ফাইল চিত্র।
চিনা মাঞ্জার বিপদ যেন পিছু ছাড়ছে না শহরের। চিনা মাঞ্জা গলায় পেঁচিয়ে যাওয়ায় এ পর্যন্ত জখম হয়েছেন বহু মোটরবাইক চালক। কখনও আবার চিনা মাঞ্জায় জড়িয়ে গিয়ে বাইক সমেতই রাস্তায় উল্টে পড়েছেন কেউ কেউ। এমনকি, উড়ালপুল থেকে নীচে পড়ে বাইক আরোহীর মৃত্যুর ঘটনাতেও অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি চিনা মাঞ্জায় জড়িয়ে গিয়েছিলেন।
গত কয়েক বছরে শহরের বিভিন্ন উড়ালপুলে চিনা মাঞ্জার জেরে এমন একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ বছর ফের শুরু হয়েছে ঘুড়ি ওড়ানোর মরসুম। তা হলে কি চিনা মাঞ্জা থেকে আরও বিপদ অপেক্ষা করছে শহরবাসীর জন্য? এই মাঞ্জার বিক্রি বা ব্যবহার তো নিষিদ্ধ। তা হলে পুলিশই বা কী করছে?
পুলিশ সূত্রের খবর, শুধুমাত্র মা উড়ালপুলেই অন্তত ১০টি বাইক দুর্ঘটনা ঘটেছে চিনা মাঞ্জার কারণে। যে কারণে এক সময়ে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ ভেবেছিল, মা উড়ালপুল-সহ শহরের বেশ কয়েকটি উড়ালপুলে দুর্ঘটনা কমাতে রাস্তার দু’পাশে ফেন্সিং দেওয়া হবে। এ বছরের মার্চের গোড়ায় মা উড়ালপুলে ফেন্সিং লাগানোর ব্যাপারে তারা প্রস্তাব পাঠায় ওই উড়ালপুলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ‘কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’র (কেএমডিএ) কাছে। ঠিক হয়, উড়ালপুলের তপসিয়ার দিকের অংশে প্রথমে ফেন্সিং ও প্রয়োজনে জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হবে। পরে উড়ালপুলের দুর্ঘটনাপ্রবণ বাকি অংশে এই কাজ করা হবে।
‘পাইলট প্রকল্প’ হিসেবে মা উড়ালপুলের কিছু অংশে ফেন্সিং লাগানোর কাজ শুরু হলেও এখনও অরক্ষিত রয়েছে বাকি অংশ। যদিও কেএমডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, মা উড়ালপুলকে দু’টি ভাগে ভাগ করে ফেন্সিং
লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। ওই সংস্থার সেতু ও উড়ালপুলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্তা বললেন, ‘‘মা উড়ালপুলে ফেন্সিং লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। উড়ালপুলটিকে দু’টি অংশে ভাগ করে টেন্ডার ডাকার সিদ্ধান্ত হয়। একটি অংশের টেন্ডারের কাজ শেষ হয়েছে। আর একটি অংশের টেন্ডারের প্রক্রিয়া চলছে। সেই প্রক্রিয়া শেষ হলেই বাকি কাজ শুরু হবে।’’
শুধুমাত্র মা উড়ালপুলেই চিনা মাঞ্জার কারণে গোটা দশেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আহত হয়েছেন বাইকের চালক বা আরোহী। অন্যান্য উড়ালপুলেও এমন ঘটনা ঘটেছে। গত রবিবারই দুই এলাকায় দু’টি দুর্ঘটনা ঘটেছে চিনা মাঞ্জার জেরে। মঙ্গলবারও ঘটেছে আরও একটি দুর্ঘটনা। যে হেতু আর কয়েক সপ্তাহ পরেই বিশ্বকর্মা পুজো, তাই ঘুড়ি ওড়ানো বাড়লে এমন ঘটনা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা অনেকেরই। চিনা মাঞ্জা রোখার ক্ষেত্রে পুলিশি তৎপরতার অভাবের অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা। অনেকেরই অভিযোগ, আগে পুলিশ মাইকিং করে, লিফলেট বিলি করে চিনা মাঞ্জার বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা করত। কিন্তু এখন আর সে সব চোখে পড়ে না। বাইকচালক অজয় সরকারের কথায়, ‘‘উড়ালপুল ধরে বাইক চালানোর সময়ে চিনা মাঞ্জার ভয় সব সময়ে
কাজ করে। নাইলনের ওই মাঞ্জা এতটাই সরু হয় যে, বাইক চালানোর সময়ে ভাল করে দেখা যায় না। আগে পুলিশের তরফে নজরদারি চালানো হত। কিন্তু এখন সে সব নজরে পড়ে না।’’
এ বিষয়ে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা বললেন, ‘‘আমরা জরুরি ভিত্তিতেই মা উড়ালপুলের দু’পাশে ফেন্সিং লাগানোর কথা বলেছিলাম। ফেন্সিং লাগানোর ফলে চিনা মাঞ্জার দুর্ঘটনা যদি কমে, তা হলে শহরের অন্য কয়েকটি উড়ালপুলেও একই ভাবে ফেন্সিং লাগানোর প্রস্তাব দেওয়া হবে, যেখানে এই ধরনের দুর্ঘটনা হামেশাই ঘটে। পাশাপাশি, নজরদারিও চালানো হচ্ছে।’’