বিসর্জন দেখিয়ে পর্যটক-আবাহনে উদ্যোগী রাজ্য

গোয়ার কার্নিভালের মতো এ শহরে দুর্গাপুজোর বিসর্জন শোভাযাত্রাকেও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে চায় সরকার। তাই বিশ্ব বাংলা পুরস্কারে সম্মানিত পুজোগুলির নিরঞ্জন অনুষ্ঠান এ বার থেকে পর্যটন দফতরের বার্ষিক উৎসবে স্থান পাবে।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০০:২১
Share:

বিদেশিদের ক্যামেরায় বন্দি বিসর্জন। বৃহস্পতিবার। — সুদীপ্ত ভৌমিক

গোয়ার কার্নিভালের মতো এ শহরে দুর্গাপুজোর বিসর্জন শোভাযাত্রাকেও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে চায় সরকার। তাই বিশ্ব বাংলা পুরস্কারে সম্মানিত পুজোগুলির নিরঞ্জন অনুষ্ঠান এ বার থেকে পর্যটন দফতরের বার্ষিক উৎসবে স্থান পাবে। আগামী বছর থেকে পর্যটন দফতরের ক্যালেন্ডারেও চিহ্নিত করা থাকবে রেড রোডের এই শোভাযাত্রা। ধাপে ধাপে এটিকে আলাদা একটি উৎসবের আকার দিতেই এই সব পরিকল্পনা।

Advertisement

আজ, শুক্রবার বিশ্ব বাংলা, কলকাতা পুরসভা ও কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত শহরের ৩৯টি পুজোর প্রতিমা নিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার ব্যবস্থা করা হয়েছে রেড রোডে। প্রতিটি পুজো কমিটি প্রতিমা ছাড়াও নানা থিমের ট্যাবলো নিয়ে হাজির হবে সেখানে। উপস্থিত থাকবেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারের বিচারে শহরের পুরস্কৃত পুজোগুলির প্রতিমার সঙ্গে সুদৃশ্য ট্যাবলো— সবই ভিডিওবন্দি করে রাখবে পর্যটন দফতর। দফতরের প্রধান সচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন বৃহস্পতিবার জানান, এতকাল কলকাতায় পুজো দেখতেই বেশি ভিড় হয়েছে। এ বার প্রতিমা নিরঞ্জনের শোভাযাত্রাও আকর্ষণীয় করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই রেড রোডের অনুষ্ঠান নিয়ে উন্মাদনা শুরু হয়েছে। বাংলার পর্যটন মানচিত্রে কলকাতার দুর্গা প্রতিমা ভাসানের শোভাযাত্রা কয়েক বছরে বাড়তি আকর্ষণ হয়ে উঠবেই। অনেকেরই মত, এই শোভাযাত্রা নিয়মিত হলে শহরে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে।

ভাসানের ওই শোভাযাত্রা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার? অজিতবাবু জানান, উন্নত প্রযুক্তির ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে গোটা অনুষ্ঠানটি রেকর্ড করা হবে। শুরু থেকে প্রতিমা বিসর্জন যাওয়ার পর্ব পর্যন্ত, সবটা। দুর্গাপুজো দেখতে বিদেশ থেকে অনেকে শহরে আসেন প্রতি বছর। এ বারও এসেছেন। মণ্ডপে গিয়ে প্রতিমা দেখার আগ্রহ বরাবরই বেশি তাঁদের। এ বার বিসর্জন শোভাযাত্রায় তাঁদের দেখাতে উদ্যোগী সরকারও। রেড রোডে হাজির থাকতে তাঁদেরও আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।

Advertisement

বিসর্জনের পথে। বৃহস্পতিবার, উত্তর কলকাতায়। — সুমন বল্লভ

অজিতবাবু বলেন, ‘‘শহরের সব পাঁচতারা হোটেল-কর্তৃপক্ষের কাছে বিদেশি আবাসিকদের তালিকা নেওয়া হয়েছে। সেই মতো তাঁদের আমন্ত্রণ কার্ডও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের সময় মতো অনুষ্ঠান স্থলে পৌঁছে দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষকে।’’ পর্যটন সচিব জানান, ইতিমধ্যে ১০০টিরও বেশি কার্ড হোটেলগুলিতে পাঠানো হয়েছে।

তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর সূত্রের খবর, কয়েক হাজার দর্শকাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্ব বাংলা পুরস্কারে সম্মানিত সেরার সেরা, সেরা মণ্ডপ, সেরা প্রতিমা, সেরা আলোকসজ্জায় ভূষিত পুজোগুলির কর্তারা যাবেন রেড রোডে।

পর্যটন সচিবের কথায়, ‘‘শারদ উৎসবে মাতোয়ারা কলকাতার কাছে আকর্ষণের এক নতুন শোকেস হয়ে উঠবে নিরঞ্জন-পর্ব। ক্যামেরাবন্দি করে সেই অনুষ্ঠান নতুন মোড়কে সাজিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হবে সারা বিশ্বে।’’ তিনি জানান, সিনেমা, টিভি, ইউটিউব, সোশ্যাল মিডিয়া-সহ প্রতিটি মাধ্যমে এর প্রচার চালাবে পর্যটন দফতর। দিল্লিতে এবং দেশের অন্য রাজ্যের পর্যটন মেলায় গিয়েও প্রচার করা হবে। এ রাজ্যের বিভিন্ন শহরে, গ্রামে রোড শো করে দেখানো হবে কলকাতার শারদ উৎসবের এই আকর্ষণীয় অধ্যায়।

এ বিষয়ে বড়দিনের সময়ে পার্ক স্ট্রিট আলোকায়নের প্রসঙ্গ তুলে অজিতবাবু জানান, সেটিও মুখ্যমন্ত্রীর কল্পনাপ্রসূত। আজ তা অন্যতম দ্রষ্টব্য হয়ে উঠেছে। এখন আবার ওই রাস্তা সারা বছরের জন্য আলোকিত করা হচ্ছে। যে ভাবে পার্ক স্ট্রিটের নতুন রূপ আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে, তেমনই রেড রোডের নিরঞ্জন অনুষ্ঠান আগামী দিনে দেশ-বিদেশে সমাদৃত হবে বলেই বিশ্বাসী পর্যটন দফতর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement