দখল: ফুটপাত জুড়ে এ ভাবেই চলে বেচাকেনা। দমদম রোডে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
সোমবার সন্ধ্যা ৭টা। দমদম স্টেশন লাগোয়া দমদম-নাগেরবাজার রুটের অটোর জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীদের লাইন তখন প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ। নাগেরবাজারের দিক থেকে অটো আসছে না অনেক ক্ষণ। কেন? একটু পরে জানা গেল, হনুমান মন্দিরের কাছে বিশাল যানজট। দমদমের দিকে আসতে না পেরে কিছু অটো আবার ফিরে যাচ্ছে নাগেরবাজারে। হনুমান মন্দিরের কাছে একটি বড় বাস ঘোরাতে গিয়েই নাকি এই যানজট। অগত্যা কেউ অটোর জন্য হা-পিত্যেশ করে দাঁড়িয়ে রইলেন, কেউ হেঁটেই বাড়ির দিকে রওনা দিলেন।
দমদম রোডকে কেন্দ্র করে এটাই যান-যন্ত্রণার নিত্যদিনের ছবি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভোট আসে, ভোট যায়, কিন্তু এই পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয় না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দমদম রোডে বাজারের আধিপত্য যত প্রশস্ত হচ্ছে, চলাচলের জায়গাও তত কমে আসছে। মুরগির মাংস থেকে পালং শাক, সবই বিক্রি হচ্ছে রাস্তার উপরে। দেখে মনে হবে, গাড়ি চলার জন্য নয়, যেন বাজার বসার জন্যই তৈরি হয়েছিল ওই রাস্তা। বাজারের গা ঘেঁষে কোনও মতে শম্বুক গতিতে এগিয়ে চলে অটো, ছোট গাড়ি বা বাস। দিনের ব্যস্ত সময়ে ১০ মিনিটের রাস্তা পেরোতেই লেগে যায় বহু ক্ষণ। অসীম মণ্ডল নামে এক নিত্যযাত্রী বললেন, ‘‘অটো ছেড়ে দিয়ে মোটরবাইক বা স্কুটার কিনে যে যাতায়াত করব, তা-ও সম্ভব নয়। কারণ, দু’চাকার যান চলাচলের জন্যও দমদম রোড প্রশস্ত নয়।’’
দমদম রোডের ঘিঞ্জি এলাকায় ফুটপাত দখলমুক্ত করার অভিযান একেবারে যে হয় না, তা নয়। কিন্তু অভিযোগ, কিছু দিন পরেই সেই রাস্তা আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। নাগেরবাজার এলাকার বাসিন্দাদের মতে, এ যেন চোর-পুলিশের খেলা। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তার ধারে নির্মাণ সামগ্রী পড়ে থাকার ছবিটা গত পাঁচ বছরে এতটুকুও পাল্টায়নি। এখন ভোটের আগে হয়তো রাস্তার দু’দিক সাফ করা হচ্ছে। কিন্তু ভোট মিটে গেলেই আবার আগের মতো বেহাল দশা ফিরে আসবে।
বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, দমদম রোড ঘিরে সারা বছরই চলে নানা ধরনের উৎসব ও পার্বণের উদ্যাপন। যার পিছনে রয়েছেন এলাকার বড়, মেজো, ছোট— বিভিন্ন ধরনের নেতারা। অনেকেরই দাবি, দমদম রোডের বিভিন্ন জায়গায় লাগানো মাইকের বিকট শব্দে এলাকায় টেকাই দায় হয়ে ওঠে। পড়াশোনায় মনঃসংযোগ করতে পারে না পড়ুয়ারা। আর এই উৎপাত যেন দিনদিনই বেড়ে চলেছে।
দক্ষিণ দমদম পুরসভার এক আধিকারিক অবশ্য সব দোষই চাপাতে চেয়েছেন ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ঘাড়ে। তাঁর কথায়, ‘‘দমদম রোড ঘিরে মানুষের এত সমস্যার মূল কারণ জনবিস্ফোরণ। গত পাঁচ বছরে জনসংখ্যা অন্তত ২০ শতাংশ বেড়েছে দমদম রোড সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায়। সেই সঙ্গে প্রতিদিন কর্মসূত্রে এই এলাকায় যাতায়াত করা মানুষের সংখ্যাও কম নয়। লোকাল ট্রেনে দমদম স্টেশনে এসে নামা বহু হকার ও আনাজ বিক্রেতা দমদম রোডেই নিজেদের পসরা নিয়ে বসে পড়েন।’’
সাত লক্ষেরও বেশি মানুষ বসবাস করেন দক্ষিণ দমদম পুরসভা এলাকায়। তাঁদের যাতায়াতের অন্যতম প্রধান রাস্তা দমদম রোড খানাখন্দে ভরা। গত কয়েক মাস ধরে হনুমান মন্দিরের কাছে কালভার্ট সংস্কারের কারণে বাস-সহ ভারী যান চলাচল বন্ধ। তবু যানজট কমেনি এতটুকুও।
মানুষ যে ফুটপাত ধরে হাঁটাচলা করবেন, তারও উপায় নেই। দোকান থেকে শুরু করে ইমারতি দ্রব্যের স্তূপ, সবই ফুটপাতের উপরে। কোথাও ফুটপাতই নেই, কোথাও আবার তা দখলদারে ভর্তি। ফলে রাস্তাই সম্বল। কংগ্রেস নেতা তাপস মজুমদার বলেন, ‘‘জনসংখ্যার তুলনায় রাস্তার পরিমাণ কম। ফলে সমস্যা রয়েছে এবং তা ক্রমশ বাড়ছে।
সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।’’ স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশের সহায়তায় রাস্তা দখলমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে বলে দাবি পুরসভার আধিকারিকদের।
দক্ষিণ দমদম পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অবশ্য জানিয়েছেন, কালভার্ট সংস্কার ঘিরে যে প্রকল্পের ঘোষণা হয়েছিল, সেই কাজ শুরু হয়েছে। ওই কাজ শেষ হলে দমদম রোডের চেহারাই বদলে যাবে।