ভবানীপুরে এক ব্যবসায়ীর ফ্ল্যাট থেকে অচল পাঁচশো ও হাজারের নোটে চার কোটিরও বেশি টাকা উদ্ধার হওয়ার প্রাথমিক সূত্র কিন্তু মিলেছিল এক মাস আগে। ওই ভবানীপুরেই।
কী রকম?
লালবাজার সূত্রের খবর, সেটা নির্ভুল খবর ছিল। সেই মতো হানা দিয়েছিলেন গোয়েন্দারা। ভবানীপুরে তাঁরা আটক করেন একটি এসইউভি। তাতে লোকজন পাওয়া গেল ঠিকই, তবে বড় একটি ব্যাগে কিছুই মিলল না। তার কিছুক্ষণ আগেই ওই ব্যাগ থেকে হাতবদল হয়ে গিয়েছিল অচল নোটে প্রায় কোটি টাকা। বমাল ধরা যায়নি বলে গাড়িতে থাকা লোকজনকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা ছেড়ে দেন।
মাসখানেক আগের ওই ঘটনা থেকেই গোয়েন্দারা বুঝতে পারেন, গত ৩১ ডিসেম্বরের পরেও অচল নোটে বিপুল পরিমাণ টাকা কলকাতায় মজুত এবং ব্যাঙ্কের মধ্যে কোনও চক্র মোটা কমিশনের বিনিময়ে সেই নোট পাল্টে নতুন নোট দিচ্ছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের একাধিক অফিসার ও কর্মীর নাম তদন্তে উঠে এসেছিল। ওই এসইউভি-তে থাকা এক ব্যক্তি নিজেকে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কর্তা বলে পরিচয় দিয়ে দাবি করেছিলেন, ৩১ ডিসেম্বরের পরেও তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের তরফে পুরনো নোটে এক কোটি টাকা পর্যন্ত বদলাতে পারেন। পরে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ওই দাবি ঠিক নয়।
তখন থেকেই নজরদারি বাড়ান গোয়েন্দারা। সেই সূত্র ধরে সোমবার সাফল্য মিলেছে বস্ত্র ব্যবসায়ী অশোক সুরানার ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে। গোয়েন্দারা জানান, ওই ব্যবসায়ী-সহ চার জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে ব্যাঙ্কের এক আধিকারিকও আছেন। তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। সেটা কেন?
কলকাতা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দা-প্রধান বিশাল গর্গ এ দিন শুধু বলেন, ‘‘জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’’ যদিও নিয়মানুযায়ী, বাতিল নোট এখন কারও কাছে পাওয়া গেলে (তার উপরে এত বেশি পরিমাণে) তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। সেটা এ ক্ষেত্রে হয়নি। তবে ৩ মার্চ চিৎপুরের এক আইনজীবীর গাড়ি থেকে বাতিল হওয়া নোটে ৬৪ লক্ষ টাকা উদ্ধার হলে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
লালবাজারের একটি সূত্রের খবর, এই ঘটনার সূত্র ধরে নোট-চক্রের শিকড়ে পৌঁছনোর চেষ্টা চলছে। তাই আটঘাট বেঁধে নামছেন তদন্তকারীরা। ওই গোয়েন্দা-কর্তার কথায়, ‘‘বাতিল নোট বদলে নতুন নোট পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়ই কিছু আশ্বাস পাওয়া গিয়েছিল। কিছু ক্ষেত্রে বদলে দেওয়াও হয়েছে। সেই আশ্বাস কারা দিল, কী ভাবেই বা তারা অচল নোট বদলে দিতে পারছে, সেটাই জানতে হবে।’’