শহরে একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে অস্বস্তিতে কলকাতা পুরসভা। ছবি: সংগৃহীত।
শহর কলকাতায় বেড়েছে রুফটপ ক্যাফে বা রেস্তরাঁ। তড়িঘড়ি কম বিনিয়োগে বেশি লাভের আশায় এই সব ক্যাফে ও রেস্তরাঁগুলিতে কোনও রকম সুরক্ষাবিধি থাকছে না। সম্প্রতি কলকাতা শহরে একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তি দেখা দিয়েছে কলকাতা পুরসভার শীর্ষ প্রশাসনে। শনিবার ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে শহরের ক্যাফে ও রেস্তরাঁগুলিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
সম্প্রতি ক্যামাক স্ট্রিটের রেস্তরাঁ ও কসবার অ্যাক্রোপলিস মলে যে ভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, তাতে এখনই কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষপাতী কলকাতা পুরসভা। কারণ, এ ক্ষেত্রে কোনও প্রাণহানি না হলেও, আগামী দিনে যাতে শহরে কোনও বড় ধরনের বিপত্তি না ঘটে, সেই বিষয়ে সাবধানি পদক্ষেপ করতে চাইছে কলকাতা পুরসভা। তাই পুরসভার অন্দরে আলোচনা শুরু হয়েছে, এ বিষয়ে কড়া আইন প্রণয়ন করেই রুফটপ ও শপিং মলে থাকা রেস্তরাঁগুলিকে নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা। যদিও এই বিষয়টি বেশ সময়সাপেক্ষ বলেই মন্তব্য করেছেন ফিরহাদ। তবে এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সুরক্ষাবিধি খতিয়ে দেখে তবেই অনুমতি দিক দমকল, বলছেন মেয়র। সম্প্রতি পার্ক স্ট্রিট এলাকায় একটি দোতলা রেস্তরাঁয় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। যার ছাদ সম্পূর্ণ টিন দিয়ে ঘেরা ছিল। আরও বেশ কিছু হুক্কা বার, রেস্তরাঁ বা ক্যাফে একই ভাবে গোটা ছাদ ঘিরে তৈরি হয়েছে। ফলে বহুতল ভবনের মাঝে আগুন লাগলে ভিতরে আটকে থাকা মানুষজনের পরিণতি হবে মর্মান্তিক। উদ্ধার করার জায়গাটুকুও নেই এ সব ক্ষেত্রে। তাই কড়া আইন প্রণয়ন করেই এই ধরনের ক্যাফে বা রোস্তরাঁ তৈরি বন্ধ করতে চায় পুরসভা।
বাম জমানায় পার্ক স্ট্রিটের স্টিফেন কোর্টে যে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল, সে দিকে নজর রেখেই পুর আধিকারিকদের পরবর্তী পদক্ষেপ করতে বলেছেন মেয়র। তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের কর্পোরেশনের অনুমোদন দেওয়ার কমিটিতে দমকল দফতর আছে। তারা অনুমতি দিলে তবেই বিল্ডিং বিভাগ ছাড়পত্র দেয়। আবাসিকদের ক্ষেত্রে দ্রুত ছাড়পত্র দিলেও একটু ভেবেচিন্তে খতিয়ে দেখে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে অনুমতি দিক দমকল। সম্পূর্ণ ছাদ ঘিরে কিছু করা যাবে না। একাংশ ফাঁকা রাখতে হবে, যাতে অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটলে আটকে যাওয়া মানুষজনকে উদ্ধার করা যেতে পারে।’’ মেয়র আরও বলেছেন, ‘‘ছাদ নিয়ে আইন তৈরির পরিকল্পনা করছি। আমরা আলোচনা করছি। ছাদের সাধারণ অধিকার থাকবে। ব্যক্তি মালিকানায় দিয়ে দেওয়া যাবে না। ইতিমধ্যে যতগুলো নির্মাণে ছাড় দেওয়া হয়েছে, সেই তালিকা দমকলকে দেওয়া হবে। তারা খতিয়ে দেখবে, এই ছাদগুলোয় ফাঁকা অংশ আছে কি না, আলাদা সিঁড়ি আছে কি না। যাতে জরুরিকালীন অবস্থায় মানুষকে উদ্ধার করা যায়। এই কাজগুলো নিশ্চিত ভাবেই করব।’’
কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘বর্তমান সমাজে এই ধরনের ক্যাফে ও রেস্তরাঁ তৈরি হবেই। কিন্তু নির্মাণের সময়েই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা-সহ আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সেখান থেকে বেরোনোর উপায় তৈরি করে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে জরিমানার বিধান থাকলেও, কড়া আইনে কারাবাসের কোনও উল্লেখ নেই। তাই মালিকেরা সেই সব আইনকে খুব বেশি পাত্তা দেন না। আর দুর্ঘটনা ঘটলে পুরসভাকেই সব দায় বহন করতে হয়। কড়া আইন প্রণয়ন করেই রেস্তরাঁ-মালিকদের সচেতন করা সম্ভব।’’