Coronavirus

coronavirus in West Bengal: মাস্কে উদাসীন কর্মী থেকে কর্তা, ‘হেনস্থা’ প্রতিবাদীকে

ভুক্তভোগীদের বড় অংশের দাবি, বিধি না মেনে পার পেয়ে যাওয়াটা এমন মজ্জাগত হয়ে গিয়েছে যে, কিছুরই পরোয়া নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:০৫
Share:

বিধিভঙ্গকারী যখন কর্তা মদন মিত্র নিজেই। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

পরতে পারি। কিন্তু কেন পরব?

Advertisement

শহরে গণপরিবহণ কর্মীদের বড় অংশের মধ্যে মাস্ক পরা নিয়ে এমনই বেপরোয়া মনোভাব দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ। নানা মহল থেকে নতুন করে করোনা-সতর্কতার প্রচার চললেও তাঁদের হুঁশ নেই! অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসন তাঁদের কিছু বলে না। ফলে জরিমানারও ভয় থাকে না। যাত্রীরা কেউ তাঁদের বিধির কথা মনে করাতে গেলে উল্টে হেনস্থা হন। সংশ্লিষ্ট যাত্রীকে এমনও হুমকি শুনতে হয়েছে, ‘‘এই গাড়িতে যেন আর না দেখি!’’ থানা-পুলিশ করলেও সেই ‘মিটিয়ে’ নেওয়ারই পরামর্শ আসে। ভুক্তভোগীদের বড় অংশের দাবি, বিধি না মেনে পার পেয়ে যাওয়াটা এমন মজ্জাগত হয়ে গিয়েছে যে, কিছুরই পরোয়া নেই।

যাঁদের উপরে করোনা-বিধি পালন করানোর দয়িত্ব, তাঁদের বেশির ভাগই যেন বেপরোয়া। যার আরও এক নমুনা বুধবার দেখা গেল রাজ্য পরিবহণ নিগমের চেয়ারপার্সন মদন মিত্রের একটি কর্মসূচিতে। যেখানে জনসংযোগে ব্যস্ত থাকা কন্ডাক্টররূপী নিগমের চেয়ারপার্সনই ছিলেন মাস্ক ছাড়া!

Advertisement

বুধবার বিকেলে কসবা থেকে গড়িয়াহাট যাওয়ার পথে বেসরকারি বাসের এক কন্ডাক্টরের বেপরোয়া হাবভাবের সাক্ষী থাকলেন এক ব্যক্তি। মাস্ক না-পরা ওই কন্ডাক্টরকে তা পরে নিতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি। প্রথমে এ নিয়ে উত্তর না দিলেও টিকিট কাটতে এসে ওই কন্ডাক্টর বলে দেন, ‘‘মাস্ক নেই, পরব না।’’ এর পরেই তাঁর দাবি, ‘‘গাড়িতে ওঠার সময়ে দেখে ওঠেননি যে, কন্ডাক্টরের মাস্ক নেই?’’ যাত্রীর বক্তব্য, ‘‘গণপরিবহণে চালক বা কন্ডাক্টরের মাস্ক না পরা নতুন নয়। অনেকেরই হয় থুতনিতে, নয়তো কানে মাস্ক ঝুলতে থাকে। তবে মাস্কের কথা মনে করালে পরে নেন। কিন্তু বেপরোয়া ওই যুবক দুর্ব্যবহার শুরু করেন। আমিও বলে দিই, মাস্ক পরাই এখন নিয়ম। আগে মাস্ক পরতে হবে, তার পরে টিকিট কাটব। বাসের কয়েক জন যাত্রীও কন্ডাক্টরের আচরণের প্রতিবাদ করেন।’’

কিন্তু নাছোড়বান্দা ওই কন্ডাক্টরের দুর্ব্যবহার বাড়তে থাকে। এই বলে কন্ডাক্টর চেঁচাতে শুরু করেন যে, ‘বাসে উঠেছেন টিকিট কাটবেন না বলে!’ তাঁকে বোঝানোই যায়নি যে, আসলে তাঁকে বলা হচ্ছে, নিয়ম মানতে। এই তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই বাস পৌঁছে যায় গড়িয়াহাট চত্বরে। সেখানে কন্ডাক্টরের সঙ্গে যুক্ত হন বেশ কয়েক জন অটোচালক। তাঁরাও বলতে শুরু করেন, ‘‘কিসের মাস্ক? কোনও মাস্ক পরা হবে না। ওই যাত্রীকে ঘাড় ধরে নামিয়ে দে..!’’ কোণঠাসা হয়ে গিয়েছেন বুঝে চুপ করতে বাধ্য হন প্রতিবাদী যাত্রী।

‘মানব না’: সেই বেপরোয়া বাস কন্ডাক্টর।

মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বললেন, ‘‘বিধিভঙ্গ করে অনেকেই নায়কোচিত মনোভাব প্রকাশের পথ খুঁজে পান। শুধু তো আইনকে নয়, তাঁরা করোনাকেও বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেবেন মনে করেন। তা ছাড়া, যাঁদের উপরে বিধি পালন করানোর দায়িত্ব থাকে, তাঁদেরই বেশি নিয়ম ভাঙতে দেখা যায়। কোনও যাত্রী মাস্ক না পরলে, কন্ডাক্টরেরই তো তাঁকে বাসে না তোলার কথা। নেতা-মন্ত্রীদের ক্ষেত্রেও দেখা যায় একই ব্যাপার।’’

নিয়মভঙ্গের একই চিত্র দেখা গেল রাজ্য পরিবহণ নিগমের চেয়ারপার্সন মদন মিত্রের একটি কর্মসূচিতে। এ দিন ওই কর্মসূচিতে সরকারি বাসে উঠে যাত্রীদের সঙ্গে জনসংযোগ করছিলেন তিনি। জানতে চান, যাত্রীদের কোন কোন বিষয়ে সমস্যা হচ্ছে? সেখানে বাস কন্ডাক্টরের ভূমিকায় দরজায় দাঁড়ানো মদনকে দেখা গেল মাস্ক ছাড়া। অনেকেরই প্রশ্ন, পরিবহণের কর্তা-ব্যক্তিরাই যদি এমন আচরণ করেন, তা হলে সেই দফতরের কর্মীরা কি কেউ নিয়ম মানবেন? এই প্রসঙ্গে মদনের মতামত জানতে বার বার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজেরও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement