১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে এলাকায় প্রচারে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।
মন্ত্রীর ধামসার তালে নাচলেন মহিলা প্রার্থী। হুড-খোলা গাড়িতে চলল শোভাযাত্রা। দূরত্ব-বিধি শিকেয় তুলে, মাস্ক উড়িয়ে এ ভাবেই ধরা দিল পুরভোটের শেষ মুহূর্তের প্রচারবেলার একের পর এক ছবি। বক্স থেকে বেরোনো গানের তালে নেচে প্রচার সারলেন যাঁরা, তাঁরা যেন আরও বেশি অসতর্ক। এক প্রার্থী ডেঙ্গি সচেতনতায় মশারি গায়ে জড়িয়ে প্রচার করলেন, এ দিকে তাঁর মুখ রইল আবরণহীন! এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের প্রভাব কতটা পড়তে চলেছে, এই নিয়ে অবশ্য ভাবিত নন নেতা-সমর্থকেরা। প্রার্থীদের অধিকাংশেরই মন্তব্য, ‘‘এখন শুধুই ভোট। জিতলে করোনার সঙ্গে লড়াই করা যাবে।’’
ভোটের দিন যত এগোচ্ছে, ততই প্রচারের ঝাঁঝ বাড়াচ্ছে দলগুলি। সঙ্গে একের পর এক চমক। বুধবার সব দলের প্রার্থীকেই বিভিন্ন কৌশল নিয়ে পথে প্রচারে নামতে দেখা গেল। সকাল থেকে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বেরোন শাসক ও বিরোধী দলের প্রার্থীরা। এ দিন প্রচারের অনেকটা আলোই শুষে নেন ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্ব যাদবপুর থানা এলাকার শহিদ স্মৃতি কলোনি থেকে শুরু হয় তাঁর প্রচার। প্রার্থীর হয়ে প্রচারে হাঁটেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। মন্ত্রীকে দেখা গেল ধামসা-মাদল বাজাতে। সেই তালে পা মেলালেন অনন্যা। প্রচারে ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। অনন্যা বলেন, ‘‘তৃণমূলের বিকল্প তৃণমূল কংগ্রেস। আমার ওয়ার্ডে বিরোধীদের তো দেখাই যাচ্ছে না।’’ প্রচারে করোনার বিধি যে সব সময়ে মানা সম্ভব হচ্ছে না, তা স্বীকার করে নেন প্রার্থী। এ দিন সকাল থেকেই কাঁকুড়গাছি সেকেন্ড লেন এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার সারেন ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী পরেশ পাল।
ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে মশারির ভিতরে ঢুকে নির্বাচনী প্রচার ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী আশিস চট্টোপাধ্যায়ের। বৌবাজারে।
মশারি জড়িয়ে হাঁটলেন ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী আশিস চট্টোপাধ্যায়। এলাকায় মশারউপদ্রব বোঝাতে আমহার্স্ট স্ট্রিটে এ ভাবেই হাঁটেন তিনি। প্রার্থীর দাবি, ‘‘ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া রোধে ব্যর্থ পুরসভা। পুরসভার হাতে সব কিছু থাকলেও এই সমস্যা রুখতে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ।’’
৯৯ ও ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থীর সমর্থনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সকাল দশটা নাগাদ রামগড় এলাকা থেকে শুরু হয় তাঁর প্রচার। দুপুর ১২টা পর্যন্ত তা চলে। এ দিন রামগড়, গাঙ্গুলিবাগান, বাঘা যতীন বাজার এলাকায় ঘোরেন তিনি। ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সঞ্জয় দাসের দাবি, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনে এই ওয়ার্ডে উল্লেখযোগ্য ভাবে আমাদের ভোট বেড়েছে। উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে এ বার ভোট চাইছি। জেতার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’’
৫০ নম্বর ওয়ার্ডেও বিজেপি প্রার্থী সজল ঘোষের সমর্থনে প্রার্থীকে নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচারে যেতে দেখা গেল রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যকে। এ দিন লেনিন সরণি এলাকায় প্রচার সারেন তিনি।
ছোট ছোট মিছিল আর পথসভা করতে দেখা গেল বাম প্রার্থীদের। সকাল থেকেই বিভিন্ন ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি হাজির হয়ে প্রচার করতে দেখা যায় তাঁদের। ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী নিতাইনগর, ব্যাঙ্ক কোয়ার্টার্স এলাকার বাড়িগুলিতে গিয়ে প্রচার সারেন। এ ছাড়া তিনি এ দিন পথসভাও করেন। মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘‘আমি ভোর পাঁচটা থেকে মানুষের পাশে থাকি। আমার ওয়ার্ডে প্রায় সব কাজই হয়েছে। সেই উন্নয়নের কথা বলেই মানুষের কাছে ফের ভোট চাইছি।’’
এ তো গেল ঝুলিতে ভোট ঢোকানোর প্রচারপর্ব। কিন্তু সেই পর্বে করোনা বিধিভঙ্গের প্রবণতা দেখে চিন্তিত সচেতন শহরবাসী। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলছেন, ‘‘যদি নিজেরাই সজাগ না হই, তা হলে শুধু তৃতীয় নয়, একের পর এক ঢেউ আসতেই থাকবে। করোনার বিধিনিষেধে ঢিলেমি দিলে কী পরিস্থিতি হতে পারে, আমরা দেখেছি। সেটা মনে রাখতে হবে।’’