Suicide

Body recovered: বৃদ্ধার দেহ উদ্ধার, চশমার খাপে সুইসাইড নোট

ফুলবাগানের ছিমছাম সম্পন্ন পাড়ায় চারতলা বাড়ির লাগোয়া গলিতে শনিবারের সকালে তখনও মুখ থুবড়ে পড়ে বৃদ্ধার দেহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৫৩
Share:

৮৩ বছরের বৃদ্ধার ঘরে চশমার খাপে সুইসাইড নোট খুঁজে পেয়েছিল পুলিশ। তাতে যা লেখা ছিল, তার মর্মার্থ, ‘শরীরে নানা কষ্ট। ছেলেমেয়েদের কাউকে বিব্রত করতে চাই না। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’
ফুলবাগানের ছিমছাম সম্পন্ন পাড়ায় চারতলা বাড়ির লাগোয়া গলিতে শনিবারের সকালে তখনও মুখ থুবড়ে পড়ে বৃদ্ধার দেহ। আভা দাস নামে ওই বৃদ্ধা ছাদ থেকে পড়ে মারা গিয়েছেন বলেই পুলিশের ধারণা। প্রাথমিক ভাবে ঘটনাটিকে আত্মহনন বলেই মনে করা হচ্ছে। এই মৃত্যু ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, এ শহরের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের একাকিত্ব এবং অতিমারি পরিস্থিতিতে তাঁদের বেহাল মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাটি।

Advertisement

ফুলবাগানের একটি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা আভাদেবীর স্বামী ২০১২ সালে মারা গিয়েছেন। তাঁর ছেলে অভিজিৎ এবং মেয়ে অনুশ্রী আমেরিকায় কর্মরত। তাঁরা এলেই আভার শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার কথা। বোন শান্তা মিত্র এবং ভগ্নিপতি তাঁর সঙ্গেই থাকতেন। ১১ জন ভাইবোনের মধ্যে আভা সব থেকে বড়। শান্তা সবার ছোট। এ দিন বিকেলে ফুলবাগানের বাড়িতে এক আত্মীয়কে ফোনে শান্তা বলছিলেন, ‘‘দিদি এটা কী করল! কেন করল!’’ তাঁর কথায়, ‘‘দিদি ঘরে-বাইরে স্কুলের জাঁদরেল দিদিমণির মতোই ছিল। প্রাণ দিয়ে সবার জন্য করবে, কিন্তু অদ্ভুত আত্মসম্মান বোধ, কারও সাহায্য নেবে না।’’
জীবনভর নানা অভিজ্ঞতা পার হয়ে প্রবীণ নাগরিকদের অনেকেই স্বাধীনচেতা হয়ে ওঠেন। অন্য কারও প্রতি নির্ভরতা তাঁরা মানতে পারেন না বলে জানাচ্ছেন মনোবিদ ও সমাজকর্মীরা। আভার বোন আরও বুঝতে পারছেন না, দিদি কী ভাবে এতটা নিষ্ঠুর পথে নিজেকে শেষ করতে পারলেন! পুলিশ জানতে পেরেছে, শান্তা ও তাঁর স্বামী একটি ঘরে শুয়ে ছিলেন। ঘরের বাইরে ঘুমিয়ে ছিলেন আভার রাতের আয়া। কেউ টের পাননি কখন বৃদ্ধা উঠে উপরে চলে গিয়েছেন। শান্তা বার বার বলছিলেন, ‘‘দিদি বুধবার দুপুরেও ইলিশ মাছ খেল! ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলত।’’

বার্ধক্য বিজ্ঞান বিশারদ ইন্দ্রাণী চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘অতিমারিতে প্রিয়জনের থেকে দূরে চলে যাওয়া বা পদে পদে অন্যের প্রতি নির্ভরতা অনেক প্রবীণের উপরেই মানসিক চাপ তৈরি করে।’’ আভা এমনিতে অসুখ নিয়ে খুব ভাবিত ছিলেন না। তাঁর দু’টি প্রতিষেধকও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সচরাচর অন্যের উপরে নির্ভর করা পছন্দ করতেন না। মনোসমাজকর্মী মোহিত রণদীপের কথায়, ‘‘প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা অনেক বেড়েছে। পুলিশ থেকে শুরু করে নানা মহলে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হলেও সমাজের বিভিন্ন স্তরেই বৃদ্ধদের পাশে দাঁড়াতে সদিচ্ছার দরকার।’’

Advertisement

বৃদ্ধার ভিতরে কী ঝড় বইছিল, তা কেউ টের পাননি। এ দিনও ওই পাড়ায় পাশের একটি বাড়ির পরিচারিকা মহিলা বলেন, ‘‘দিদা দেখা হলেই সবাইকে ডেকে ডেকে কথা বলতেন। ওঁর এমন ঘটবে ভাবতেও পারিনি!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement