MR Bangur Hospital

MR Bangur hospital: করোনা কালে রক্তসঙ্কট, লাইন দিয়ে রক্ত দিলেন এমআর বাঙুরের চিকিৎসক, নার্সরা!

করোনাকালে শহরে রক্তদান শিবিরের সংখ্যা কমেছে। কিন্তু হাসপাতালে রক্তের চাহিদা বেড়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে এই উদ্যোগ সরকারি হাসপাতালের।

Advertisement

সারমিন বেগম

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২২ ১৪:৪৪
Share:

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

করোনাকালে সংক্রমণের আশঙ্কায় শহর ও শহরতলিতে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবির আয়োজনের সংখ্যা। তার প্রভাব সরাসরি এসে পড়েছে হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে। সেখানে রোজ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে রক্তের চাহিদা। পরিস্থিতি সমাধানে এ বার এগিয়ে এলেন সরকারি হাসপাতালের কর্মীরা। দক্ষিণ কলকাতার এমআর বাঙুর হাসপাতালে রক্তের আকাল মেটাতে লাইন দিয়ে রক্ত দিলেন স্বাস্থ্যকর্মী থেকে চিকিৎসক, নার্স থেকে নিরাপত্তারক্ষীরা।

হাসপাতালে রক্তের চাহিদা যখন বাড়তে থাকে, তখন সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে রক্তদান শিবির আয়োজন করে চাহিদা সামলানো হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে বদলে গিয়েছে বিশ্বের সামগ্রিক রক্ত-চিত্র। সংক্রমণের আশঙ্কায় এক ধাক্কায় কমে গিয়েছে রক্তদান শিবিরের সংখ্যা। স্বভাবতই চাহিদা আর যোগানের অসামঞ্জস্যের ফলে প্রাণ ফেরানোর কারখানায় ক্রমেই বাড়ছিল রক্তের হাহাকার।

Advertisement

শুক্রবার টালিগঞ্জের এমআর বাঙুর হাসপাতালের রক্ত নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়। সমস্যার কথা বুঝতে পেরে হাসপাতালের নার্সিং সুপার লক্ষ্মী নন্দী, নিজেরা রক্ত দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার অনুমতি চান হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার শিশির নস্করের কাছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে অনুমতি দিতে দেরি করেনননি তিনি। সিদ্ধান্ত হয়, শনিবার সকালে কর্মরত নার্সেরা রক্ত দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেবেন। ঠিক হয়, শনিবার ৫০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে নামা হবে।

শনিবার সকালে শুরু হয় নার্সদের রক্ত দেওয়ার প্রক্রিয়া। তা দেখে একে একে সেখানে হাজির হন হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী মায় নিরাপত্তারক্ষীরাও। ফলে লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি।

Advertisement

রক্ত দিচ্ছেন এম আর বাঙুরের নার্সিং সুপার লক্ষ্মী নন্দী। — নিজস্ব চিত্র

রোগীদের জন্য রক্ত দিয়ে উঠে, এমআর বাঙুরের নার্সিং সুপার লক্ষ্মী নন্দী বলছেন, ‘‘করোনার কারণে রক্তদান শিবির কমে যাওয়ার সরাসরি প্রভাব এসে পড়েছে হাসপাতালগুলোর উপর। গত কাল রক্তের সঙ্কট সামলাতে আমরা নিজেরাই রক্ত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। এতে সঙ্কট খানিকটা হলেও সামাল দেওয়া যাবে। যে ভাবে সাড়া পাচ্ছি, তাতে আমি অভিভূত।’’ হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার শিশির নস্কর বলেন, ‘‘দুর্দান্ত উদ্যোগ। কর্মীরা নিজেরা যে ভাবে এগিয়ে এসে রক্তের অভাব পূরণ করলেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। সব জায়গায় রক্তের আকাল চলছে, কারণ শিবিরের সংখ্যা কমে গিয়েছে। কিন্তু এ ভাবে সমস্ত কর্মী এগিয়ে এসে রক্ত দেওয়ার ঘটনা আর কোথাও ঘটেছে বলে মনে করতে পারছি না।’’ ব্লাডব্যাঙ্কের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক কৃষ্ণকান্ত বারুই বলছেন, ‘‘শুক্রবার আমাদের ব্লাডব্যাঙ্কে রক্তের সঞ্চয় ১০০ ইউনিটেরও কম হয়ে যায়। রক্তের যোগান দিতে না পেরে খুব খারাপ লাগছিল। আমাদের সহকর্মীরা যে ভাবে এগিয়ে এলেন, তাতে আমি গর্বিত।’’

সূত্রের খবর, এম আর বাঙুর হাসপাতালে দৈনিক গড়ে ২৫ থেকে ৩০ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়। কোনও কোনও দিন তারও বেশি। এই পরিস্থিতিতে আগামী দিনে আরও রক্তের প্রয়োজন হলে কী করবেন? মেডিক্যাল সুপারের জবাব, ‘‘এখনও হাসপাতালের অনেক কর্মী আছেন, যাঁরা রক্ত দিতে ইচ্ছুক। তাঁদের ডেকে এনে রক্ত নেওয়া হবে।’’

এর আগে কোনও রোগীর রক্তের প্রয়োজন হলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেক চিকিৎসক, নার্সে রক্ত দিয়েছেন। কিন্তু লাইন দিয়ে এ ভাবে কর্মীদের রক্তদানের নজির বেশি নেই। এমআর বাঙুর হাসপাতালের কর্মীরা সেই দৃষ্টান্তই তৈরি করলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement