বর্ষবরণে উপচে পড়া ভিড় চিড়িয়াখানায়। ছবি: সংগৃহীত।
অতিমারি দিনের জড়তার আগল খুলে বছরের শেষ রাত থেকে বর্ষবরণের উৎসবে মেতেছে শহরবাসী। বর্ষশেষের ভিড়টা বুঝিয়ে দিয়েছে পার্ক স্ট্রিট এখনও ‘ক্লিশে’ হয়নি কলকাতা বা মফস্সলের কাছে। রেস্তরাঁর টেবিল পেতে সন্ধ্যা থেকেই মস্ত লাইন। রাসেল স্ট্রিট থেকে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের অংশে পাগলাটে ভিড়। উচ্ছ্বাস, ক্লান্তি, মত্ততা— সব কিছু মিশে গিয়েছে তাতে। তার রেশ থাকল রবিবার, বছরের প্রথম দিনেও।
কলকাতা ছাড়িয়ে পিকনিকে শামিল, না শহরের ভিতরেই কোথাও শীত-পার্বণে যোগ দেওয়া হবে— সেই ধন্দ যথারীতি উঁকি দিয়েছে। তবে ভিড় সর্বত্রই ছিল। ‘হটস্পট’ হিসাবে পরিচিত প্রিন্সেপ ঘাট, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, চিড়িয়াখানা, জাদুঘর, পার্ক স্ট্রিট ও ময়দান-সহ বিভিন্ন এলাকায় কার্যত একই দৃশ্য দেখা গেল। কোথাও একটু কম। কোথাও একটু বেশি। সন্ধ্যার আগে পর্যন্ত ভিড় টানার দৌড়ে কারা এগিয়ে থাকল, তা খুঁজে দেখল আনন্দবাজার অনলাইন।
রবিবার সকাল থেকেই পিকনিকের মেজাজে দেখা গিয়েছে ময়দান এলাকাকে। দল বেঁধে জড়ো হয়ে দেদার খাওয়াদাওয়া চলল সেখানে। তার পর সেই ভিড়ই আবার ছড়িয়ে পড়ল শহরের নানা প্রান্তে। দুপুরে আলিপুর চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা গেল, টিকিট কাউন্টারের সামনে কার্যত তিল ধারণেরও জায়গা নেই। দিনভর চলেছে অত্যুৎসাহী যুবকদের বাঘকে ছোলা খাওয়ানোর পালা। জিরাফ ও জেব্রার খাঁচায় নির্বিচারে ছুড়ে দেওয়া হয়েছে বিস্কুট, কমলালেবু বা কমলালেবুর খোসা।
চিড়িয়াখানা সূত্রে খবর, সকালের দিকে ভিড় ছিল না। বেলা বাড়তেই ছবিটা পাল্টাতে থাকে। জনস্রোত সামলাতে বেশ হয়রান হতে হয়েছে রক্ষীদের। কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, রবিবার মোট ৯০ হাজার ৯২৭ জন মানুষ জড়ো হয়েছিলেন চিড়িয়াখানায়। এর আগে চিড়িয়াখানায় ভিড়ের রেকর্ড তৈরি হয় ২০১৬ সালে। সেই বার প্রায় ১ লক্ষ ১৬ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছিল। এই বছরের পরিসংখ্যান জায়গা করে নিল ঠিক তার পরেই।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ইকো পার্কেও তা-ই। সকালে ভিড় একটু কম হলেও তা বাড়তে শুরু করে বেলার দিকে। যদিও বিকেল পর্যন্ত কত মানুষ এসেছেন সেখানে, তা জানা যায়নি। তবে নিকো পার্কে ভালই ভিড় হয়েছে। কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, প্রায় ১২ হাজার মানুষ গিয়েছেন নিকো পার্কে।
ভিড়ের একই ছবি দেখা গেল ভিক্টোরিয়া ও প্রিন্সেপ ঘাটেও। রবিবার ভিক্টোরিয়া আর ভারতীয় জাদুঘরের টিকিট কাউন্টারের সামনে লাইন কয়েকশো মিটার ছাড়িয়ে যায় বেলা বাড়তেই। গাড়ির চাপে যানজট তৈরি হয় গোটা রাস্তায়। সামাল দিতে কার্যত হিমশিম খেতে হয় পুলিশকর্মীদের। কর্তৃরক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০ হাজারের বেশি মানুষের ভিড় হয়েছে ভারতীয় জাদুঘরে। কিছু বেশি ভিড় হয়েছে আলিপুর মিউজ়িয়ামে। কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, বড়দিনে সেখানে ১৬ হাজারেরও বেশি মানুষ গিয়েছেন। তবে নজর কেড়েছে সায়েন্স সিটি। রবিবার মাত্রাছাড়া ভিড়ের ছবি ধরা পড়েছে সেখানে। কর্তৃপক্ষের দাবি, সব মিলিয়ে ৩০ হাজার ৮৫১টি টিকিট বিক্রি হয়েছে।
করোনার আতঙ্কের জেরে পর দু’বছর বর্ষবরণ উৎসব মাটি হলেও এ বছর সেই চিরকেলে রীতিতেই ফিরে গিয়েছেন মানুষ। শহরের নানা প্রান্তে জড়ো হয়ে ছুটির দিনের স্বাদ চেটেপুটেই খেয়েছে কলকাতা ও শহরতলির জনতা। রবিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভিড়ের যা তথ্য হাতে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ভিড়ের নিরিখে এগিয়ে রয়েছে চি়ড়িয়াখানা। পরবর্তী ফলাফলের জন্য চোখ থাকুক আনন্দবাজার অনলাইনে।