কলকাতা ডার্বির একটি মুহূর্ত। —ফাইল চিত্র।
আইএসএলের ফিরতি ডার্বিতে শনিবার মুখোমুখি দুই প্রধান। কলকাতার বদলে গুয়াহাটির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে খেলতে নামবে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল। পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাগান। লাল-হলুদ রয়েছে ১১ নম্বরে। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে দুই দলের অনেক তফাত থাকলেও ডার্বিতে কোনও একটি দলকে এগিয়ে রাখা যায় না। সেই দিন যে দল ভাল খেলে তারা জেতে। ডার্বির আগে কোথায় রয়েছে দুই দল। কেমন পারফরম্যান্স মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের প্রথম একাদশের। জানাল আনন্দবাজার অনলাইন।
আইএসএলের প্রথম ১৪টি ম্যাচের নিরিখে দুই দলের প্রথম একাদশের প্রত্যেক ফুটবলারকে ১০-এর মধ্যে নম্বর দেওয়া হয়েছে। তাতে মোহনবাগান পেয়েছে মোট ৭৩। ইস্টবেঙ্গল ৬৪। অর্থাৎ, বাগানের পাল্লা ভারী থাকলেও খুব বেশি পিছিয়ে নেই লাল-হলুদ।
মোহনবাগান:
বিশাল কাইথ (গোলরক্ষক, ৮)— ১৪টি ম্যাচেই খেলেছেন। তেকাঠির নীচে দলকে বার বার ভরসা দেন তিনি। গত বার সোনার গ্লাভস পেয়েছিলেন। এ বারও সেই ট্রফির দাবিদার তিনি। ১৪টি ম্যাচের মধ্যে সাতটি ম্যাচে গোল খাননি তিনি। করেছেন ৫১টি সেভ। তাই বিশাল পাচ্ছেন ১০-এর মধ্যে ৮।
আলবের্তো রদ্রিগেস (ডিফেন্ডার, ৭)— এই মরসুমে বাগানের হয়ে ১১টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ১০টি ট্যাকল করেছেন। গোল বাঁচানোর পাশাপাশি গোল করার ক্ষেত্রে মুন্সিয়ানা রয়েছেন রদ্রিগেসের। বাগানের হয়ে চারটি গোল করেছেন তিনি। দ্বিতীয় সর্বাধিক গোলদাতা এই দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডার। একটি অ্যাসিস্টও রয়েছে তাঁর। তাই ডার্বির আগেই ১০-এ ৭ পাচ্ছেন তিনি।
টম অলড্রেড (ডিফেন্ডার, ৬)— ১৪টি ম্যাচেই খেলেছেন। আলবের্তোর সঙ্গে তাঁর জুটি বেশ ভাল। ছ’টি ট্যাকল করেছেন। পাশাপাশি একটি গোলও করেছেন। সেট পিসের ক্ষেত্রে আলবের্তোর পাশাপাশি অলড্রেডও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি পাচ্ছেন ১০-এ ৬।
শুভাশিস বসু (ডিফেন্ডার, ৬)— দলের অধিনায়ক। ১৩টি ম্যাচ খেলেছেন। ট্যাকল করেছেন ৩২টি। একটি গোলের অ্যাসিস্টও রয়েছে তাঁর। কিন্তু শুভাশিসের দুর্বলতা রয়েছে। তাঁর গতি খুব কম। ফলে তাঁর দিক থেকেই আক্রমণ বেশি হয়। আক্রমণে উঠে গেলে নামতে পারেন না। তাই ১০-এ ৬ পাবেন তিনি।
আশিস রাই (ডিফেন্ডার, ৫)— ১৩টি ম্যাচে ২২টি ট্যাকল করেছেন। গোলে দু’টি অ্যাসিস্টও রয়েছে। কিন্তু ধারাবাহিকতা নেই। এমন কিছু ভুল করেন যা দলকে চাপে ফেলে দেয়। দৈহিক উচ্চতা কম হওয়ায় হেডে সমস্যা হয়। ডার্বির আগে ১০-এ ৫ পাচ্ছেন তিনি।
মনবীর সিংহ (মিডফিল্ডার, ৬)— ১৩টি ম্যাচে তিনটি গোল করেছেন। তিনটি অ্যাসিস্টও রয়েছে। তাঁর গতি সমস্যায় ফেলে প্রতিপক্ষকে। বাঁ পা খুব ভাল। তবে মনবীরেরও ধারাবাহিকতার সমস্যা রয়েছে। কোনও ম্যাচে খুব ভাল খেলেন। কোনও ম্যাচে আবার খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই ১০-এ ৬ পাচ্ছেন তিনি।
গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
লালেংমাওয়াইয়া রালতে (মিডফিল্ডার, ৭)— আপুইয়া নামেই বেশি পরিচিত এই মিডফিল্ডার। মূলত বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার তিনি। নিজের জায়গা ছেড়ে খুব একটা ওঠেন না। ফলে গোল করতে পারেননি। তবে মরসুমের ১২টি ম্যাচেই ভাল দেখিয়েছে তাঁকে। কোচ যে দায়িত্ব দেন তা ভাল ভাবে পালন করেন তিনি। আপুইয়া ১০-এ পাচ্ছেন ৭।
সাহাল আব্দুল সামাদ (মিডফিল্ডার, ৬)— চলতি মরসুমে ১৩টি ম্যাচ খেলেছেন। একটিও গোল করেননি। তবে একটি গোলে অ্যাসিস্ট রয়েছে তাঁর। গতি রয়েছে। ভাল ক্রস দিতে পারেন। ১০-এ তিনি পাচ্ছেন ৬।
লিস্টন কোলাসো (মিডফিল্ডার, ৭)— ১৪টি ম্যাচে দু’টি গোল করেছেন। লিস্টনের সবচেয়ে বড় শক্তি তাঁর গতি। প্রান্ত ধরে খেলেন। ডিফেন্ডারকে চমক দিকে পারেন। তবে তাঁর সমস্যাও রয়েছে। কখন বল ছাড়তে হবে, কখন শট মারতে হবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময় ভুল করেন। তাই ১০-এ ৭ পাচ্ছেন তিনি।
গ্রেগ স্টুয়ার্ট (মিডফিল্ডার, ৮)— চোটের জন্য শেষ কয়েকটি ম্যাচে খেলেননি। যে ৯টি ম্যাচ খেলেছেন, তাতেই নিজের জাত চিনিয়েছেন। একটি গোল করেছেন। পাঁচটি গোল করিয়েছেন। তিনি মূলত স্ট্রাইকারের পিছনে প্লে-মেকারের ভূমিকায় থাকেন। দু’টি পা সমান চলে। ডার্বিতে তাঁকে খেলাবেন বাগান কোচ। তার আগে ১০-এ ৮ পাচ্ছেন তিনি।
জেমি ম্যাকলারেন (ফরোয়ার্ড, ৭)— এই মরসুমেই বাগানে এসেছেন। ১৩টি ম্যাচে পাঁচটি গোল করেছেন। বাগানের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। একটি গোল করিয়েছেন। পারফেক্ট বক্স স্ট্রাইকার এই অস্ট্রেলীয়। ঠিক জায়গায় থাকেন। গোল ভাল চেনেন। তাই ১০-এ ৭ পাচ্ছেন তিনি।
মোহনবাগানের হয়ে দিমিত্রি পেত্রাতোসের দু’টি গোল ও তিনটি অ্যাসিস্ট রয়েছে। জেসন কামিন্সেরও চারটি গোল ও একটি অ্যাসিস্ট রয়েছে। কামিন্স মূলত পরিবর্ত হিসাবে খেলেন। পেত্রাতোস চোট পাওয়ায় ডার্বিতে তাঁকে পরিবর্ত হিসাবেই খেলাবেন কোচ হোসে মোলিনা। তাই এই তালিকায় তাঁরা নেই।
ইস্টবেঙ্গল:
প্রভসুখন গিল (গোলরক্ষক, ৫)— মরসুমে ১২টি ম্যাচ খেলেছেন। ৩৩টি সেভ করেছেন তিনি। চারটি ম্যাচে গোল খাননি তিনি। কিন্তু পাশাপাশি কয়েকটি খারাপ গোলও খেয়েছেন গিল। তাঁর আউটিংয়ে সমস্যা রয়েছে। ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেন না। ১০-এ ৫ পাচ্ছেন তিনি।
মহম্মদ রাকিপ (ডিফেন্ডার, ৫)— ১০টি ম্যাচ খেলেছেন। ১৭টি ট্যাকল করেছেন। তবে অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। বড় ম্যাচে অনেক সময় ভুল করে বসেন। তার খেসারত দিতে হয় দলকে। তিনিও ১০-এ ৫ পাচ্ছেন।
