প্রতীকী ছবি।
আমপানের ভয়াবহ স্মৃতি এখনও টাটকা কলকাতাবাসীর মনে। অতি শক্তিশালী সেই ঘূর্ণিঝড়ের
দাপটে এ শহরে প্রায় ১৫ হাজার গাছ উপড়ে পড়েছিল। গত বছর সেই তাণ্ডবের পরে শহরে লাগানো হয়েছিল প্রায় দশ হাজার গাছ। তার মধ্যে এখন বেঁচে আছে মাত্র দু’হাজার। তাই এ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে অরণ্য সপ্তাহ উপলক্ষে এক লক্ষ গাছ লাগাতে চায় পুরসভার উদ্যান বিভাগ। কিন্তু এত গাছ কোথায় লাগানো হবে?
গাছ লাগানোর জায়গার যে অভাব রয়েছে, তা স্বীকার করে পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য এবং উদ্যান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘শহরের ফুটপাতে গাছ লাগানোর মতো জায়গা নেই। এ ব্যাপারে শহরের বিভিন্ন উদ্যানের উপরেই আমাদের ভরসা রাখতে হচ্ছে।’’
পুরসভার এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উপলক্ষে সম্প্রতি উদ্যান বিভাগের একটি বৈঠকে ঠিক হয়েছে, শহরের যে সমস্ত ফুটপাত অন্তত ১২ ফুট চওড়া, সেখানে গাছ লাগিয়ে তার তিন ফুট দূরে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হবে, যাতে গাছ কেউ স্পর্শ করতে না পারে। কিন্তু উদ্যান বিভাগের কর্মীরা সমীক্ষা চালিয়ে শহর জুড়ে এমন চওড়া ফুটপাত মেরে-কেটে ৫০টি জায়গায় পেয়েছেন। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফুটপাত বেদখল হয়ে থাকায় গাছ লাগানোর মতো উপযুক্ত জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে শহরের উদ্যানগুলির উপরেই ভরসা রাখতে হচ্ছে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘ফুটপাতে গাছ লাগাতে গিয়েও আবার একাধিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। গত বছর মৌলালির ফুটপাতে গাছ লাগাতে যাওয়ায় লাগোয়া এক বাসিন্দা আপত্তি করেছিলেন। বিষয়টি থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছিল। আর একটি জায়গায় আবার গরম জল ফেলে ফুটপাতের গাছ নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল। শহরবাসীর এই যদি মানসিকতা হয়, তা হলে তো গাছ বাঁচানোই মুশকিল।’’
এ বিষয়ে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বললেন, ‘‘কলকাতায় এমনিতেই ফুটপাতের বেশির ভাগ অংশ বেদখল হয়ে গিয়েছে। যে ক’টি গাছ লাগানো হচ্ছে বা হবে, তা বাঁচাতে নাগরিকদের পরিবেশবন্ধু হতেই হবে। না-হলে শহরে সবুজ অচিরেই শেষ হয়ে যাবে।’’
পুরসভা এ বার মূলত ফলের গাছ লাগাতে চায়। আম, জাম, পেয়ারা, জামরুল, সবেদা, আমলকির মতো গাছ বিভিন্ন উদ্যানে লাগানো হবে বলে দেবাশিসবাবু জানিয়েছেন।
পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের সমস্ত ওয়ার্ড মিলিয়ে প্রায় দু’লক্ষ গাছ আছে। ছাতিম, মেহগনি, জারুল, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, কদম, বকুল, দেবদারু, পলাশ, শিরীষ ইত্যাদি গাছ রয়েছে। দক্ষিণ কলকাতায় গাছের সংখ্যা বেশি। তাই এ বার উত্তর কলকাতায় বেশি করে গাছ লাগাতে চায় পুরসভা।