medicines

কোভিডের বকেয়া না-পেয়ে বন্ধ ওষুধ সরবরাহ 

গত মে থেকে বিভিন্ন জেলায় কোভিড চিকিৎসার জন্য প্রচুর ওষুধ ও সামগ্রী কিনেছে স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২১ ০২:২৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

কোভিডের চিকিৎসায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের বিপুল বকেয়া নিয়ে অসন্তোষ ক্রমশ বাড়ছে।

Advertisement


গত মে থেকে বিভিন্ন জেলায় কোভিড চিকিৎসার জন্য প্রচুর ওষুধ ও সামগ্রী কিনেছে স্বাস্থ্য দফতর। তার কয়েক কোটি টাকা মেটানো হয়নি বলে ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থাগুলির অভিযোগ। যার জেরে কিছু সংস্থা নতুন বছর থেকে করোনার ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘টানাটানির সংসারে একটু দেরি হতেই পারে। মুহূর্তে সব হয়ে যায় না। একটু অপেক্ষা করতে হয়।’’


করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ২৯টি বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা ভাড়া নিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। সব মিলিয়ে তাদের বিল হয়েছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। সরকার সেই টাকার মাত্র ৩০ শতাংশ মিটিয়েছে বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতাল। বকেয়া মেটানোর আগেই ওই ২৯টি হাসপাতালে বিশেষ অডিটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। তাদের মনে হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে অযৌক্তিক ভাবে বেশি টাকার বিল করেছে বেসরকারি হাসপাতালগুলি! ‘ন্যাশনাল হেল্‌থ মিশন’-এর রাজ্য অধিকর্তা সৌমিত্র মোহনের তরফে জেলায় জেলায় মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের চিঠি দিয়ে ওই অডিটের কথা জানানো হয়েছে গত ৫ জানুয়ারি। অডিট শুরুও করেছে ১১টি সিএ ফার্ম। ফলে হাসপাতালগুলির টাকা আটকে গিয়েছে। হাসপাতাল-কর্তাদের আশঙ্কা, সামনেই ভোট। অডিটের জন্য এখন টাকা পেতে দেরি হলে এবং নির্বাচনী আচরণবিধি ঘোষিত হয়ে গেলে অনির্দিষ্ট কালের জন্য আটকে যাবে বকেয়া টাকা।

Advertisement


ওষুধের ক্ষেত্রে পূর্ব মেদিনীপুরে বকেয়া টাকার পরিমাণ প্রায় দেড় কোটি বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে বকেয়া চার কোটি, দার্জিলিঙে সাড়ে তিন, মুর্শিদাবাদে প্রায় দেড়, উত্তর ২৪ পরগনায় আড়াই, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সাড়ে তিন, হাওড়ায় এক, বীরভূমে সওয়া এক কোটি এবং হুগলিতে ৫৫ লক্ষ টাকা। বকেয়া রয়েছে অন্যান্য জেলাতেও।


উত্তর কলকাতার একটি সংস্থা কোভিডের ওষুধ সব চেয়ে বেশি সরবরাহ করেছে বলে তাদের দাবি। বকেয়া ছ’‌কোটির মধ্যে তারা মাত্র দেড় কোটি টাকা পেয়েছে বলে অভিযোগ। ওই সংস্থা এখন ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।


কলকাতার একটি হাসপাতালের শিলিগুড়ি শাখার পুরোটাই সরকার নিয়েছিল কোভিডের জন্য। তাদের ১২ কোটি টাকা বিলের মধ্যে সরকার দিয়েছে মাত্র দেড় কোটি। সেখানেও ৫১-৫২ দিন চিকিৎসা করে রোগীকে বাঁচানোর পরে সরকার মাত্র ১৫ দিনের টাকা দিয়েছে বলে অভিযোগ। হাওড়ার ফুলেশ্বরের একটি হাসপাতালের তরফে শুভাশিস মিত্র জানান, ১৪৬টি আইসিইউ শয্যা নিয়েছিল সরকার। ৫০০০ কোভিড রোগীকে তাঁরা সুস্থ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘অক্সিজেন সংস্থার কয়েক কোটি টাকা দিতে পারছি না। সরকার ২০০০ পিপিই কিট দিয়েছে। আমাদের লেগেছে ২০ হাজার। রোগীদের ৩০-৩২ দিন ভর্তি রেখে চিকিৎসা করা হয়েছে। সরকার দিচ্ছে ১৩-১৪ দিনের টাকা।’’


শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের পুরোটাই (১০০ শয্যা) কোভিড হাসপাতাল হিসেবে অধিগ্রহণ করে সরকার। শ্রমজীবীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি বাসুদেব ঘটক বলেন, ‘‘মে মাসে সরকার আমাদের হাসপাতাল নিয়েছে। দিয়েছে কোনও মাসে তিন লক্ষ, কোনও মাসে দু’লক্ষ টাকা। বকেয়া চার কোটিরও বেশি। টাকার অভাবে এ মাসে কর্মীদের বেতন আটকে যেতে বসেছিল। অসংখ্য বার স্বাস্থ্য দফতরে জানিয়েছি। ওরা বকেয়াও দিচ্ছে না, শয্যাও ছাড়ছে না। আমাদের ধারণা, কিছুতেই পুরো বকেয়া মেটাবে না সরকার। সেই জন্যই এই অডিটের পন্থা ফেঁদেছে।’’


স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়বাবুর দাবি, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে হাসপাতালের বিলে গোলমাল দেখা যাচ্ছিল। কোথাও প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ দেওয়া হয়েছে, কোথাও প্রায় সব রোগীই আইসিইউয়ে ছিলেন বলে দেখানো হয়। কোথাও রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে যাওয়ার খরচও ধরা হয়েছে, যা ধরার কথা নয়। কোথাও কোথাও চিকিৎসকের বিল অনেক বেশি নেওয়া হয়েছে। অডিটে এই সব বিষয়ই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement