মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোট মিটে যেতে আবাস যোজনা নিয়ে সক্রিয় হচ্ছে নবান্ন। সব ঠিকঠাক চললে, আগামী জুলাই মাস থেকে আবাস যোজনার প্রকল্প কার্যকর করতে সমীক্ষার কাজ শুরু হতে পারে। রাজ্যের আবাস প্রকল্পের টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার, এমনই অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনে তাঁর সরকার রাজ্য সরকারের তহবিল থেকেই আবাস যোজনার ঘর তৈরি করে দেবে। এই প্রকল্পে রাজ্যের ১১ লক্ষ মানুষকে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে বলে আগেই জানানো হয়েছিল। কিন্তু বিগত কয়েক মাসে আবাস যোজনা প্রকল্পে বাড়ি পেতে আরও অনেক আবেদন জমা পড়েছে রাজ্য প্রশাসনের কাছে। তাই ঠিক হয়েছে, আগামী জুলাই মাস থেকে সমীক্ষার কাজ করে, প্রকৃত আবেদনকারীদের চিহ্নিত করে আবাস তৈরির কাজ শুরু করবে রাজ্য। গত কয়েক মাসে আবাস যোজনা প্রকল্পে ঘরবাড়ি পেতে আবেদনকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া প্রসঙ্গে নবান্নের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে অনেক গরিব মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে যাঁরা আশ্রয়হীন হয়েছেন, তাঁরাই আবাস প্রকল্পে ঘর পেতে আবেদন জানিয়েছেন।
এ ছাড়াও ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’ হেল্পলাইনে আবাস যোজনার সুবিধা পেতে আবেদন জানিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। সব বিষয়কে একত্রিত করে সমীক্ষার কাজ শুরু হবে। এ ক্ষেত্রে যেমন দেখা হবে কোনও অসৎ ব্যক্তি যাতে আবাস যোজনার সুযোগ-সুবিধা না পান, তেমনই দেখা হবে প্রকৃত আশ্রয়হীন কোনও ব্যক্তি যেন এই প্রকল্প থেকে বঞ্চিত না হন। নবান্ন সূত্রে খবর, এই সমীক্ষার কাজে ব্লকের বিডিয়ো থেকে শুরু করে মহকুমা শাসকদের সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে নিচুতলায় যেতে হবে বলে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নবান্নের এক আধিকারিকের কথায়, এর আগের কেন্দ্রীয় সরকারের পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী ছিলেন বেগুসরাইয়ের সাংসদ গিরিরাজ সিংহ। যাঁর সঙ্গে ১০০ দিনের কাজের টাকা পাওয়া থেকে আবাস প্রকল্প নিয়ে সংঘাত হয়েছিল রাজ্য সরকারের। রাজ্যের আশা ছিল, নতুন সরকার গঠন হলে নতুন মন্ত্রী দায়িত্ব পেলে এই দুই প্রকল্পের টাকা পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী তৃতীয় বার দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন দফতরকে পৃথক করে দিয়েছেন।
গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক চলে গিয়েছে সরকারের শরিক জেডি(ইউ)-এর লল্লন সিংহের কাছে। আর পঞ্চায়েত মন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। বিজেপির অন্দরে শিবরাজ ‘নরমপন্থী’ নেতা বলে পরিচিত হলেও, তিনি কত দূর রাজ্যের দাবি-দাওয়া মেনে নিয়ে অর্থ বরাদ্দ করতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে নবান্নের আধিকারিকদের একাংশের। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর ভরসা ছেড়ে আবাস প্রকল্প দিতে আপাতত নিজেদের পরিকাঠামো এবং অর্থের ওপরেই ভরসা করে এগোতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। আর তাই জুলাই মাস থেকে সমীক্ষার কাজ শুরু করে চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই উপভোক্তাদের মাথায় ছাদ দিতে চাইছে নবান্ন।