এ ভাবেই খাল ঢেক তার উপরে উদ্যান তৈরীর পরিকল্পনা হয়েছে নিউ টাউনে। নিজস্ব চিত্র।
সাজানো পার্কে সবুজ গালিচার মতো ঘাস। সকাল-বিকাল ভ্রমণ করেন লোকজন। ছোটরাও খেলতে আসে। পার্কের আদলে জায়গাটি সাজানো হলেও, আদতে সৌন্দর্যায়নের মোড়কে ঢেকে দেওয়া হয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এই ছবি নিউ টাউনের এসি ব্লকের। যেখানে পার্কের আড়ালে ঢাকা পড়েছে খাল। যাতে আবর্জনা ফেলার প্রবণতা থেকে খাল বাঁচানো যায়। সেই সঙ্গে সাপ ও মশার দৌরাত্ম্য থেকে রেহাই মেলে।
সবুজ শহর নিউ টাউনের বিভিন্ন এলাকার মধ্যে খাল রয়েছে। সেই সব খাল অধিকাংশ জায়গায় দুর্গন্ধময় অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কোথাও খালের জল স্তব্ধ বলা যায়। কোথাও বা ধীরে বইছে জল। নিউ টাউনে খালের নাব্যতা কমে যাওয়ার কারণে আজকাল ভারী বৃষ্টিতে জল জমছে, এমন অভিযোগ বাসিন্দাদের।
নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ) খাল থেকে দূষণ ছড়ানো ঠেকাতে তাই খাল ঢেকে তার উপরে সৌন্দর্যায়নের পরিকল্পনা করেছে।আধিকারিকেরা জানান, এর নেপথ্যে প্রথম কারণ বাইরে থেকে কোনও কিছু যাতে খালে ফেলার সুযোগ না থাকে। অন্য দিকে, প্রতি বছর খাল সংস্কারের খরচ লাঘব করা। তাই উপরেথাকবে পার্ক এবং নীচে দিয়ে বয়ে যাবে খালের জল।
দফতর সূত্রের খবর, নিউ টাউনে গত বছর দেড়শো জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। পাশাপাশি সেখানে সাপের উপদ্রব মারত্মক বেড়েছিল। এক ভিন্ রাজ্যের পরীক্ষার্থী নিউ টাউনের রাস্তায় হাঁটার সময়ে সাপের ছোবল খান। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। একাধিক আবাসনে গত বছর সাপ ঢোকার খবর পাওয়া গিয়েছিল। একাধারে ফাঁকা জমিতে ঘন আগাছা, অন্য দিকে মজা খাল— মশা ও সাপের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠছে নিউ টাউনের অনেক জায়গা।
এনকেডিএ জানাচ্ছে, সাপুরজি এলাকায় খাল ঢাকার কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে আনুমানিক ৩৭০ মিটার দৈর্ঘ্যের খাল ঢাকার কথা। আধিকারিকেরা জানান, নিউ টাউন শহর এলাকার ও পঞ্চায়েতএলাকার মাঝে খালগুলি বিভাজিকা হিসাবে রাখা হয়েছিল। নিউ টাউন শহর তৈরির সময় থেকেই ওইব্যবস্থা। কিন্তু দুই এলাকা থেকেই খালগুলিতে আবর্জনা ফেলে দূষণ ছড়ানো হয়। তার জন্য বছর বছর খালের সংস্কারের প্রয়োজন হয়।তবুও খালের নাব্যতা তেমন বাড়ে না। এক শীর্ষ আধিকারিকেরকথায়, ‘‘উপর থেকে খাল যদি ঢেকে দেওয়া যায়, তবে মশার সমস্যানিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। বাইরেথেকে খালে আবর্জনা ফেলার সুযোগ থাকবে না। ফলে সংস্কারের খরচও অনেকটাই কমে আসবে।’’
কয়েক মাস আগে এ ভাবেই নিউ টাউনের এসি ব্লকে চালু করা হয়েছে এমনই একটি পার্ক। যারনীচে দিয়ে খাল বয়ে যাচ্ছে। এনকেডিএ জানাচ্ছে, সেটিই তাদের খালঢাকার পরিকল্পনার পাইলট প্রকল্প। ওই জায়গায় আগে একটি বিরাট খাটাল ছিল। যার জেরে সারা বছর ওই জায়গাটি অপরিচ্ছন্ন হয়ে থাকত। নতুন তৈরি পার্কে ঢুকে দেখা গেল, মাঠের ধারে ধারে ম্যানহোল রয়েছে। আধিকারিকেরা জানালেন, ওই ম্যানহোলের ভিতরে রোবট নামিয়ে খালের সংস্কার করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।