অনিয়ম: নির্মাণ ঘিরে এ ভাবেই ছড়াচ্ছে দূষণ। নিজস্ব চিত্র
চারদিকে আবাসন। তার মাঝেই বহুতল নির্মাণের কাজ চলছে। অথচ নির্মীয়মাণ বহুতলগুলি কোনও চট বা প্লাস্টিক দিয়ে ঘেরা নয়। ফলে নির্মাণকাজের ধুলো ছড়িয়ে পড়ছে এলাকায়। সেই সঙ্গে দিনভর যন্ত্রের বিকট আওয়াজে কান পাতাই দায়।
নিউ টাউনের বহু জায়গায় এমন সমস্যায় জেরবার হচ্ছেন বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, পরিবেশ বিধি মানছেন না নির্মাণকারীরা। অথচ জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশিকাই আছে, যে কোনও নির্মাণকাজের সময়ে দূষণ রুখতে ঢেকে রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে নির্মাণকারীদের। প্রশ্ন উঠছে, তবে কেন এত দিন নিউ টাউনে পরিবেশ বিধি ভেঙে কাজ চলছে?
এ নিয়ে নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটিকে অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। বাসিন্দাদের একটি অংশের বক্তব্য, নিউ টাউনে ক্রমশ জনসংখ্যা বাড়ছে। ফলে এলাকা জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভোরে ইমারতি দ্রব্য বোঝাই ট্রাক বা লরি ঢোকে এলাকায়। সে সব নামানোর আওয়াজ, দিনভর নির্মাণকাজের শব্দ, উপর থেকে কাঠের পাটাতন ফেলার শব্দে জেরবার তাঁরা। ধুলো উড়ছে চারদিকে। পাশাপাশি রাতদিন জলের অপচয় হচ্ছে বলেও অভিযোগ। এর ফলে নির্মাণস্থল সংলগ্ন রাস্তার অবস্থা বেহাল হয়ে গিয়েছে।
নিউ টাউনের এসি ব্লকের বাসিন্দা সুজাতা চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁর বাড়ি সংলগ্ন তিনটি বহুতল নির্মাণ হচ্ছে। দিনরাত সে সবের শব্দে কান পাতা দায়। এত ধুলো যে, কাচের জানলা মোছার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফের তা ধুলোয় ঢাকছে। উপরন্তু ধুলোর জেরে অনেকেরই গলায় সংক্রমণ হচ্ছে। নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটিকে (এনকেডিএ) খবর দিলে দ্রুত আধিকারিকেরা এসে পদক্ষেপ করেন। কিন্তু এর পরে যে কে সেই অবস্থা দাঁড়ায়।
পরিবেশ বিধি মানা হচ্ছে না দেখেও প্রশাসন কেন কড়া পদক্ষেপ করছে না? সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন এনকেডিএ কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে এই সমস্যার সমাধানে আলোচনা হয়েছে। স্থির হয়েছে, এ বার থেকে নিউ টাউনে বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদনের সময়ই দেখা নেওয়া হবে কাজের শুরু থেকেই চারদিক অস্থায়ী ভাবে ঘেরা হয়েছে কি না। এমনকি নির্মাণ সামগ্রী বা আবর্জনা সরানো হয়েছে কি না তা-ও নজর রাখা হবে। শুধু তাই নয়, এই নজরদারি ধারাবাহিক ভাবে চলবে বলেই জানিয়েছেন এনকেডিএ কর্তৃপক্ষ। যদি দেখা যায়, নির্মাণস্থল ঘেরা হয়নি, তবে কাজ বন্ধের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।
নিউ টাউনে বিপুল পরিমাণে নির্মাণকাজ চলছে বর্তমানে। সে সব বিল্ডিংয়ের অনুমোদন আগেই দেওয়া হয়েছে, ফলে তা আটকানো যাবে না। তবে ওই সব নির্মাণস্থলও ঘিরে রাখার আবেদন করা হবে।
এনকেডিএ-র এক কর্তা জানান, নিউ টাউনকে সবুজ-শহর বানাতে একাধিক পদক্ষেপ করা হচ্ছে। নির্মাণ সংক্রান্ত দূষণ আটকাতেও পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই পরিবেশ বিধি মানা হচ্ছে না। তাই এ বার আরও কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছেন কর্তৃপক্ষ।