ফাইল চিত্র।
বিমানে করে লন্ডন পৌঁছনোর কথা ছিল। কিন্তু অভিযোগ, স্রেফ পুজোর চাঁদার জুলুমবাজির কারণে শহরের রাস্তাতেই প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আটকে রইল প্রায় সাড়ে তিন টন আনাজ! লন্ডন থেকে সরাসরি আসা যে উড়ান শনিবার রাতে শহরে নামে, রবিবার ভোরে তারই লন্ডন ফিরে যাওয়ার কথা। যাত্রীদের সঙ্গে সঙ্গে পণ্য হিসেবে এই আনাজেরও ওই বিমানে লন্ডনে যাওয়ার কথা। কিন্তু শনিবার দুপুরে বিমানবন্দরে পৌঁছনোর সময়ে রাস্তায় গাড়ি আটকে বিশাল অঙ্কের টাকা চাঁদা চাওয়া হয় বলে অভিযোগ। যার জন্য দুপুর ২টো থেকে সন্ধ্যা ৭টা— টানা পাঁচ ঘণ্টা মধ্যমগ্রামের পথেই আটকে থাকে ওই আনাজ। শেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে পটল, বরবটি, কুমড়ো, লাউ, কাঁকরোল-সহ প্রায় সাড়ে তিন টনের ওই আনাজ রাতে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
সূত্রের খবর, বারাসতের দিক থেকে এ দিন বিমানবন্দর যাচ্ছিল আনাজের গাড়িটি। দুপুর ২টো নাগাদ মধ্যমগ্রাম থানার মতিরপোল ফাঁড়ি এলাকায় উত্তর জোজরায় সরকারপাড়া মোড়ে আটকানো হয় গাড়িটিকে। অভিযোগ, দুর্গাপুজোর চাঁদা হিসেবে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে সেখানে জানানো হয়। ওই এলাকায় পর পর দু’টি পুজো হওয়ায় মোট ১৬ হাজার টাকা চাঁদা চাওয়া হয় বলে অভিযোগ। আরও দাবি, স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে
যোগাযোগ করলে তারাও নিজেদের মধ্যে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার কথা বলে। পরে জেলার উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তার হস্তক্ষেপে এই সমস্যার সমাধান হয়। তবে ওই পুজো কমিটিগুলির বিরুদ্ধে রাতে মধ্যমগ্রাম থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই জোজরাতেই রয়েছে প্যাক হাউস বা আনাজের গুদাম। বারাসত বা অন্য জায়গা থেকে আনাজ এসে প্রথমে ঢোকে সেই প্যাক হাউসে। সেখানে সরকারি ‘প্লান্ট কোয়রান্টিন’ অফিসার তা পরীক্ষা করেন। সেখানে আনাজ জীবাণুমুক্ত করে কন্টেনারে তুলে তা সিল করে নিয়ে যাওয়া হয় বিমানবন্দরের পণ্য বিভাগে। সেখানে শুল্ক দফতরের সবুজ সঙ্কেত পেলে তবেই তা তুলে দেওয়া হয় উড়ান সংস্থার হাতে।
মধ্যমগ্রামের ওই প্যাক হাউসের মালিক অরূপ ঘোষ শনিবার বলেন, “শীতের শুরুতে এই আনাজের চাহিদা বাড়ে। বিদেশে প্রচুর আনাজ রফতানি করা হয়। লকডাউনের সময়ে বেশ কিছু আনাজ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেই সময়ে পণ্য পাঠানোর খরচও বাড়ছিল। কলকাতা থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার সরাসরি লন্ডন উড়ান চালু হওয়ায় পণ্য পরিবহণের খরচ কমেছে। আমরা সরাসরি লন্ডনে আনাজ পাঠাতে পারছি। চাহিদা বেশি থাকলে অন্য দিন দিল্লি ঘুরে বিদেশে আনাজ পাঠানো হচ্ছে।”
অরূপবাবু আরও জানিয়েছেন, স্থানীয় দু’টি পুজো কমিটিকে গত বছরে ৫০০ টাকা চাঁদা দেওয়া হয়েছিল। এ বারেও পুজোর সময়ে কিছু দিন প্যাক হাউস বন্ধ থাকায় পুজো কমিটিকে জানানো হয়েছিল যে, পরে চাঁদা দেওয়া হবে। কিন্তু অভিযোগ, এ দিন আনাজের গাড়ি আটকে ৮ হাজার টাকা করে চাঁদা চান পুজো কমিটির সদস্যেরা। সেই নিয়ে টানাপড়েনের জেরে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্যাক হাউসেই পৌঁছয়নি ওই আনাজ। প্রথমে সরকারপাড়ার মোড় থেকে গাড়ি ছাড়লেও ঘোষপাড়া মোড়ে ফের সেই গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। পরে জেলার পুলিশকর্তার হস্তক্ষেপে সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ সেই গাড়ি ছাড়ে।