ফাইল চিত্র
কোনও স্কুলে সরস্বতী পুজো হলে আলপনা দেওয়ার কাজে মেয়েরা আর বাজার করার দায়িত্বে ছেলেরা— সব সময়ে এমনটাই কেন হবে? স্কুলে ফুটবল মানেই ছেলেদের খেলা আর স্কিপিং মানেই মেয়েদের— এটারই বা কী যুক্তি? স্কুলের বইয়ে বাড়ির সদস্যদের দেখাতে গিয়ে বাবা চাকরি করতে যাচ্ছেন আর মা রান্না করছেন, এমনটাই বা দেখানোর কারণ কী?
স্কুল প্রাঙ্গণে ও স্কুলের পাঠ্যক্রমে লিঙ্গ-পক্ষপাতের এমনই নানা বিষয় উঠে এলে পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগ ও লিঙ্গ-সচেতন নাগরিকত্ব নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনাসভায়। সোমবার ওই আলোচনাসভায় বিভিন্ন জেলার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশাপাশি রাজ্য সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার ও পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীও ছিলেন। আয়োজক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক শর্মিষ্ঠা দত্তগুপ্ত বললেন, ‘‘বেশ কয়েকটি জেলা থেকে আসা শিক্ষক-শিক্ষিকারা এই আলোচনায় অংশ নেন। স্কুলের পাঠ্যক্রমে লিঙ্গ-পক্ষপাত আগের থেকে অনেকটাই কমেছে। কিন্তু আরও কিছু পরিমার্জন করা জরুরি।’’
এ দিন স্কুলপড়ুয়াদের লিঙ্গ-সচেতনতা নিয়ে একটি বইও প্রকাশিত হয়। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মতে, সাহিত্য থেকে শুরু করে বিজ্ঞান বা অঙ্ক— সমস্ত বিষয়ের পাঠ্যক্রমই লিঙ্গ-পক্ষপাতমুক্ত হওয়া প্রয়োজন। আলোচনায় উপস্থিত বিজ্ঞানের এক শিক্ষিকার মতে, একটি ছেলে বা একটি মেয়ে যখন কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের দিকে যায়, তখন তাদের শরীরে হরমোনের কী প্রভাব পড়ে, ক্লাসে তা শেখানো হয়। কিন্তু তৃতীয় লিঙ্গের কোনও মানুষ যখন বড় হয়, তখন তার হরমোনের কী পরিবর্তন হয়, তা এখনও পাঠ্যক্রমে নেই। অথচ, এগুলিও থাকা দরকার। আর এক শিক্ষিকার মতে, স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের নানা প্রশ্ন থাকে। সেই সব প্রশ্ন নিয়ে বিশেষ ক্লাস করা যেতে পারে। এক শিক্ষিকা আবার উদাহরণ দিয়ে জানান, আগেকার অঙ্ক বইতেও লিঙ্গ-বৈষম্যমূলক নানা উদাহরণ থাকত। দেখা যেত, কোনও অঙ্কে বাবার সম্পত্তি ভাগাভাগির ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, ছেলে সম্পত্তি বেশি পাচ্ছে। মেয়ে পাচ্ছে কম।
রাজ্য সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার বলেন, ‘‘এখন পাঠ্যক্রমে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের নানা গৌরবগাথা ও সাহসিকতার কথাও ঢোকানো হচ্ছে। যেমন, মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসটি দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রমে ঢোকানো হয়েছে। রাজ্য সরকারের পাঠ্যক্রম এখন কার্যত লিঙ্গ-পক্ষপাতমুক্ত। তবে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।’’ পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা
আয়োগের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘একটি বোর্ডের সিলেবাসে থাকা বইয়ের ছবিতে দেখেছি, বাবা চাকরি করতে যাচ্ছেন আর মা রান্না করছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পাঠ্যক্রমে এখন আর এমন ছবি দেখা যায় না। আমাদের পাঠ্যক্রমে লিঙ্গ-পক্ষপাত সম্পর্কে আরও সচেতন হতে হবে।’’