বিদ্যাসাগর হাসপাতাল

দখল শয্যা, নিরুপায় কর্তৃপক্ষ

কী সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন মতিলাল দেব, মনে করতে পারছেন না বেহালার বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেলের কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের নথি বলছে, ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ০১:২০
Share:

এ ভাবেই নোংরা হচ্ছে সাজানো ওয়ার্ড। — অরুণ লোধ

কী সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন মতিলাল দেব, মনে করতে পারছেন না বেহালার বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেলের কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের নথি বলছে, ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, মতিলালবাবুর মতোই আরও আট জন পুরুষ ও মহিলা সুস্থ হওয়ার পরেও দীর্ঘ দিন শয্যা দখল করে রেখেছেন।

Advertisement

অথচ এই হাসপাতালেই শয্যার অভাবে একই শয্যা ভাগ করে নিয়েছেন একাধিক রোগী। এমনটাই জানাচ্ছেন রোগীর পরিজনেরা। মহেশতলা থেকে আসা এক রোগীর আত্মীয় সৌমেন বিশ্বাস বলছেন, ‘‘শয্যা নেই। তাই কাকা আরও এক জনের সঙ্গে থাকছে।’’

দোতলার সাধারণ বিভাগের লাগোয়া ঘরে সাতটি শয্যার দখল নেওয়া ‘রোগী’দের সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, রেখে চিকিৎসা করার মতো কোনও অসুস্থতাই এঁদের নেই। অন্যান্য রোগীর পরিজন থেকে কর্মী সকলেরই অভিযোগ, এঁরা হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ ঘরের পাশেই শৌচাগারে না গিয়ে বিছানা, মেঝে নোংরা করছেন।

Advertisement

কয়েক বছরে ঢেলে সাজা হয়েছে হাসপাতালের মেটারনিটি ও জরুরি বিভাগ। তৈরি হয়েছে অবজারভেশন ইউনিট। ডায়ালিসিস, সিটি স্ক্যান-সহ বেশ কিছু পরিষেবাও শুরু হয়েছে। সম্প্রতি সংস্কার হয়েছে স্ত্রী ও পুরুষ বিভাগের সাধারণ শয্যা। হাসপাতালে দিনে দিনে বাড়ছে রোগীর চাপ। ফলে একঘেয়েমি দূর করতে বিশেষ পরিকল্পনা নিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। যেমন প্রবেশ পথ থেকেই শোনা যাবে মৃদু রবীন্দ্রসঙ্গীত। যার আমেজ ছড়িয়ে যাবে আউটডোর থেকে লবি পর্যন্ত।

কিন্তু এই সুরের তাল কেটে যাবে সাধারণ শয্যার সামনে পৌঁছনোর আগেই। নাকে রুমাল দিলেও তীব্র দুর্গন্ধে গা গুলিয়ে ওঠে। উঁকি মারতেই চোখে পড়ে বিছানার নীচে এবং ঘরের যত্রতত্র পড়ে রয়েছে মল-মূত্র। কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, কার্যত রাতের ঘুম কেড়েছেন এঁরা। হাসপাতালের কোনও নিয়মের তোয়াক্কা না করেই কেউ কেউ যখন তখন নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছেন। তখন ছুটতে হচ্ছে থানায়।

সমাধানের উপায় কী? জানা নেই কর্তৃপক্ষের। সুপার উত্তম মজুমদার বলছেন, ‘‘যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ঠিকানায় গিয়ে রোগীর পরিজনদের দেখা মেলেনি। রাস্তা থেকে অসুস্থকে তুলে এনে পুলিশ ভর্তি করিয়ে দেওয়ায় কেউ নথিভূক্ত হয়ে আছেন ‘আননোন’ হিসেবে। অথচ রাস্তাতেও বার করে দিতে পারছি না। স্বাস্থ্য ভবনকেও জানিয়েছি।’’ তাঁর দাবি, পরিষ্কার করার সঙ্গে সঙ্গেই এঁরা ফের নোংরা করছেন জায়গাটা।

দুশ্চিন্তার অন্য কারণও রয়েছে। শীঘ্রই এই হাসপাতালে শুরু হতে চলেছে ১২ শয্যার এসডিইউ বিভাগ। সাধারণ বিভাগের বিপরীতে হচ্ছে এটি। নোংরা থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন কর্তৃপক্ষ। বিষয়টা নিয়ে বিব্রত বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেলের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘কম বেশি এই সমস্যা প্রতিটি হাসপাতালে। মানবিকতার দিকটা মাথায় রাখতে হবে ঠিকই। কিন্তু হাসপাতাল চিকিৎসার জায়গা। এটা তো কোনও আশ্রয়স্থল হতে পারে না। আশ্রয়হীন মানুষদের নিয়ে কাজ করে এমন কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে অবিলম্বে তাঁদের স্থানান্তরের ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement