আদিত্য শ্রীবাস্তব। —ফাইল চিত্র।
রাজারহাটের একটি বহুতল আবাসনে উপর থেকে পড়ে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় রহস্য দানা বেঁধেছে। পুলিশের দাবি, ওই যুবক আত্মহত্যা করেছিলেন। তাঁকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মুকুন্দ আগরওয়াল ও সঞ্জয় শ্রীমানি নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মৃতযুবকের পরিবারের দাবি, ধৃতেরা তাঁর সহকর্মী ছিলেন। তাঁরাই ওই যুবককে উপর থেকে ধাক্কা মেরে নীচে ফেলে দিয়ে খুন করেছেন। বিধাননগর কমিশনারেটের উচ্চপদস্থ কর্তারা এই ঘটনার তদন্ত করছেন। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা ওই যুবকের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন। সেই অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কমিশনারেটের এক পদস্থ কর্তা।
ঘটনাটি যে আবাসনে ঘটেছে, সেটি রাজারহাট চৌমাথার কাছে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম আদিত্য শ্রীবাস্তব (৪০)। গত ১৯ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার আবাসনের একটি বহুতলের নীচ থেকে আদিত্যের দেহ উদ্ধার হয়। নিজেদের আটতলার ফ্ল্যাট থেকেই আদিত্য নীচে পড়েছিলেন। ওই জায়গাটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। বিধাননগর কমিশনারেট জানাচ্ছে, ঘটনার তদন্তে ফরেন্সিক পরীক্ষা করানো হবে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা কবে আসবেন, তা জানতে চায় মৃতের পরিবার।
আদিত্যের বাবা দিলীপ শ্রীবাস্তবের অভিযোগ, কথা বলতে এসে আটতলার ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে তাঁর ছেলেকে নীচে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, আদিত্য হিসাবরক্ষকের কাজ করতেন সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরের একটি সংস্থায়। দিলীপের অভিযোগ, ‘‘কর্মস্থলে আমার ছেলের মাধ্যমে কিছু অবৈধ লেনদেন করানোর চেষ্টা চলছিল। ছেলে তা করতে চাইছিল না। চাকরি ছাড়ার কথা ভাবছিল। মানসিক চাপের কারণে কয়েক দিন অসুস্থ ছিল। অফিসে যেতে পারেনি। ওই দিন ওর তিন জন সহকর্মী আমাদের ফ্ল্যাটে আসেন। ছেলের সঙ্গে বন্ধ ঘরে কথাবার্তা বলছিলেন তাঁরা। মাঝেমধ্যে চেঁচামেচির শব্দও পাই। ওই সময়ে ওঁরাই ছেলেকে উপর থেকে ফেলে দেন।’’
পুলিশের অবশ্য দাবি, আদিত্য নিজেই ঝাঁপ দিয়েছিলেন বারান্দা থেকে। তাঁকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা পাল্টা আদিত্যের বিরুদ্ধেই সংস্থার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন। পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘আদিত্য দেড় কোটি টাকা ওই সংস্থার অ্যাকাউন্ট থেকে সরিয়েছিলেন বলে ধৃতদের দাবি। এটা ঠিক যে, অভিযুক্তেরা পুলিশকে কিছু না জানিয়েই ওই টাকা আদায়ের জন্য আদিত্যের উপরে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। তার জেরেই তিনি ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হন। আর এক সহকর্মীর খোঁজ চলছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, আদিত্য কোনও অনলাইন জুয়া-চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আদিত্যের বাবার বক্তব্য, ‘‘ওই সহকর্মীরা অনেক রাতে এসেছিলেন। আবাসনের গেটে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে আমাদের ফ্ল্যাটে চলে আসেন। যে ঘরে বসে তাঁরা কথা বলছিলেন, সেটি খুব বড় নয়। ছেলে বারান্দার সাড়ে চার ফুট উঁচু রেলিং টপকে ঝাঁপ দিতে গেল, অথচ ওই সহকর্মীরা ওকে আটকালেন না? কেন? আমি নিশ্চিত, ছেলেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ছেলে টাকা নিয়ে থাকলে ওঁরা পুলিশে কেন অভিযোগ করলেন না?’’
আবাসন সূত্রের খবর, আদিত্যের দেহ নীচে পড়ার পরে হইচই শুরু হয়ে যায়। তাঁর পরিবারের নির্দেশে দুই সহকর্মীকে আটকে রাখা হয়। এক জন পালিয়ে যান। বাকি দু’জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আপাতততাঁরা জেল হেফাজতে রয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।