ফাইল ছবি
খেলতে নেমে এ যেন নিজের গোলেই বল মারা!
স্কুলের পরিচালন সমিতিতে পুর কর্তৃপক্ষের মনোনীত সদস্যকে মানতে নারাজ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের একাংশ কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন বিধাননগর পুরসভার বিরুদ্ধে। বিচারক তাঁর নির্দেশনামায় জানিয়েছেন, পুরসভার আইনজীবী আদালতে দাবি করেছেন যে, মামলাকারীদের জুটিয়েছেন কাউন্সিলর তুলসী সিংহরায়। ঘটনাটি ঘিরে পুর কর্তৃপক্ষের উপরে বেজায় চটেছেন কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ তুলসী। হাই কোর্টের নির্দেশনামায় বিচারকের বক্তব্যের উল্লেখ করে তুলসী পুরসভার মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তীর কাছে প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছেন। ঘটনাটি নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়েছে পুরসভার অন্দরে।
সল্টলেকের এফই ব্লকে রয়েছে পুরসভার ওই স্কুল। বিধাননগর পুরসভা পরিচালিত ওই স্কুলের পরিচালন সমিতিতে গত বোর্ড অবধি ছিলেন তুলসী। ২০২২-এ পুর নির্বাচনের পরে স্কুলে নতুন পরিচালন সমিতি তৈরি হলে সেখানে পুরসভার প্রতিনিধি করা হয় স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু পুরসভার সেই সিদ্ধান্ত মানতে চাইছেন না পড়ুয়াদের অভিভাবক এবং শিক্ষাকর্মীদের একাংশ। মাসখানেক আগে তাঁরা স্কুলে বাণীব্রতের বিরুদ্ধে পোস্টার লাগিয়ে বিক্ষোভও দেখান। পরবর্তী কালে তাঁরা কলকাতা হাই কোর্টে পুরসভার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেন।
আদালতের নির্দেশনামার ছয় নম্বর অনুচ্ছেদে পুরসভার এক আইনজীবীর নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, তিনি জানিয়েছেন, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তুলসী সিংহরায়ের দ্বারা মামলাকারীরা সংগঠিত হয়েছেন। তার পরে তাঁরা পরিচালন সমিতির সদস্য তথা ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
ঘটনা নিয়ে কথা বলতে তুলসীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আদালতের ওই নির্দেশনামার কথা স্বীকার করে জানান, পুরসভার আইন বিভাগের মেয়র পারিষদ হওয়া সত্ত্বেও এমন একটি মামলার কথা কেন তাঁকে জানানো হয়নি, তা তিনি মেয়রের কাছে জানতে চেয়েছেন।
তুলসীর কথায়, ‘‘আমি ওই নির্দেশনামার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়েছি। পুরসভার আইনজীবীর সঙ্গে কে বা কারা কথা বলেছিলেন, আইন আধিকারিকের থেকে সে বিষয়ে জানতে চেয়েছি। কেন এমন একটি মামলার কথা আমাকে জানানো হয়নি, তা জানতে চেয়েছি পুর কর্তৃপক্ষের কাছে। এ তো সেম সাইড গোল হয়ে গিয়েছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে।’’ তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে চিঠি দিয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকেও।
মেয়র কৃষ্ণা ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘আমি আইনজীবীর সঙ্গে কথা না বলে এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করব না।’’ যদিও এক পদস্থ আধিকারিকের দাবি, আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার সময়ে কোনও ভুল বোঝাবুঝির জেরেই ওই ