অসহায়: মঙ্গলবার এ ভাবেই রাস্তায় পড়ে ছিলেন ওই বৃদ্ধ। নিজস্ব চিত্র
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বুধবার ভোরে মৃত্যু হল দীর্ঘ ক্ষণ উল্টোডাঙার ফুটপাতে পড়ে থাকা সেই বৃদ্ধের। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেহের ময়না-তদন্তের ব্যবস্থা করেছে মানিকতলা থানা। কিন্তু পায়ে ক্ষত থাকা এক বৃদ্ধকে করোনার রোগী সন্দেহে ভোর থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত কেন ফেলে রাখা হল, বুধবার রাত পর্যন্ত পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের তরফে সেই উত্তর মেলেনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশ ও পুরসভার সমন্বয়ের অভাবের অভিযোগ তুললেও দু’পক্ষই তা অস্বীকার করেছে। যদিও করোনা আবহে একের পর এক ঘটনায় সেই সমন্বয়ের অভাবই জোরালো হচ্ছে। হাতে স্যালাইনের চ্যানেল থাকা রোগীকে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে আসা করোনা রোগী ভেবে মারধর করা হলেও তাঁকে উদ্ধার করতে পুলিশ এবং পুরসভার গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, দু’পক্ষই অপেক্ষা করছিলেন করোনা অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য। একাধিক ক্ষেত্রে জ্বরের রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্স ফেলে রেখে পালিয়ে যাওয়ার পরে পুলিশ এবং পুরসভার মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে হাসপাতালে পাঠানো নিয়ে দায় ঠেলাঠেলিরও অভিযোগ উঠেছিল।
তেমনই আরও একটি ঘটনা সামনে আসে মঙ্গলবার রাতে। উল্টোডাঙা মেন রোড এবং জহরলাল দত্ত গার্ডেন লেনের সংযোগস্থলে এক বৃদ্ধ ভোর থেকে পড়ে কাতরাচ্ছেন বলে খবর রটে যায়। কিন্তু পুলিশ বা পুরসভার কোনও পক্ষই তাঁকে রাত সাড়ে দশটার আগে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাতে পারেনি। আরও জানা গিয়েছে, কলকাতা পুলিশের ‘কর্মা’ অ্যাম্বুল্যান্স ঘটনাস্থলে গেলেও পায়ের ক্ষতের পাশাপাশি বৃদ্ধের জ্বর রয়েছে শুনেই ফিরে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, দুপুরেই স্থানীয় পুর প্রতিনিধিকে খবর দেওয়া হলেও রাত সাড়ে দশটার আগে পর্যন্ত তাঁর কোনও হেলদোল নজরে পড়েনি। শেষে রাত সাড়ে দশটায় পুরসভার অ্যাম্বুল্যান্স বৃদ্ধকে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।
সমন্বয়ের অভাবেই কি এত ক্ষণ ওই বৃদ্ধ রাস্তায় পড়ে থাকলেন? কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা এ প্রসঙ্গে কিছু বলতে চাননি। তবে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্তা বলেন, ‘‘থানার কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে থানা জানিয়েছে, বিকেলেই পুরসভায় ফোন করে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। স্থানীয় পুর প্রতিনিধিকেও ঘটনাস্থল থেকেই ফোন করেছিলেন পুলিশকর্মীরা।’’
কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব নেই। ওদের অ্যাম্বুল্যান্স গিয়েও ফিরে গিয়েছিল শুনেছি। আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগে যখন খবর এসেছে, তখনই অ্যাম্বুল্যান্স গিয়েছে।’’ শেষ পর্যন্ত পুরসভার অ্যাম্বুল্যান্সই যখন বৃদ্ধকে উদ্ধার করল তখন স্থানীয় পুর প্রতিনিধি প্রথমেই পুর স্বাস্থ্য বিভাগকে কেন বিষয়টি জানালেন না? এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি কারও কাছেই।