Illegal drugs

Narcotics Bureau: মেক-আপ, না কি মাদক? উত্তর মুছছে অ্যাপ

কুরিয়র সংস্থাও জানিয়ে দিচ্ছে, পার্সেলে কী আছে, তা জানতে চাওয়া তাদের ‘রুল বুক’-এর বিরোধী।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২১ ০৭:৪৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

কখনও প্লাস্টিকের পুতুলের পেটের ভিতরে, কখনও জুতোর হিলে। কখনও আবার মেক-আপের পাউডার ফেলে দিয়ে সেই বাক্সেই প্রসাধনী সামগ্রী সাজিয়ে। যাতে দেখে মনে হয়, রং-বেরঙের গুঁড়ো আদতে প্রসাধনীর জিনিস! গত কয়েক মাসে ‘কুরিয়র’-এর মাধ্যমে বিদেশ থেকে এ ভাবেই কোটি কোটি টাকার মাদক এ শহরে এসে ঢুকেছে বলে নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরো (এনসিবি) সূত্রে খবর।

Advertisement

হাতেনাতে ধরতে না পারলে কুরিয়রে করে কী আসছে, তা যেমন জানা যাচ্ছে না, তেমনই কালঘাম ছোটাচ্ছে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কথোপকথন মুছে যায় (সেল্ফ ডিলিটিং মোড), এমন মেসেজিং অ্যাপ। তাতে কে কার সঙ্গে কথা বলেছেন, তা থাকছে, কিন্তু কী কথা হয়েছে, তার হদিস মিলছে না। কুরিয়র সংস্থাও জানিয়ে দিচ্ছে, পার্সেলে কী আছে, তা জানতে চাওয়া তাদের ‘রুল বুক’-এর বিরোধী। ফলে জিনিসের ওজন আর কত দূরত্বে তা পাঠাতে হবে, সেটুকু জানিয়ে দিলেই আর কিছু জানতে চায় না তারা। তদন্তকারীদের দাবি, এই ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করে মাদকের বরাত যাঁরা দিচ্ছেন, তাঁদের অধিকাংশই এ শহরের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য, স্কুল-কলেজের পড়ুয়া। এর জন্য তাঁরা পরিবারের সদস্যদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ‘বিটকয়েন’ নামে এক ধরনের ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি’ কিনছেন বলে অভিযোগ। গত দেড় বছরে শিক্ষাঙ্গন বন্ধ থাকায় এমন পড়ুয়াদের মাদক-যোগ আরও বেড়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন একাধিক মাদক-বিরোধী সংস্থার তদন্তকারীরা।

দীর্ঘ দিন কলকাতায় কাজ করে যাওয়া, বর্তমানে দিল্লিতে কর্মরত এনসিবি-র এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগেই কলকাতার বেশ কয়েকটি স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের ধরেছিলাম আমরা। সেই সময়ে দেখা গিয়েছিল, কম্পিউটারে গেম খেলার নামে তাদের বেশির ভাগই টর ব্রাউজ়ার দিয়ে ডার্ক ওয়েবে ঢুকছেন। সেটি এক ধরনের গোপন ইন্টারনেট ব্যবস্থা। আমরা যে ইন্টারনেটের সারফেস ব্যবহার করি, সেটা সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ব্যবস্থার কয়েক শতাংশ মাত্র। তার নীচে থাকে ডার্ক ওয়েব। টর ব্রাউজ়ারে ব্যবহারকারীর আইপি (ইন্টারনেট প্রোটোকল) অ্যাড্রেস গোপন থাকে। এই পদ্ধতিতে ডার্ক ওয়েবে ঢুকলেই হাতে চলে আসে মাদক, আগ্নেয়াস্ত্র, নিষিদ্ধ পর্নোগ্রাফির মতো একাধিক জিনিস।’’ ওই তদন্তকারী আরও জানান, ডার্ক ওয়েবেই বিটকয়েনের মাধ্যমে চলতে থাকে লেনদেন। বিটকয়েনের দাম ওঠানামা করে। কখনও প্রতি কয়েনের মূল্য ভারতীয় টাকায় কয়েক লক্ষ ছাড়িয়ে যায়।

Advertisement

এনসিবি (কলকাতা)-র যুগ্ম অধিকর্তা সুধাংশুকুমার সিংহ বললেন, ‘‘এখন অনেক কিছুই বদলেছে। মাদক আনাতে নতুন নতুন পথ ব্যবহারের ঝোঁক দেখা যাচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, বর্তমানে ডার্ক ওয়েবের উপরে বিশ্বের সমস্ত তদন্তকারী সংস্থারও নজরদারি বেড়েছে। সেই নজরদারি এড়াতেই স্বয়ংক্রিয় ভাবে কথোপকথন মুছে যায়, এমন নিত্যনতুন অ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বরাত দেওয়া মাদক মূলত আসছে বিদেশ থেকে, কুরিয়র ব্যবস্থার মাধ্যমে।

‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব এথিক্যাল হ্যাকিং’-এর অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্ত যদিও বললেন, ‘‘শুধু মেসেজিং অ্যাপ নয়, অনেক পদ্ধতিতেই মাদক কারবারিরা কথোপকথন চালাতে পারেন। কেউ যদি নিজের
ইমেল আইডি থেকে নির্দিষ্ট কোনও কথা লিখে ড্রাফটে সেভ করে রাখেন এবং তার পরে সেই ইমেলের
আইডি এবং পাসওয়ার্ড কাউকে দিয়ে লেখাটি পড়ে নিয়ে ডিলিট করে দিতে বলেন, তা হলেও ধরা মুশকিল।’’ তবে তাঁর দাবি, ‘‘স্বয়ংক্রিয় ভাবে বার্তা মুছে যায় যে অ্যাপে, সেটি কোনও মোবাইল বা কম্পিউটার সংস্থার ক্লাউড সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত কি না, তা দেখতে হবে। যুক্ত থাকলে সেখানে কথোপকথনের সূত্র জমা হলেও হতে পারে। কিন্তু ব্যবহারকারী ক্লাউডের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখলে সেই পথও বন্ধ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement