সিজার অডিটের নির্দেশিকা জারি হতেই শুরু হয়েছে জল্পনা। প্রতীকী ছবি।
প্রসবের ক্ষেত্রে সরকার কি সিজারের হার বেঁধে দিতে পারে?
সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সিজ়ার অডিটের নির্দেশিকা জারি হতেই এমন জল্পনা শুরু হয়েছে চিকিৎসক মহলে। যার মূলে রয়েছে দু’টি প্রশ্ন। প্রথমত, স্বাভাবিক প্রসবের জন্য যে সময় ও পরিকাঠামো প্রয়োজন, সর্বত্র তা পর্যাপ্ত রয়েছে বলে কি মনে করছে সরকার? দ্বিতীয়ত, প্রসব-বেদনা ওঠার পরে যে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়, তখন কড়া নজরদারি এবং প্রসবের মাহেন্দ্রক্ষণে চিকিৎসকের নিশ্চিত উপস্থিতি সম্ভব?
তাই, প্রসব-বেদনা সহ অন্যান্য সমস্যা কাটাতে এবং নিজস্ব কিছু ইচ্ছাতেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সিজার পছন্দ করেন প্রসূতি ও তাঁর পরিজনেরা। সেখানে জোর দিয়ে স্বাভাবিক প্রসবের ক্ষেত্রে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায় তাঁদের উপরে এসে পড়ে বলেই মত চিকিৎসকদের। আবার, স্বাভাবিক প্রসবের জন্য এক জন চিকিৎসকের যতটা সময় দেওয়ার কথা, তা তিনি দিতে পারেন না। পাশাপাশি, প্রযুক্তির উন্নতিও সিজ়ারের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাতেই প্রশ্ন উঠছে, সিজ়ারের উপরে সরকারি হস্তক্ষেপ কতটা প্রাসঙ্গিক?
শুক্রবার ‘ডক্টর্স ডায়ালগ’ আয়োজিত চিকিৎসকদের এক আলোচনায় উঠে এল এমনই নানা দিক। সকলেরই মতে, তাঁদের প্রধান লক্ষ্য মা ও সদ্যোজাতের সুস্থতা। তাই, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রসূতির পছন্দ মতো এবং কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা উপলব্ধি করে সিজ়ার করা হয়। তবে আলোচনায় অংশ নেওয়া চিকিৎসকেদের এটাও দাবি, লেবার রুম এখন প্রায় উঠে যেতে বসেছে। বদলে সরকারি স্তরে অন্তত ৪০-৬০ শতাংশ এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৮০-৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে সিজ়ার হচ্ছে। তার প্রকৃত কারণ কি শুধুই প্রসূতির ইচ্ছা, না অন্য কিছু— তা জানতে সিজ়ার অডিটের প্রয়োজন। স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আগাম দিনক্ষণ দেখে সিজ়ার করার সংখ্যা এখন বেসরকারি স্তরে অনেক বেশি। সরকারি হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে সিজ়ার বেশি হচ্ছে। সিজ়ার করা উচিত না অনুচিত, তা পরে বিচার্য। আগে দেখা দরকার, কেন সিজ়ার বাড়ছে।’’
বিদেশে স্বাভাবিক প্রসবের সংখ্যা বেশির প্রসঙ্গে স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক বিশ্বপতি মুখোপাধ্যায় জানান, সেখানে এবং ভিন্ রাজ্যে দলগত ভাবে চিকিৎসার চল বেশি। যেটা এই রাজ্যে প্রায় নেই। আবার, বেশির ভাগ চিকিৎসকের পক্ষেই স্বাভাবিক প্রসবের জন্য ১২ ঘণ্টা অপেক্ষা করা সম্ভব হয় না। বিশ্বপতিবাবু বলেন, ‘‘সিজ়ারের থেকে স্বাভাবিক প্রসব অনেক কঠিন। সরকারি স্তরে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য পিজিটি, হাউসস্টাফ-সহ বিভিন্ন চিকিৎসক থাকলেও, বেসরকারিতে তেমন সুযোগ নেই।’’ তবে স্বাভাবিক প্রসবে সদ্যোজাতের শারীরিক উপকারিতা বেশি বলেই এ দিন দাবি করেন শিশুরোগ চিকিৎসক স্বপন বিশ্বাস। তাঁর কথায়, ‘‘প্রসবের পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সন্তানকে মায়ের কাছে দেওয়া উচিত। কিন্তু সিজ়ারের পরে মায়ের অসুবিধার কথা ভেবে সন্তানকে দেরিতে দেওয়ায় সব চেয়ে বড় সমস্যা হয় স্তন্যপানে। আবার, সিজ়ারিয়ান শিশুর পরবর্তী সময়ে হাঁপানি, ডায়াবিটিস, স্থূলতার মতো নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।’’