পরীক্ষা: নোয়াপাড়া থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রোর মহড়া দৌড়। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
প্রায় ন’বছরের প্রতীক্ষার অবসান! আর তাই, বুধবার ঘরে বসে থাকতে পারেননি দক্ষিণেশ্বর মন্দির সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা, বৃদ্ধ কাজল ভট্টাচার্য। মেট্রোর মহড়া দেখতে চলে এসেছিলেন নতুন স্টেশনের সামনে। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে সেখানে সাধারণের প্রবেশ এ দিন নিষিদ্ধ ছিল। তাই দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশন লাগোয়া শিয়ালদহ-ডানকুনি শাখার স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে এসে অপেক্ষা করছিলেন তিনি।
কলকাতা মেট্রোর নতুন একটি রেক যখন হর্ন বাজিয়ে ধীর গতিতে দক্ষিণেশ্বর স্টেশনে ঢুকছিল, তখন উচ্ছ্বসিত কাজলবাবু বললেন, ‘‘মেট্রো এক সুতোয় বেঁধে ফেলল
দক্ষিণেশ্বর আর কালীঘাটকে। এমন ঐতিহাসিক দিনে ঘরে বসে থাকতে পারলাম না।’’ তাঁর মতো আরও অনেকেই এ দিন নোয়াপাড়া-দক্ষিণেশ্বর সম্প্রসারিত মেট্রোপথে ট্রেনের মহড়া দৌড় দেখতে হাজির হয়েছিলেন। তাঁরা মোবাইলে তুলে রাখলেন ওই মুহূর্তের ছবি। এ দিন সকাল সাড়ে ১০টার কিছু আগেই নোয়াপাড়ার আপ প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়ায় রেকটি। মোটরম্যান ডি ভট্টাচার্য এবং কন্ডাক্টিং মোটরম্যান সুশান্ত রায় সবুজ পতাকার সঙ্কেত পেয়েই ট্রেন ছোটান।
ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেনটি নোয়াপাড়া থেকে বরাহনগর হয়ে দক্ষিণেশ্বর পৌঁছয়। মেট্রোর চিফ ট্র্যাফিক ইনস্পেক্টর এবং চিফ লোকো ইনস্ট্রাক্টরের তত্ত্বাবধানে মহড়া চলে। মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার মনোজ জোশী-সহ শীর্ষ আধিকারিকেরাও ওই ট্রেনেই দক্ষিণেশ্বর পৌঁছন। সেখানে যাবতীয় ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখেন। বাইরে তখন উত্তেজনার পারদ চড়ছে। ছেলে কুন্দনকে নিয়ে মেট্রোর মহড়া দেখতে এসেছিলেন শাওন চক্রবর্তী। তিনি বললেন, ‘‘আমাদের এলাকা দিয়ে মেট্রো চলবে। এ তো খুবই আনন্দের।’’
আরও পড়ুন: জিনিস ওঠানো, নামানো নিয়ে চিন্তায় উড়ান সংস্থা
আরও পড়ুন: ময়দান নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা, নড়ে বসল লালবাজার
দিনটা তাঁদের কাছেও খুব আনন্দের বলে জানালেন স্থানীয় অটোচালক দেবাশিস বসু। বিজয় প্রামাণিক নামে এক টোটোচালক বললেন, ‘‘কালীঘাট-দক্ষিণেশ্বর জুড়ে যাওয়ায় দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক বাড়বে। লকডাউনে পুরো বসেছিলাম। এ বার আয়ের মুখ দেখার আশা করছি।’’ আশায় রয়েছেন স্কাইওয়াকের দোকানি গোপাল কর্মকার থেকে রাস্তার ধারের হোটেলের মালিক বিজয়ও।
এ দিন সিজার ক্রসিং পেরিয়ে ট্রেনটিকে দক্ষিণেশ্বরের ডাউন প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ফের বরাহনগর হয়ে নোয়াপাড়া ফিরিয়ে আনা হয়। স্বাভাবিক গতি ঘণ্টায় ৫৫ কিলোমিটারের চেয়ে অনেক কম গতিতে ট্রেন ছুটলেও সামগ্রিক মহড়া আশাব্যঞ্জক হয়েছে বলেই জানাচ্ছেন আধিকারিকেরা। মহড়ার রিপোর্ট কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটির কাছে পাঠানো হবে। তিনি সন্তুষ্ট হলে তাঁর কাছে পরিদর্শনের আবেদন জানানো হবে।
মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এ দিন সব কিছুই নির্ঘণ্ট মেনে হয়েছে। কিন্তু ফের কবে মহড়া হবে, তা নির্দিষ্ট হয়নি। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারিতে যাত্রী পরিবহণের জন্য খুলে যাবে ওই পথ। সে দিকেই এখন তাকিয়ে দক্ষিণেশ্বরবাসী।