Boy

Health: ছেলের চিকিৎসায় পুজো কমিটির কাছে সাহায্য চেয়েও নিরাশ হলেন মা

বাবার মৃত্যুর পরে সপ্তাংশুর শারীরিক অবস্থার বেশ কিছুটা অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবার। গলার অংশও বেঁকে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২২ ০৭:০৪
Share:

সপ্তাংশু ঘোষ।

বলা হয়, এ শহরের প্রাণ আছে। কিন্তু আদৌ কি তাই? না-হলে ছেলের চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়েও কেন নিরাশ হতে হয় বছর তেরোর সপ্তাংশু ঘোষের মাকে?

Advertisement

স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি (এসএমএ টাইপ টু) আক্রান্ত সপ্তাংশুর মেরুদণ্ডের বিশেষ অস্ত্রোপচারে (স্কোলিয়োসিস কারেকশন) সব মিলিয়ে লাগবে ১৫ লক্ষ টাকা। সেই সঙ্গে বিশেষ ক্ষমতার হুইলচেয়ারের জন্য প্রয়োজন আরও দু’লক্ষ। এখনও পর্যন্ত এই ১৭ লক্ষের প্রায় অর্ধেকই জোগাড় করা সম্ভব হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে এক লক্ষ টাকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতিও। কিন্তু বাকি আট লক্ষ টাকা জোগাড় হবে কী ভাবে? জানা নেই সপ্তাংশুর মা সোমা ঘোষের। বাকি টাকার সাহায্য চেয়ে ইতিমধ্যেই শহরের প্রসিদ্ধ পুজো কমিটিগুলির দুয়ার থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে এক মাকে।

সপ্তাংশুর চিকিৎসার সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন পাইকপাড়ার একটি আবাসনের বাসিন্দা সুমনা সেন গুঁই। সোমার বন্ধু সুমনা তাঁর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে ৩১ জুলাই, রবিবার সন্ধ্যায় বাগবাজারের ফণীভূষণ বিদ্যাবিনোদ যাত্রামঞ্চে একটি লোকসঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। সেই অনুষ্ঠানের টিকিট বিক্রি করে যে টাকা উঠবে, তার সবটাই তুলে দেওয়া হবে সপ্তাংশুর জন্য। এখনও পর্যন্ত সেই অনুষ্ঠানের ৪০০টি টিকিট বিক্রি হয়েছে বলে খবর। আরও ৪০০টি টিকিট অবিক্রীত রয়েছে। সুমনার কথায়, ‘‘যদি সব টিকিট বিক্রি হয়েও যায়, তা হলে অনুষ্ঠান থেকে উঠবে মাত্র দু’লক্ষ টাকা। সেই দু’লক্ষ ধরেই সপ্তাংশুর জন্য মোট আট লক্ষ টাকা এখনও পর্যন্ত জোগাড় করা সম্ভব হয়েছে।’’

Advertisement

ছোট থেকেই উঠে দাঁড়াতে পারে না সপ্তাংশু। বেলঘরিয়ার দীননাথ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাসিন্দা এই কিশোর এখন বেঁচে তার মাকে আঁকড়েই। বাবা মারা গিয়েছেন গত বছর। সপ্তাংশুর যখন দু’বছর বয়স, তখনই চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন অসুখের কথা। শুরু হয়েছিল বাবা-মায়ের অন্য লড়াই। কয়েকটি স্কুল ফিরিয়ে দেওয়ার পরে বেলঘরিয়ার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল তাকে ভর্তি নেয়। কষ্ট করে হলেও হুইলচেয়ারে বসেই সপ্তাংশু ক্লাস করত।

সপ্তাংশুর বাবা বরুণপ্রসাদ ঘোষ বহু কাঠখড় পুড়িয়ে চিকিৎসকের সহায়তায় বিনামূল্যে ছেলের ওষুধের ব্যবস্থা করেছিলেন। বিরল রোগের জন্য নির্দিষ্ট বিদেশি সংস্থার সেই ওষুধ বর্তমানে চলছে কিশোরের। জিনঘটিত এই রোগ ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয় পেশির সঙ্কোচন-প্রসারণের ক্ষমতা। ফলে শরীরের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়। পঙ্গু হওয়ার পাশাপাশি শরীর ক্রমেই কুঁকড়ে যায়। সেই সমস্যা রুখে দিতে জরুরি অস্ত্রোপচার। সপ্তাংশুর ক্ষেত্রে স্কোলিয়োসিস কারেকশন নামে সেই অস্ত্রোপচার যত দ্রুত সম্ভব করতে পরামর্শ দিচ্ছেন তার চিকিৎসকেরা।

ওই অস্ত্রোপচার এবং বিশেষ ক্ষমতার হুইলচেয়ারের সাহায্যেই সপ্তাংশুর দুমড়ে যাওয়া শরীরটা কিছুটা ঠিক হতে পারে। বাবার মৃত্যুর পরে সপ্তাংশুর শারীরিক অবস্থার বেশ কিছুটা অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবার। গলার অংশও বেঁকে গিয়েছে। টানা আধ ঘণ্টা বসে থাকাও কষ্টকর সপ্তাংশুর পক্ষে। এ দিকে রেলকর্মী বরুণের মৃত্যুর পরে তাঁর চাকরি এখনও পাননি স্ত্রী সোমা। আপাতত সামান্য পুঁজি ভেঙেই গত এক বছর ধরে সংসার চলছে মা-ছেলের।

শেষ আশা হিসাবে চিকিৎসার বাকি আট লক্ষ টাকার সাহায্য চাইতে উত্তর কলকাতার কয়েকটি নামী পুজো কমিটির দ্বারস্থ হয়েছিলেন সোমা। কিন্তু পুজো কমিটিগুলির তরফে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আসন্ন দুর্গাপুজোর ব্যস্ততা তুঙ্গে। তাই আপাতত এ নিয়ে ভাবা যাচ্ছে না। সোমার কথায়, ‘‘কিন্তু আমাদের হাতে আর সময় নেই। তাই ছেলের অস্ত্রোপচার আদৌ করতে পারব কি না, সেটাই বুঝতে পারছি না। ওর বাবা তো ছেলের ওষুধের ব্যবস্থা করে গিয়েছেন, আমি মা হয়ে বাকি কাজটা করতে পারব না?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement