ফাইল চিত্র।
ট্র্যাফিক সিগন্যাল বা ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে নতুন নয়। পুলিশের গাড়ি হলে সাত খুন মাফ, এটাই যেন বরাবরের দস্তুর। সেই সংস্কৃতিতেই এ বার পরিবর্তন আনতে চায় লালবাজার। পুলিশের শীর্ষ মহল থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ট্র্যাফিক আইন অমান্য করলে রেয়াত করা হবে না পুলিশকর্মীদেরও। বুধবার লালবাজারের তরফে এই বার্তা পাঠানো হয়েছে কলকাতা পুলিশের সমস্ত ট্র্যাফিক গার্ডে। লালবাজার জানিয়েছে, ডিসি (ট্র্যাফিক)-র তরফে সেই নির্দেশ জারি করে বলা হয়েছে, ট্র্যাফিক আইন ভাঙলে পুলিশের গাড়ি বা পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।
এত দিন সাধারণ মানুষের অভিযোগ ছিল, শহরের রাস্তায় অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশের গাড়ি কিংবা পুলিশকর্মীরা কোনও রকম ট্র্যাফিক আইনের ধার ধারেন না। ট্র্যাফিক আইন ভাঙার অভিযোগে তাঁরা নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকারী হলেও, তাঁদের বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নেয় না। মোটরবাইক বা গাড়িতে ‘পুলিশ’ লেখা থাকলেই যেন ট্র্যাফিক আইন অমান্য করার একটা অলিখিত লাইসেন্স পাওয়া যায়। বিশেষ করে, রাতের শহরে পুলিশের গাড়ি কোনও রকম নিয়ম মানে না বলেই অভিযোগ শহরবাসীর।
পুলিশকর্মীদের অনুমান, বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতেই এমন পদক্ষেপ করছে লালবাজার। তাঁদের মতে, পুলিশ নিজে আইনের ঊর্ধ্বে, সমাজের একাংশের এই বদ্ধমূল ধারণাই বদলাতে চাইছেন লালবাজারের কর্তারা। তাই ট্র্যাফিক আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে এ বার থেকে সতর্ক হতে হবে পুলিশকেও। কারণ, আইন অমান্য করলেই শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে তাদের। ডিসি-র নির্দেশে জানানো হয়েছে, এ বার থেকে পুলিশকর্মীদেরও বিধিমাফিক জরিমানার মুখে পড়তে হবে।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই বেনিয়াপুকুর থানার এক পুলিশ অফিসার সব রকম নির্দেশ উপেক্ষা করে রাত ১২টার পরে এ জে সি বসু রোড উড়ালপুলে মোটরবাইক নিয়ে উঠে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। অথচ পুলিশেরই নিয়ম বলছে, শহরের সমস্ত উড়ালপুলে রাত ১০টার পরে মোটরবাইক চলাচল নিষিদ্ধ।
ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, লালবাজারের ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, কোনও পুলিশকর্মী বা পুলিশের গাড়ি ট্র্যাফিক আইন অমান্য করলে কিংবা হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালালে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই নির্দেশের ভিত্তিতে বিভিন্ন ট্র্যাফিক গার্ড ব্যবস্থা নেওয়া শুরুও করেছে বলে সূত্রের খবর। ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘শহরের রাস্তায় পুলিশের গাড়ি মাঝেমধ্যেই ট্র্যাফিক আইন ভাঙে। এখন এই প্রবণতায় রাশ টানার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
পুলিশকর্মীদের একাংশ আবার জানিয়েছেন, ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীরা কেউ কেউ কর্তব্যে অবিচলই থাকেন। তাই ‘পুলিশ’ লেখা গাড়ি আইন অমান্য করলেও রেয়াত করেন না তাঁরা। যেমন, চলতি সপ্তাহেই রিজেন্ট পার্ক ট্র্যাফিক গার্ডের এক অফিসার ‘পুলিশ’ লেখা একটি মোটরবাইক আটক করেছিলেন, চালক হেলমেট না পরায়। পরে জানা যায়, ওই মোটরবাইক আরোহী ভুয়ো পুলিশ। এর পরে তাকে গ্রেফতার করে রিজেন্ট পার্ক থানা। এর আগেও একাধিক জায়গায় পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে খোদ পুলিশই।