হেক্টর ইয়ুস্তে (ডিফেন্ডার, ৬)— দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার। ১০টি ম্যাচে ন’টি ট্যাকল করেছেন। একটি গোলের অ্যাসিস্টও রয়েছে। গোললাইন সেভ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে বয়সের ভারে গতি কম। ১০-এ ৬ পাচ্ছেন তিনি।
আনোয়ার আলি (ডিফেন্ডার, ৭)— মোহনবাগান থেকে ইস্টবেঙ্গলে যাওয়ার পর ভরসা দিচ্ছেন আনোয়ার। বেশ কয়েকটি ম্যাচে দলের পতন রোধ করেছেন। ১৩টি ম্যাচে ১২টি ট্যাকল করেছেন তিনি। পাশাপাশি দূরপাল্লার শটও মারতে পারেন। তিনি ১০-এ ৭ পাচ্ছেন। তবে ডার্বিতে খেলা নিয়ে আনোয়ারের সংশয় রয়েছে। চোট পেয়েছেন তিনি। তাঁকে খেলানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে লাল-হলুদ।
লালচুংনুঙ্গা (ডিফেন্ডার, ৫)— ১১টি ম্যাচে ১৯টি ট্যাকল করেছেন তিনি। আক্রমণেও ওঠেন। তবে লালচুংনুঙ্গার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা তাঁর মাথা গরম করার প্রবণতা। চলতি মরসুমে দু’বার লাল কার্ড দেখেছেন তিনি। তাতে দল সমস্যায় পড়েছে। ফলে ১০-এ ৫ পাচ্ছেন তিনি।
গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
শৌভিক চক্রবর্তী (মিডফিল্ডার, ৭)— নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়। ১৩টি ম্যাচ খেলেছেন। তাঁর প্রধান কাজ ডিফেন্ডারদের সামনে খেলা। রক্ষণ ও মাঝমাঠের মাঠে একটি জায়গায় খেলেন তিনি। কোচ যা দায়িত্ব দিয়েছেন তা পালন করেন শৌভিক। ডার্বির আগে তাই ১০-এ ৭ পাচ্ছেন তিনি।
জিকসন সিংহ (মিডফিল্ডার, ৬)— ১১টি ম্যাচ খেলেছেন। দু’টি গোল করেছেন। দীর্ঘদেহী ফুটবলার হেডে গোল করতে পারেন। শৌভিকের পাশে তাঁকেও খেলান কোচ। তবে অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে জিকসনের। ১০-এ ৬ পাচ্ছেন তিনি।
মহেশ নাওরেম সিংহ (মিডফিল্ডার, ৪)— মরসুমে ১১টি ম্যাচ খেলেছেন। একটিও গোল করতে পারেননি। আগের মহেশকে এখন খুঁজে পাওয়া যায় না। যদিও তাঁর অভিজ্ঞতার জন্য ডার্বিতে তাঁর খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ১০-এ ৪ নম্বরের বেশি দেওয়া যাচ্ছে না মহেশকে।
পিভি বিষ্ণু (মিডফিল্ডার, ৭)— ১৩টি ম্যাচে খেলেছেন। তিনটি গোল করেছেন। একটি অ্যাসিস্টও রয়েছে। গতি রয়েছে। পায়ে কাজ রয়েছে। গোলটা ভাল চেনেন। তাই তাঁকে ১০-এ ৭ দেওয়া হয়েছে।
ক্লেটন সিলভা (ফরোয়ার্ড, ৬)— দলের অভিজ্ঞ এই ফরোয়ার্ড ১৪টি ম্যাচে একটিও গোল করতে পারেননি। এ বার মূলত স্ট্রাইকারের পিছনে প্লে-মেকারের ভূমিকায় খেলানো হচ্ছে তাঁকে। একটি গোল করিয়েছেন ক্লেটন। ১০-এ ৬ পাচ্ছেন তিনি।
দিমিত্রিয়স দিয়ামানতাকোস (ফরোয়ার্ড, ৬)— গত বারের সোনার বুটজয়ী ফুটবলার এ বার ফর্মে নেই। ১০টি ম্যাচে তিনটি গোল করেছেন। করিয়েছেন একটি। বেশ কিছু সহজ সুযোগ ফস্কেছেন। তার পরেও গোলের জন্য দিয়ামানতাকোসই ভরসা। ডার্বির আগে ১০-এ ৬ পাচ্ছেন তিনিও।
ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ডেভিড মার তিনটি গোল করলেও তাঁকে মূলত পরিবর্ত হিসাবে খেলানো হয়। তাই এই তালিকায় রাখা হল না তাঁকে।