথায়, “আফরোজ় আগে হেস্টিংস এলাকায় ঘোড়া দেখাশোনা করত। লকডাউনে সেই কাজ চলে যায়। কিন্তু তবু যে তার হাতে প্রচুর টাকা আসছে, সেটা চলাফেরাতেই স্পষ্ট হতে থাকে। যুবকের পরিবারের উপরেও নজরদারি চালানো হয়।
পুলিশের দাবি, শনিবার সন্ধ্যায় হেস্টিংস এলাকা দিয়েই একটি বস্তা নিয়ে যেতে দেখা যায় আফরোজকে। কর্তব্যরত পুলিশকর্মী মারফত খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল গিয়ে আফরোজকে আটক করে বস্তায় কী রয়েছে জানতে চায়। কোনও স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেনি সে। সেই বস্তা খুলতেই উদ্ধার হয় অ্যালুমিনিয়ামের ফ্রেম! জেরায় ধৃত জানায়, পুলিশ সন্দেহ করছে বুঝেই বস্তায় করে ধীরে ধীরে ফ্রেমগুলি সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করেছিল সে। ধৃতকে এ দিন আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।