NMCG

NMCG: অভিযোগ শুনবেন ‘মেয়র’ শোভন চট্টোপাধ্যায় ও প্রয়াত কমিশনার! বলছে সরকারি ওয়েবসাইট

এই ভুল তথ্যের ‘দায়’ কেন্দ্র না রাজ্যের, সেই বিতর্কের মধ্যে না ঢুকলেও বোঝা যাচ্ছে যে, গঙ্গার দূষণ রোধ ঠিক কোন পর্যায়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২১ ০৭:৫৬
Share:

ফাইল চিত্র।

প্রতিমা বিসর্জন-সহ গঙ্গাদূষণ নিয়ে যে কোনও অভিযোগ, তথ্য বা প্রস্তাব জানাতে যোগাযোগ করতে হবে কলকাতার ‘মেয়র’ শোভন চট্টোপাধ্যায় বা পুরসভার ‘কমিশনার’ অর্ণব রায়ের সঙ্গে!

Advertisement

গঙ্গার দূষণ রোধ, পুনরুজ্জীবন, স্রোত-প্রবাহ অক্ষুণ্ণ রেখে জলের মান বজায় রাখা, পরিবেশগত সুস্থায়ী উন্নয়ন-সহ একাধিক লক্ষ্যে গঠিত কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের ‘জলসম্পদ, নদী উন্নয়ন ও গঙ্গা পুনরুজ্জীবন’ দফতরের অধীনস্থ ‘ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা’-র (এনএমসিজি) ওয়েবসাইটে এমনটাই উল্লেখ রয়েছে! অথচ তিন বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৮ সালের নভেম্বরে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কলকাতার মেয়র পদ ছাড়তে হয়েছিল শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। আর পুরসভার প্রাক্তন কমিশনার তথা প্রশাসনিক শীর্ষকর্তা অর্ণব রায় গত অগস্টেই প্রয়াত হয়েছেন।

ফলে যে ওয়েবসাইটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি দিয়ে গঙ্গাদূষণ রোধে সরকারি কাজের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরা হচ্ছে, সেখানেই গঙ্গা ও তার উপনদী পার্শ্বস্থ ‘ইউএলবি’ (আর্বান‌ লোকাল বডি) সেকশনে উল্লেখিত কলকাতা পুরসভার ক্ষেত্রে এত বড় ভুল তথ্য কী ভাবে দেওয়া রয়েছে, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। অবশ্য শুধু কলকাতা পুরসভাই নয়, ভুল তথ্য রয়েছে অন্য একাধিক পুর প্রশাসন সম্পর্কেও।

Advertisement

পরিবেশকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, এই ভুল তথ্যের ‘দায়’ কেন্দ্র না রাজ্যের, সেই বিতর্কের মধ্যে না ঢুকলেও বোঝা যাচ্ছে যে, গঙ্গার দূষণ রোধ ঠিক কোন পর্যায়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যেখানে কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে ন্যূনতম সমন্বয়টুকু নেই। এক নদী বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘প্রচলিত আছে, যত গর্জে তত বর্ষে না। এ ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটছে। গঙ্গার দূষণ রোধের যতটা প্রচার রয়েছে, বাস্তবে তার ছিটেফোঁটাও নেই।’’

ঘটনাপ্রবাহ বলছে, ২০১৯ সালে উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার-সহ (যে পাঁচটি রাজ্যের উপর দিয়ে গঙ্গার মূল প্রবাহ পথ গিয়েছে) আরও ছ’টি রাজ্যের উদ্দেশে একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল এনএমসিজি। তাতে বলা হয়েছিল, গঙ্গা ও তার উপনদীতে প্রতিমা বিসর্জন সম্পূর্ণ বন্ধ। ‘দ্য এনভায়রনমেন্ট (প্রোটেকশন) অ্যাক্ট, ১৯৮৬’-র ৫ ধারা অনুযায়ী, কেউ এই নিয়মভঙ্গ করে গঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন করলে পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ হিসাবে তাঁকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। রাজ্য সরকার, পুরসভা, সংশ্লিষ্ট জেলাশাসককে এই নিয়ম পালনের বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল। অথচ তার পরেও দেখা যাচ্ছে, কলকাতা-সহ বিভিন্ন জায়গায় গঙ্গায় অবাধে প্রতিমা বিসর্জন চলছে।

অবশ্য নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে পরিবেশবিধি লঙ্ঘনের রীতি এই প্রথম নয়। এর আগে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজোও হয়েছিল। এ বারেও গঙ্গায় বিসর্জন রোধে পুরসভারই খামতি রয়েছে কি না জানতে কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন ফিরহাদ হাকিমকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজেরও। পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবব্রত মজুমদার জানাচ্ছেন, গঙ্গায় প্রতিমা ভাসানের নির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা রাজ্য সরকারের তরফে পুরসভার কাছে আসেনি। এনএমসিজি-র তথ্য-ভ্রান্তি নিয়ে দেবব্রতবাবুর দাবি, ‘‘এখানে নামটা নয়, পদটাই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যিনি মেয়র বা কমিশনার রয়েছেন, তিনি আগামিকাল না-ই থাকতে পারেন।’’

যদিও এই যুক্তি মানতে চাননি পরিবেশবিদেরা। এক পরিবেশ বিজ্ঞানী জানাচ্ছেন, কে, কোন পদে রয়েছেন তা জানা ও জানানোর কর্তব্য তো কেন্দ্র-রাজ্য দু’তরফেরই। তা ছাড়া ওয়েবসাইটে ‘চিফ এগ্‌জিকিউটিভ অফিসার’ তথা অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি (ওএসডি) হিসাবে যে আধিকারিকের নাম রয়েছে, বিভ্রান্তি সেখানেও। কারণ, যাঁর মোবাইল নম্বর ওখানে দেওয়া, তিনিও বর্তমানে সেই পদে নেই। ওই পরিবেশ বিজ্ঞানীর বক্তব্য, ‘‘পদ যে গুরুত্বপূর্ণ সেটা বোঝা গেল। কিন্তু ফোন নম্বরটা তো ঠিক দিতে হবে!’’ নদী বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকার আবার বলছেন, ‘‘যে দেশের মানুষ গঙ্গার জন্য ১১১ দিন অনাহারে থেকে প্রাণত্যাগ করেন, সেই দেশে নদী দূষণের এই রমরমা বড় খারাপ সময়ের সঙ্কেত দিচ্ছে।’’

যার ফল, নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করেও বাড়ছে গঙ্গায় বিসর্জিত প্রতিমার সংখ্যা!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement