পোয়াবারো : জায়গা দখল করে সংসার এ ভাবেই। নিজস্ব চিত্র
অন্যের জমি দখল করে ঝুপড়ি করে রয়েছে তো কী হয়েছে, এ বার থেকে তাঁদেরকেও পুর পরিষেবা পৌঁছে দেবে কলকাতা পুরসভা। এমনই এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে পুরসভা। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই পুর বাজেটের জবাবি বক্তৃতায় তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন। বুধবার মেয়র জানান, শহরে স্থায়ী আবাস নেই যাঁদের, তেমন অনেকেই খালি, পরিত্যক্ত জমিতে টালির ঘর বা ঝুপড়ি করে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন। তাঁদের ন্যূনতম পরিষেবা দিতে চায় পুর প্রশাসন। এ বিষয়ে শীঘ্রই রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাবে পুরসভা। তা অনুমোদন হলেই কলকাতায় যত্রতত্র বসে থাকা ঝুপড়িবাসীরা পুরসভা থেকে জল, আলোর সংযোগ, নিকাশি পরিষেবা সবই পাবেন।
শহরের খালি থাকা জমির বেশির ভাগই কোনও না কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থার। কোনওটি রেলের, কোনওটি বন্দরের, কোনওটি আবার দেবত্র। প্রশ্ন উঠছে, ওই সব সংস্থার ফাঁকা জায়গায় যাঁরা বসে আছেন, তাঁরা কি দখলদারির কাজে উৎসাহ পাবেন না?
শোভনবাবু বলেন, ‘‘কার জায়গা খালি পড়ে আছে তা আমরা জানি না। আমরা কেবল দেখব ওই জায়গায় কত জন আশ্রয়সম্বলহীন, অসহায় মানুষ জন রয়েছেন। তাঁরা তো কলকাতারই বাসিন্দা। ওই সব মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা তো রয়েছে পুরসভার। মানবিক কারণেই তাঁদের পানীয় জল, নিকাশির ব্যবস্থা, জঞ্জাল অপসারণের ভার নিতে চায় পুরসভা।’’
আরও পড়ুন: বক্তৃতার মধ্যেই নবান্নের ফোন
কেন এই সিদ্ধান্ত?
পুরসভা সূত্রের খবর, মাস খানেক আগে উত্তর কলকাতার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে খালি পড়ে থাকা রেলের একটি মাঠে গড়ে ওঠা সুভাষ কলোনিতে আগুন লাগে। তাতে মারা যায় এক পড়ুয়া। তখন প্রশ্ন উঠেছিল, বেআইনি দখলদারদের জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থা করে তাঁদের উৎসাহ দিয়েছে পুরসভা। ওই অভিযোগ উঠেছিল রেলের পক্ষ থেকে। পাল্টা অভিযোগে পুরসভার যুক্তি ছিল, মানুষ বাস করবে, অথচ খাবার জল দেওয়া হবে না, তা হতে পারে না। ওই ঘটনায় পুরসভা এবং রেলের মধ্যে ঠান্ডা লড়াইও চলে।
এ বার তাঁদের ন্যূনতম পুর পরিষেবা দেওয়ার বিষয়টি পাকাপাকি করতে চায় পুরসভা। মেয়র জানান, শহরের যে সব জায়গায় ওই ধরনের বাসিন্দা রয়েছেন তাঁদের প্রত্যেকের কাছে পরিষেবা দেওয়া হবে।
কী পরিষেবা পাবেন তাঁরা? মেয়র জানান, বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম যে পরিষেবা তাই দেওয়া হবে। পানীয় জল, নিকাশির ব্যবস্থা, জঞ্জাল অপসারণ এবং আলো। কিন্তু আলো দিতে হলে তো বাতিস্তম্ভ বসাতে হবে। যে জমি পুরসভার নয়, তাতে বাতিস্তম্ভ বসানোর অধিকার পুরসভার নেই। মেয়র অবশ্য বলেন, ‘‘অন্যের জমিতে জোর করে পুরসভা খুঁটি পুঁতবে না।’’ তা হলে? মেয়র জানান, কী ভাবে আলো দেওয়া যায় তা-ও ভাবা আছে। সময়েই তা সকলে দেখতে পাবেন।