কালীঘাট স্টেশনে ঢাকা দিয়ে রাখা স্ক্যানার। নিজস্ব চিত্র
কাল, মঙ্গলবার থেকেই শুরু হয়ে যাবে সাধারণের জন্য মেট্রোর দক্ষিণেশ্বর যাত্রা। অর্থাৎ, মেট্রোর যাত্রাপথের বিস্তারের সঙ্গেই বাড়বে যাত্রীর সংখ্যাও। এ সবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কি মেট্রোয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা? এই প্রশ্ন আরও বেশি করে উঠে আসছে সম্প্রতি মু্র্শিদাবাদের নিমতিতা রেল স্টেশনে রাজ্যের শ্রম প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং তাঁর সঙ্গীদের উপরে বোমা হামলার ঘটনার পরে। কিন্তু সপ্তাহান্তের কম ভিড়েও একাধিক মেট্রো স্টেশন ঘুরে দেখা গেল, বাড়তি নিরাপত্তা তো দূর, বরং ঢিলেঢালা নিরাপত্তার ছবিটাই।
একই অভিযোগের সুর উঠল মেট্রোর যাত্রীদের থেকেও। বিভিন্ন স্টেশন ঘুরে দেখা গেল, প্রতিটি স্টেশনে নিরাপত্তারক্ষী থাকলেও যাত্রীর ব্যাগ পরীক্ষাই করা হচ্ছে না। যাত্রীদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ কতটা নিরাপদ, নিরাপত্তার স্বার্থে যা জানা সব থেকে জরুরি। কোনও স্টেশনে স্ক্যানার খারাপ হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন। কোথাও সেটি অজানা কারণে বন্ধ করে রাখা আছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের সামনে দিয়ে ব্যাগ নিয়ে যাত্রীরা চলে গেলেও তা পরীক্ষা করার জন্য এক বারও আটকালেন না নিরাপত্তারক্ষী। কোথাও চালু স্ক্যানারে যাত্রীরা নিজেরাই ব্যাগ দিচ্ছেন, আবার কেউ ব্যাগ স্ক্যান না করিয়েও বিনা বাধায় পেরিয়ে যাচ্ছেন।
দক্ষিণের যতীন দাস পার্ক, রবীন্দ্র সদন, মহানায়ক উত্তমকুমার এবং কবি সুভাষের যেমন এই চিত্র। তেমন একই পরিস্থিতি দমদম, সেন্ট্রাল, চাঁদনি চকের মতো উত্তরের ব্যস্ত স্টেশনগুলিতে।
দমদম মেট্রো স্টেশনে প্ল্যাটফর্মে ঢোকার পথে দু’টি ‘ডোর ফ্রেম মেটাল ডিটেক্টর’ বসানো আছে। যাত্রীদের দাবি, সেটা নামমাত্র। এ দিনও সেখানে দেখা গেল, অধিকাংশ যাত্রী সেটি এড়িয়ে পাশ দিয়ে যাতায়াত করছেন। চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনে কর্তব্যরত আরপিএফ কর্মী জানালেন, স্টেশনের এক দিকে ব্যাগ পরীক্ষার যান্ত্রিক ব্যবস্থাই নেই। কেন? সেই উত্তর নেই কর্তৃপক্ষের কাছেও। অথচ কর্মক্ষেত্র হিসেবে এই স্টেশনের গুরুত্ব যথেষ্ট।
কাজের জন্য প্রতিদিনই মেট্রোয় যাতায়াত করেন নিউ ব্যারাকপুরের গোপাল ভট্টাচার্য। দমদম থেকে ওঠেন। নামেন যতীন দাস পার্ক স্টেশনে। তাঁর কথায়, ‘‘সোম থেকে শনি অফিস যাই মেট্রোয়। দু’টি স্টেশনেই আমার ব্যাগ পরীক্ষা কখনওই করা হয় না। এমন ঢিলেঢালা মনোভাবের জন্য বড় বিপদ হতে পারে।’’ একই অভিযোগ করছেন বেলগাছিয়ার বাসিন্দা এক কলেজ ছাত্রী। তিনি জানান, আজ পর্যন্ত মেট্রোয় তাঁর ব্যাগ পরীক্ষাই হয়নি! ফলে ভারী ব্যাগ নিয়েও বিনা পরীক্ষায় অনায়াসে মেট্রো সফর করে থাকেন তিনি।
তবে খানিকটা আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার ছবি মিলবে কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে। সেখানে নিরাপত্তার কড়াকড়ি বরাবরই। রয়েছে আরপিএফের বাড়তি নজরদারি দলও। তা সত্ত্বেও যাত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কিন্তু সেখানেও রাশ আলগা। ব্যাগ পরীক্ষার মতো জরুরি বিষয় ছেড়ে রাখা হয়েছে যাত্রীদের মর্জির উপরেই! কেন এমন অবস্থা? মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশনের এক নিরাপত্তাকর্মী বললেন, ‘‘এই ব্যাগ পরীক্ষা করা নিয়ে অতীতে কম সমালোচনা তো হয়নি। উপর থেকে যতটা কড়া হওয়ার নির্দেশ আসে, ততটাই আমরা পালন করে থাকি। আনলক-পর্বে নিরাপত্তার কড়াকড়ির চেয়ে করোনা-বিধি পালন নিয়েই বেশি নির্দেশ আসছে।’’
নিরাপত্তার ফাঁকফোকরের বিষয়টি মানতে চাননি মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এমন কোনও খবর নেই। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকেরা সব সময়ে স্টেশন চত্বরে ঘোরাফেরা করেন। স্টেশনের দায়িত্বে থাকা আরপিএফ কর্মীরাও সজাগ দৃষ্টি রাখেন। এই মুহূর্তে কোভিড প্রোটোকল মেনে যে ভাবে যাত্রীদের পরীক্ষা করার কথা, সে ভাবেই বিভিন্ন স্টেশনে নজরদারি চলছে।’’ পাশাপাশি তিনি জানান, মেট্রো ভবন থেকেও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নিরাপত্তার দিকটি দেখা হয়।