কর্ম-ফুল: পুজোর ফুলের বিভিন্ন অংশ আলাদা করার কাজ করছেন মহিলারা। বৃহস্পতিবার, উত্তর দমদমে। —নিজস্ব চিত্র।
পূর্ব পরিকল্পনা মতো বাড়ি বাড়ি পুজোর ফুল সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছিল আগেই। এ বার সেই বাসি ফুল দিয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে ভেষজ আবির, জৈর সার উৎপাদন করতে শুরু করল উত্তর দমদম পুরসভা। ওই ফুল থেকে ভেষজ তেল তৈরির কাজও চলছে বলে জানিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
রাজ্য সরকারের মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে পুজোর ফুল থেকে ভেষজ আবির, জৈব সার তৈরির পরিকল্পনা করেছিল উত্তর দমদম পুরসভা। যদিও আখেরে সেই প্রকল্প কতটা বাস্তবায়িত করা যাবে, তা নিয়ে ছিল সংশয়। অবশেষে সংশয় কাটিয়ে সেই পরিকল্পনা কার্যকর করা শুরু হয়েছে। এই কাজে লাগানো হয়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের। পরীক্ষামূলক ভাবে আপাতত উত্তর দমদমের দু’টি ওয়ার্ড থেকে সংগ্রহ করা পুজোর ফুল দিয়েই ওই ভেষজ আবির এবং জৈব সার তৈরি হচ্ছে। পুরসভার চেয়ারম্যান বিধান বিশ্বাস জানান, বর্তমান পুর বোর্ড দায়িত্ব নিয়ে আবর্জনামুক্ত শহর গঠনের পরিকল্পনা করেছে। তার অংশ হিসাবে এই প্রকল্প। পরীক্ষামূলক ভাবে উৎপাদন সফল হয়েছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, ওই ফুল থেকে তৈরি ভেষজ আবির এবং জৈব সার স্টেট আর্বান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (সুডা) কাছে পাঠানো হবে। তবে নির্বাচনী বিধি জারি হওয়ায় এই সব সামগ্রীর বিপণন ব্যবস্থা কী হবে, তা নিয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ পুরকর্তারা। যদিও এই প্রকল্প পুরোপুরি কার্যকর হলে তা নতুন কর্মসংস্থানের পথ খুলে দেবে বলে আশাবাদী পুর কর্তৃপক্ষ।
আগে ওই পুর এলাকায় রাস্তার ধারে, খাল, জলাশয়ে পুজোর ফুল ফেলে দেওয়ার ছবি চোখে পড়ত। সেই ছবি বদলাতে ইতিমধ্যেই বাড়ি বাড়ি ফুল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। পুরসভা সূত্রের দাবি, এ ভাবেই দৈনিক এক থেকে দেড় টন পুজোর ফুল ও সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়। এ বার উত্তর দমদমের মাঝেরহাটি এলাকায় ওই সব ফুল থেকে ভেষজ সামগ্রী উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ বিষয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই প্রকল্পে পুরসভাকে সাহায্য করছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
ওই কাজে যুক্ত, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যা সীমা রায় এবং দেবস্মিতা ধর জানালেন, তাঁরা ১২ দিন ধরে এই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। বাড়ি থেকে সংগৃহীত ফুলের মধ্যে যেগুলো পচে যাচ্ছে, সেগুলো আলাদা করা হচ্ছে। পরে সেগুলিকে কাজে লাগানো হচ্ছে। বাকি ফুলের সবুজ অংশ আলাদা করে রাখা হচ্ছে। ফুলের শুধু পাপড়ি যন্ত্রের সাহায্যে গুঁড়ো করা হচ্ছে। সেই গুঁড়ো থেকেই প্রক্রিয়াকরণের কয়েকটি ধাপে পেরিয়ে তৈরি হচ্ছে ভেষজ আবির এবং জৈব সার।
পুরসভা আগেই জানিয়েছিল, ওই ফুল থেকে ভেষজ তেল এবং ধূপকাঠিও তৈরি করা হবে। তবে বাসিন্দাদের মতে, সুনির্দিষ্ট বিপণন ব্যবস্থা ছাড়া উৎপাদিত বিভিন্ন সামগ্রী বাজারে বিক্রি করলে এই প্রকল্পের ধারাবাহিকতা থাকবে না।