কলকাতা মেট্রোয় পরিষেবা শুরু করেছে চিন থেকে আসা ডালিয়ান রেক। ফাইল ছবি।
দীর্ঘ চার বছরের অপেক্ষার শেষ হয়েছিল গত মার্চের মাঝামাঝি। তখন থেকেই কলকাতা মেট্রোয় পরিষেবা শুরু করেছে চিন থেকে আসা ডালিয়ান রেক। চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি থেকে আসা রেকগুলির তুলনায় প্রযুক্তিগত ভাবে এগিয়ে রয়েছে ডালিয়ান সংস্থার তৈরি এই রেক। যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যেও ওই রেক কয়েক ধাপ এগিয়ে বলে জানাচ্ছেন মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ।
পর্যায়ক্রমে ৩২ দফা পরীক্ষা চলেছে গত চার বছর ধরে। তার পরেই রেলের গবেষণা এবং মানক সংস্থা রিসার্চ ডিজ়াইন অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অর্গানাইজেশন (আরডিএসও) ওই রেক ব্যবহারের ছাড়পত্র দেয়। বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল খতিয়ে দেখে তা সন্তোষজনক মনে হওয়ায় ছাড়পত্র মিলেছে বলে মেট্রো সূত্রের খবর। যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য এবং সুরক্ষার মাপকাঠিতে চিনা সংস্থার রেক এগিয়ে থাকলেও ভবিষ্যতের কথা ভেবে ওই রেকে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য যোগ করার সুপারিশ করেছে আরডিএসও।
কয়েক মাসের মধ্যে আরও চারটি রেক চিন থেকে জাহাজে কলকাতায় পৌঁছতে পারে। মেট্রো সূত্রের খবর, ওই চারটি রেক তৈরি হয়ে গিয়েছে। সেগুলি খতিয়ে দেখবে আরডিএসও। তারা সম্মতি দিলে সেগুলি আনা হবে।
বর্তমান লাল-নীল রঙের রেকগুলির তুলনায় নতুন চিনা রেকে ৪০৮ জন পর্যন্ত বেশি যাত্রী পরিবহণ করা যায়। চিনা রেকের দরজা ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেকের তুলনায় প্রায় ১০০ মিলিমিটার বেশি চওড়া। ওই রেকে সফরের স্বাচ্ছন্দ্য সূচক (রাইডিং ইনডেক্স) ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার গতিতে ছোটার সময় ২.৫ হওয়ায় যাত্রীরা সে ভাবে দুলুনি অনুভব করেন না। এই সূচক যত কম হবে, ততই সফর আরামদায়ক হবে বলে জানাচ্ছেন ইঞ্জিনিয়ারেরা। তীব্র গতিতে ছোটার সময়ে যাত্রীর শরীরে রেক কী প্রভাব ফেলছে, তা পরিমাপ করেই ওই সূচক নির্ধারিত হয়।
তবে, ভবিষ্যতের কথা ভেবে ওই রেকে একাধিক বৈশিষ্ট্য যোগ করার কথা জানিয়েছে আরডিএসও। তাদের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ট্রেনের বাইরে সিসি ক্যামেরা বসাতে। যাতে প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের ওঠানামা নজরে রাখা যায়। ‘বন্দে ভারত’ এক্সপ্রেসে কোচের দু’পাশে দু’টি করে মোট চারটি ক্যামেরা রয়েছে। মেট্রোর রেকেও ওই ধাঁচে দু’পাশে ক্যামেরা বসানোর সুপারিশ করা হয়েছে। কামরায় যাত্রীদের দাঁড়ানো এবং বসার জায়গায় ধোঁয়া এবং আগুনের অস্তিত্ব বুঝতে পারার ক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্র বসানোর কথা বলা হয়েছে। সব বৈদ্যুতিক প্যানেলের ভিতর বিশেষ বায়বীয় রাসায়নিক নির্ভর অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যাত্রী এবং চালকের কথোপকথন রেকর্ড করতে ভয়েস লগার রাখারও প্রস্তাব আছে। চালকের কক্ষে ‘ভিজিল্যান্স কন্ট্রোল ডিভাইস’ (চালক কোথাও ভুল করছেন কি না, বা সিগন্যাল উপেক্ষা করছেন কি না, তার হদিস দেবে ওই যন্ত্র।) বসানোর কথাও বলা হয়েছে। ভারতীয় রেলের ইঞ্জিনে এখন সুরক্ষার জায়গা থেকে এই ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক হয়েছে। বিমানের ব্ল্যাক বক্সের ধাঁচে চালকের স্বর এবং ভিডিয়ো রেকর্ড করার ব্যবস্থার কথাও প্রস্তাবে রয়েছে। আপৎকালীন দরজা বন্ধ থাকার সূচক বসানোর কথাও রয়েছে ওই রেকে।
মেট্রো সূত্রের খবর, ভবিষ্যতে যে সব রেক আসবে, সেখানে পর্যায়ক্রমে ওই সব ব্যবস্থা যোগ করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।