ন’বছর আগে দেওয়া কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশিকার অনুকরণে এ বার সেই রিপোর্টপত্রের কাঠামো (ফরম্যাট) পরিবর্তনের পরিকল্পনা করছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। ফাইল চিত্র।
ধর্ষণ বা যৌন হিংসার ঘটনায় নির্যাতিতার ডাক্তারি পরীক্ষার পরে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে হয় চিকিৎসককে। ২০ পাতারও বেশি সেই রিপোর্ট তৈরি করতে খানিকটা সময় লাগে। ন’বছর আগে দেওয়া কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশিকার অনুকরণে এ বার সেই রিপোর্টপত্রের কাঠামো (ফরম্যাট) পরিবর্তনের পরিকল্পনা করছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। কী ভাবে ওই ডাক্তারি রিপোর্টপত্র মাত্র দু’পাতার মধ্যে নামিয়ে আনা যায়, ইতিমধ্যেই তার খসড়া স্বাস্থ্য ভবনে জমা পড়েছে।
সূত্রের খবর, মাস তিনেক আগে রিপোর্টপত্রের কাঠামোর খসড়া জমা পড়েছে। সেটি বাস্তবায়িত করার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রাথমিক পর্যায়ের একটি বৈঠকও হয়েছে। সেখানে ওই খসড়াটি গৃহীত হয়েছে। এ বার তিন সদস্যের কমিটি ওই রিপোর্টপত্রের কাঠামো চূড়ান্ত করবে।
গত নভেম্বরে ‘ডিরেক্টরেট অব চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ট্র্যাফিকিং’ আয়োজিত রাজ্য স্তরের ‘মাল্টি স্টেকহোল্ডারস্ কনসালটেশন অন স্টেটাস অব ইমপ্লিমেনটেশন অব পকসো অ্যাক্ট-২০১২’তেও রিপোর্টপত্রের কাঠামো ছোট করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
রাজ্যের ‘ডিরেক্টরেট অব চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ট্র্যাফিকিং’-এর অধিকর্তা নীলাঞ্জনা দাশগুপ্ত বলেন, “বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতর দেখছে। ওঁরাই চূড়ান্ত করবেন। তবে কাঠামোটি ছোট অথচ সুসংহত ভাবে করা গেলে তদন্তে সুবিধা হবে এবং অনেক তাড়াতাড়ি রিপোর্ট তৈরি হবে। তবে সব থেকে বড় বিষয় হল সুসংহত রিপোর্ট তৈরি করা।”
দিল্লির নির্ভয়া-কাণ্ডের পরে ২০১৪ সালে ‘গাইডলাইন অ্যান্ড প্রোটোকল, মেডিকো-লিগ্যাল কেস ফর সার্ভাইভার/ ভিক্টিম অব সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স’ প্রকাশ করেছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। সেই নির্দেশিকায় (৮৩ থেকে ৯৭ নম্বর পাতা পর্যন্ত) রয়েছে ওই রিপোর্টপত্রের কাঠামো।
কেন্দ্রের নির্দেশিকায় ওই রিপোর্টপত্রটি রয়েছে ১৬ পাতার। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সেটি ঠিক মতো স্পষ্ট ভাবে ছাপানো হলে অন্তত ৩০-৩২ পাতার হয়ে যায়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সেটিকে দু’পাতায় নামিয়ে আনার জন্য খসড়া তৈরি করেছেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক সোমনাথ দাস। তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া রিপোর্টের কাঠামোকে নির্দেশিকা হিসাবে ধরেই দু’পাতার রিপোর্টের খসড়া তৈরি হয়েছে।”
ধর্ষণ বা যৌন হিংসার ঘটনার অভিযোগে ডাক্তারি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। মে়ডিক্যাল কলেজ বা জেলা স্তরের হাসপাতালে সেই পরীক্ষা করেন ফরেন্সিক মেডিসিন বা স্ত্রী-রোগ বিভাগের চিকিৎসকেরা।
সোমনাথ জানাচ্ছেন, পরীক্ষার পরে রিপোর্ট লিখে সেটি জমা দিতে হয় সংশ্লিষ্ট থানার তদন্তকারীর কাছে। তাঁর কথায়, “ওই পরীক্ষা ছাড়াও চিকিৎসকদের অন্যান্য অনেক জরুরি কাজ থাকে। সেখানে ৩০-৩২ পাতার রিপোর্ট পূরণ করতে অন্তত তিন-চার দিন সময় লেগে যায়। এর ফলে অনেক সময়েই রিপোর্ট জমা দিতে দেরি হয়।”
জানা যাচ্ছে, রিপোর্টপত্রের নতুন কাঠামোয় মূলত তদন্তে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলির উপরেই বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ধর্ষণ বা যৌন হিংসার শিকারের ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট মাথা ঠান্ডা করে তৈরি করতে হয়। কারণ, ওই রিপোর্টের উপরেই ভীষণ ভাবে নির্ভর করে তদন্তের গতিপ্রকৃতি। কিন্তু অন্যান্য কাজের চাপের মাঝে এত পাতার রিপোর্ট তৈরিতে কোনও ভুল হলে তাতে তদন্তের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এই নতুন পরিকল্পনা।
সম্প্রতি ধর্ষণের ঘটনায় নির্যাতিতার মেডিকো-লিগ্যাল পরীক্ষায় টু-ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ করার যৌক্তিকতা এবং নতুন কী পদ্ধতিতে চিকিৎসা হবে, সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল স্বাস্থ্য ভবন। এর পরে এই রিপোর্টপত্রের কাঠামো বদলেও জোর দেওয়া হচ্ছে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, “তদন্তে গতি আনতে দ্রুত ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট জমা পড়া যেমন জরুরি, তেমনই রিপোর্ট সুসংহত হওয়াও দরকার। কম সময়ের মধ্যে কী ভাবে তা করা যায়, তারই পরিকল্পনা করা হয়েছে।”