ঘরে দম্পতির দেহ, চেন ছিঁড়ে দৌড় পোষ্যের 

কুকুরটির এমন অদ্ভুত আচরণ দেখার পরেই ওই বাড়িতে দৌড়ে আসেন প্রতিবেশীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৫৩
Share:

সন্তোষ এবং রূপালি দেবের পোষ্য। তার ডাকাডাকিতেই ওই দম্পতির বাড়িতে দৌড়ে এসেছিলেন প্রতিবেশীরা। ইনসেটে দম্পতি। বুধবার, নুঙ্গিতে। নিজস্ব চিত্র

সন্ধ্যার পরে পাড়ায় ছুটে বেড়াচ্ছিল এলাকারই একটি বাড়ির পোষ্য কুকুরটি। গলায় বাঁধা লম্বা চেন। রাস্তায় লোকজনের সামনে গিয়ে চিৎকার করছিল সে। যেন খুব জরুরি কোনও কথা বলতে চাইছে। চিৎকার করতে করতেই আবার নিজের বাড়ির দিকে ছুটে যাচ্ছিল বারবার।

Advertisement

কুকুরটির এমন অদ্ভুত আচরণ দেখার পরেই ওই বাড়িতে দৌড়ে আসেন প্রতিবেশীরা। পোষ্যটি যে চেন ছিঁড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে, সেটাই জানাতে। তাঁরা দেখেন, ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। অনেক ডাকাডাকির পরেও সাড়াশব্দ না মেলায় জানলা দিয়ে উঁকি মেরে তাঁরা দেখেন, ঘরে ঝুলছে গৃহকর্ত্রীর দেহ। এর পরেই স্থানীয় ক্লাব ও পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ দরজা ভেঙে দেখে, মহিলার পাশে তাঁর স্বামীর দেহও ঝুলছে। পুলিশ জানায়, মৃতদের নাম সন্তোষ দেব (৪৪) ও রূপালি দেব (৩৯)। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটেছে মহেশতলা থানার নুঙ্গির মোল্লাপাড়ায়। পড়শিরা জানান, নিঃসন্তান ওই দম্পতির কাছে তাঁদের পোষ্যটিই ছিল বড় ভরসা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘরের দরজা ভাঙার পরে দেখা যায়, গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় খাটের ছত্রি থেকে ঝুলছেন স্বামী-স্ত্রী। ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোটও মিলেছে। তাতে রূপালি লিখেছেন, বিভিন্ন জায়গায় অনেক টাকা ধার হয়ে গিয়েছিল তাঁদের। পাওনাদারেরা খুব তাগাদা করছিলেন। কিন্তু সেই টাকা ফেরত দেওয়ার সামর্থ্য তাঁদের ছিল না বলেই লিখেছেন রূপালি। প্রতিবেশীদের মতে, মালিক ও মালকিন যে মারা গিয়েছেন, তা বুঝতে পেরেছিল কুকুরটি। সেই কারণেই চেন ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে ওই রকম আচরণ করছিল সে।

Advertisement

সন্তোষবাবুর দাদা দিলীপ দেবের কথায়, ‘‘আমার ভাই তেমন কোনও কাজকর্ম করত না। এটা-ওটা যখন যেমন কাজ পেত করত। আমরা প্রায়ই টাকাপয়সা দিয়ে সাহায্য করতাম। শুনেছি, বাজারে ওদের কয়েক লক্ষ টাকা দেনা হয়ে গিয়েছিল। সেই টাকা শোধ করতে পারছিল না।’’ প্রতিবেশীরা জানান, বেশ কিছু ব্যাঙ্ক ও কয়েকটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন ওই দম্পতি। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর লোকজন সেই টাকার জন্য খুব তাগাদা করছিলেন। টাকা শোধ করার অবস্থা না থাকার কারণেই সম্ভবত ওই দু’জন আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। পুলিশ মৃতদেহ দু’টি বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওই দম্পতিকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। পরে তা ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement