অকুস্থলে: তদন্তে পুলিশের ফরেন্সিক দল। শুক্রবার, টালায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
শহরে ফের এক বৃদ্ধার উপরে হামলা চালিয়ে লুটপাটের ঘটনা ঘটল। বৃহস্পতিবার রাতে টালা থানা থেকে মেরেকেটে একশো মিটার দূরত্বের মধ্যে। সঙ্কটজনক অবস্থায় জখম ওই বৃদ্ধাকে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে টালা জলাধার সংলগ্ন খেলাতবাবু লেনে। ওই বৃদ্ধার নাম পদ্মা মণ্ডল (৭৩)। শুক্রবার রাত পর্যন্ত পুলিশ এই ঘটনার কোনও কিনারা করতে পারেনি।
পুলিশ সূত্রের খবর, তেতলা বাড়ির নীচের তলায় থাকতেন ওই বৃদ্ধা। স্বামী আগেই প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে আছেন। ছেলে সোনারপুরে থাকেন। মেয়ে ও জামাই পদ্মাদেবীর সঙ্গেই থাকতেন। কালীপুজো উপলক্ষে ওই রাতেই স্বামী সুনীল সাউকে নিয়ে উল্টোডাঙায় শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন বৃদ্ধার মেয়ে নিবেদিতা সাউ। পুলিশকে তাঁরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত এগারোটা নাগাদ মাকে খাবার খাইয়ে বাইরে থেকে তালা দিয়ে উল্টোডাঙার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন।
তদন্তকারীরা জানান, শুক্রবার সকাল ন’টা নাগাদ খেলাতবাবু লেনে শাশুড়িকে দেখতে আসেন সুনীল। দেখেন, লোহার গেটের ভাঙা তালা নীচে পড়ে রয়েছে। সেই গেট খুলে ভেজানো কাঠের দরজা ঠেলতেই দেখেন, শাশুড়ি অচৈতন্য হয়ে পড়ে রয়েছেন। বিছানা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। বাঁ দিকের কান ও নাক দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। খবর পেয়ে পুলিশ আহত বৃদ্ধাকে প্রথমে শ্যামবাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, লুটের উদ্দেশ্যেই খুনের চেষ্টা করা হয়েছিল। ঘটনাস্থলে ছিল একাধিক দুষ্কৃতী। বৃদ্ধা যে ঘরে ছিলেন, সেখানকার আলমারি খোলা এবং ঘর লন্ডভন্ড ছিল। বৃদ্ধার গায়ে একাধিক সোনার গয়না ছিল। সেই গয়না ছাড়াও অনেক জিনিস উধাও। শুক্রবার লালবাজার থেকে হোমিসাইড, ডাকাতি দমন এবং চুরি দমন শাখার আধিকারিকেরা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন। আসে ফরেন্সিক দলও। এটি স্রেফ লুটের ঘটনা, না কি লুট করে খুন করার পরিকল্পনা ছিল, সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় পুলিশ। তবে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, আঘাতের ধরন দেখে মনে করা হচ্ছে, ভোঁতা অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। তদন্তকারীদের অনুমান, গভীর রাতে বাইরের তালা ভেঙে ঢোকার সময়ে বৃদ্ধার ঘুম ভেঙে যাওয়ায় তাঁকে খুন করারই পরিকল্পনা করে দুষ্কৃতীরা। হামলায় বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন ধরে নিয়েই লুটপাট চালিয়ে পালায় তারা।
গত সোমবার রাতে শেক্সপিয়র সরণির বহুতল আবাসনে খুন হয়েছিলেন এক বৃদ্ধা। তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুনের পরে একাধিক গয়না লুট করেছিল ওই পরিবারের প্রাক্তন গাড়িচালক। সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে ধরলেও তদন্ত চলছে। তারই মধ্যে ফের লুট করে বৃদ্ধাকে খুনের চেষ্টায় প্রবীণদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। খেলাতবাবু লেনের বাসিন্দারা জানান, বছর দেড়েক আগেই পদ্মাদেবীদের পাশের বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছিল। ফলে আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারাও।
বৃদ্ধার বেয়ান শান্তা সাউ বলেন, ‘‘দেড় বছর আগে একটি মেয়ে এই বাড়িতে কাজ করত। কোভিডের জন্য তাকে আসতে বারণ করা হয়। বেয়ান শারীরিক ভাবে অক্ষম ছিলেন। কাজকর্ম করতে পারতেন না। বৌমা-ছেলে তাই সব সময়ে থাকত। কালীপুজোর জন্যই রাতে বাড়ি গিয়েছিল।’’ পুলিশ আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করেছে। মেয়ে, জামাইকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত চলছে। সব তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’