ফাইল ছবি
বাড়ি থেকে হেঁটে নৌকা। নদী পেরিয়ে ট্রেন। ফের হেঁটে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ। শেষ রাতে বেরোনো সুন্দরবনের জগন্নাথ মণ্ডলের ভয় ছিল, ডাক্তার কি দেখানো যাবে? কিন্তু ডাক্তার আসেননি দেখে রক্ষীকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘ডাক্তারবাবু কখন আসবেন?’’ রক্ষীর উত্তর, ‘‘সবে তো সাড়ে ন’টা, ঘণ্টাখানেক দাঁড়ান!’’ ঘড়ির কাঁটা সাড়ে দশটা পেরোলে বহির্বিভাগে কয়েক জন ডাক্তারবাবু এলেন বটে। তবে পুরোদমে রোগী দেখা শুরু হল তারও পরে।
অভিযোগ, এই হাসপাতালে রোগীর ভোগান্তি কার্যত সর্বস্তরে। কখনও ট্রলির খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরতে হচ্ছে, কখনও পরীক্ষার তারিখ পেতে লাগছে কয়েক সপ্তাহ। অভিযোগ রয়েছে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান, দালাল-রাজ, পানীয় জল, শৌচালয় নিয়েও। অভিযোগ, ন্যায্য মূল্যের দোকান থাকলেও বেশির ভাগ ওষুধ নেই। বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়। সপ্তাহখানেক আগে বাবাকে ভর্তি করেছেন আসানসোলের রবীন্দ্রনাথ রুইদাস। তাঁর কথায়, ‘‘নামেই সব ফ্রি! কিছু ওষুধ হয়তো দিয়ে দেয়। বাকি বাইরে থেকে কিনতে হয়। ছ’দিন ধরে ৪০০-৫০০ টাকার ওষুধ বাইরের দোকান থেকে কিনছি।’’
ট্রলি নিয়ে আগেই বহু অভিযোগ সামনে এসেছে এই হাসপাতালে। জরুরি বিভাগের সামনে সাড়ে ১১টা নাগাদ ট্রলির খোঁজে গিয়ে ‘নেই’ শুনে ফিরতে হল অনেককে। ‘কখন পাব?’’ জিজ্ঞাসা করতেই শুনতে হল, ‘‘সামনে দাঁড়িয়ে থাকুন, এলে দেব।’’ কর্মীরাই জানালেন, সকালের দিকে ট্রলি থাকে। বেলায় রোগী বাড়লে ট্রলিতে টান পড়ে। তবে ক’টা ট্রলি, তা জানা নেই কর্মীদের! এক কর্মীর কথায়, ‘‘অর্ধেক তো খারাপই থাকে। ওই হিসেব কে রাখে!’’
দুপুরেও বহির্বিভাগে যথেষ্ট ভিড়। সেখান থেকে শৌচালয়, জলের খোঁজে যেতে হচ্ছে আরও দূরে। অভিযোগ, তারিখ পেতেও হয়রান হচ্ছেন রোগীর পরিজন। বাদুড়িয়ার সহিদুল ইসলাম আত্মীয়ের ইউএসজি পরীক্ষার তারিখ পেলেন এক মাস পরে। সহিদুল বলে ওঠেন, ‘‘অবস্থা ভাল নয়। এক মাস কি বাঁচবে? দালাল ধরেই ব্যবস্থা করতে হবে মনে হচ্ছে।’’ কান খোলা রাখলেই শোনা যায় ‘আয়ারাজ’-এর কথাও।
রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়দের মতে, গত কয়েক বছরে এনআরএস তার চেহারায় অনেক বদল এনেছে। হাসপাতালে রং হয়েছে, বড় পুকুরের চারপাশে সৌন্দর্যায়ন হয়েছে। কিন্তু রোগী-পরিষেবা? তা রয়ে গিয়েছে পুরনো নিয়মেই।
(চলবে)