জাতীয় পরিবেশ আদালত। ফাইল চিত্র।
গত মে মাসে রবীন্দ্র সরোবরে রোয়িংয়ের অনুশীলন চলাকালীন কালবৈশাখীর দাপটে দুই কিশোরের মৃত্যু হয়েছিল। সরোবর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (কেএমডিএ) তরফে তখন জানানো হয়েছিল, জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মতো পরিবেশবিধি মান্য করার জন্যই সেখানে পেট্রল বা ডিজ়েলচালিত উদ্ধারকারী নৌকা রাখা যায়নি। নৌকা থাকলে ওই বিপর্যয় এড়ানো যেত। কিন্তু সোমবার রবীন্দ্র সরোবর সংক্রান্ত একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পরিবেশ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিল, ডিজ়েল বা পেট্রলচালিত উদ্ধারকারী নৌকা চলার ব্যাপারে তারা কখনও কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করেনি।
প্রসঙ্গত, রোয়িং অনুশীলন বা অন্য কোনও জলক্রীড়ার সময়ে (ওয়াটার স্পোর্টস) পেট্রলচালিত উদ্ধারকারী নৌকা রাখার ক্ষেত্রে রোয়িং ক্লাবগুলিকে কেএমডিএ ‘নো অবজেকশন’ দিতে পারে কি না, তা জানতে আদালতে আবেদন করেছিল সংস্থা। সেখানেই গত মে মাসের ওই বিপর্যয়ের প্রসঙ্গ আসে। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে আদালত এ দিন জানিয়েছে, রোয়িং চলাকালীন সরোবরে উদ্ধারকারী নৌকা চলবে কি না, সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে কেএমডিএ-র উপরে। এই ব্যাপারে আদালত কখনও কোনও রকম বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। তা ছাড়া, পরিবেশবিধি মেনে পেট্রল-বোট চালানো যাবে কি না, সেই সিদ্ধান্তও কেএমডিএ কর্তৃপক্ষের নেওয়ার কথা। এ ব্যাপারে ২০১৬ সালে সরোবর নিয়ে এক মামলায় আদালত-গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
ফলে, আদালতের এই মন্তব্যের পরে স্বাভাবিক ভাবেই ‘অস্বস্তিতে’ কেএমডিএ। কারণ, মে মাসে দুই কিশোরের মৃত্যুর পরে কেএমডিএ-র চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অভিযোগ করেছিলেন, পরিবেশ দূষণের কারণ দেখিয়ে রবীন্দ্র সরোবর থেকে পেট্রল বা ডিজ়েলচালিত উদ্ধারকারী নৌকা তুলে দেওয়া হয়েছে। সেই নৌকা না থাকায় দুই কিশোরকে সময় মতো উদ্ধার করা যায়নি। ফিরহাদ বলেছিলেন, ‘‘পরিবেশের দোহাই দিয়ে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালে পিটিশন করে রেসকিউ বোটটিকে ওখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওটা থাকলে দুটো জীবন বেঁচে যেত। বিপদ দেখলে রেসকিউ বোট দ্রুত ছুটে যেতে পারত।’’
এমনকি ঘটনাপ্রবাহ আরও জানাচ্ছে, মে মাসেই সরোবরের রোয়িং ক্লাবগুলিকে কেএমডিএ কারণ দর্শানোর একটি চিঠি পাঠিয়েছিল। যেখানে সংস্থা জানিয়েছিল, রোয়িং প্রতিযোগিতার সময়ে ক্লাবগুলির তরফে সরোবরে ডিজ়েল অথবা পেট্রলচালিত নৌকা চালানোর বিষয়টি নজরে পড়েছে। অথচ, এমন নৌকা চালানোর ব্যাপারে পরিবেশ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এ দিন সেই চিঠির প্রসঙ্গও টেনে আদালত বলেছে, কেএমডিএ-র এই দাবি পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘আসলে পুরো ব্যাপারটাই কেএমডিএ-র গাফিলতি। যারা আদালতের নির্দেশ অমান্য করে সরোবরে ছটপুজো করার অনুমতি দিতে পারে, সেখানে তারা এ রকম আরও অনেক অনিয়ম করতে পারে।’’ কেএমডিএ-র আইনজীবী পৌষালি বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘জাতীয় পরিবেশ আদালত যা নির্দেশ দিয়েছে, তা পুরোপুরি মেনে চলা হবে।’’