ফাইল চিত্র।
পরীক্ষা নিয়ে দ্রুত পাঠ্যক্রম শেষ করানোটাই ‘পাখির চোখ’? না কি সামাজিক দূরত্ব-বিধি মেনে, কম সংখ্যক পড়ুয়া নিয়ে ক্লাস করানোটাই আগে— প্রায় দু’মাস গরমের ছুটি কাটিয়ে স্কুল খোলার পরে কোন পথে হাঁটছেন স্কুল কর্তৃপক্ষেরা? শহরের বেশ কিছু স্কুলের কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, গরমের ছুটির পরে দু’দিন ক্লাসে যে ভাবে পড়ুয়াদের মধ্যে পড়াশোনায় উৎসাহ দেখা গিয়েছে, তাতে আপাতত বিধি পালন নয়, বরং দ্রুত পাঠ্যক্রম শেষ করার দিকেই নজর দেওয়া হচ্ছে।
অতিমারি-পর্বে টানা দু’বছর বন্ধ থাকার মধ্যেই দু’বার খুলেছিল স্কুল। সে সময়ে শিক্ষা দফতর জানিয়েছিল, সামাজিক দূরত্ব-বিধি মেনে ক্লাসে বসাতে হবে পড়ুয়াদের। প্রয়োজনে পড়ুয়াদের ভাগাভাগি করে স্কুলে আসতে বলতে হবে। শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকায় এখনও স্কুলে মাস্ক-স্যানিটাইজ়ারের ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব মানার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে প্রতিটি স্কুলেই পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার প্রায় ৯০ শতাংশ। ফলে ক্লাসে পড়ুয়াদের বসানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব-বিধি মানা যাচ্ছে না কিছুতেই। কলকাতার কয়েকটি স্কুল, যেমন যোধপুর পার্ক বয়েজ়, মিত্র ইনস্টিটিউশন (ভবানীপুর শাখা), বেলতলা গার্লস স্কুল জানাচ্ছে, ক্লাসে উপস্থিত পড়ুয়াদের সংখ্যার নিরিখে করোনা-বিধি মানতে গেলে প্রয়োজন দ্বিগুণ সংখ্যক ক্লাসঘরের, আরও শিক্ষক-শিক্ষিকার— যার কোনওটারই পরিকাঠামো এখন নেই। ফলে বেঞ্চে আগের মতোই পাশাপাশি বসে ক্লাস করছে পড়ুয়ারা।
বেলতলা গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অজন্তা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রথম পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন শুরু হচ্ছে বলে প্রায় সব ছাত্রী স্কুলে আসছে। এখন সামাজিক দূরত্ব-বিধি মেনে বসানো কঠিন। যদিও মাস্ক-স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করার কথা আমরা বলছি।’’
তবে স্কুলের ভিতরে ঢুকে সর্বক্ষণ মুখে মাস্ক দিয়ে রাখার নির্দেশ অনেক পড়ুয়াই মানতে পারছে না বলে কার্যত স্বীকার করছেন মিত্র ইনস্টিটিউশনের ভবানীপুর শাখার প্রধান শিক্ষক রাজা দে। তিনি বলেন, ‘‘ছোট পড়ুয়ারা সর্বক্ষণ মাস্ক পরতে পারছে না। তাদের মাস্ক পরার কথা বললেও টিফিনের সময়ে হুটোপাটি করে খেলাধুলোর সময়ে মুখে মাস্ক থাকছে না। এটাই বাস্তব।’’
শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষও মনে করেন, স্কুলে গিয়ে সব সময়ে ঠিক ভাবে করোনা-বিধি মেনে চলা সম্ভব নয়। তাঁর মতে, ‘‘সামাজিক দূরত্ব-বিধি মেনে ক্লাসে বসানো সম্ভব নয়। তবে যতটা সম্ভব স্কুলে মাস্ক-স্যানিটাইজ়ারের ব্যবহার করা যেতে পারে। শিক্ষকেরা এটা নজরে রাখুন। খুদে পড়ুয়াদের করোনা কম হচ্ছে, হলেও তা খুব গুরুতর নয়। অভিভাবকদেরও সকলেরই প্রতিষেধক নেওয়া আছে। তাই খুব ভয়ের কিছু নেই। এখন স্কুলে পঠনপাঠন হওয়াটা জরুরি। স্কুল যাওয়ার অভ্যাসটা গত দু’বছরে অনেকটাই চলে গিয়েছিল। সেটা আবার ফিরিয়ে আনা দরকার।’’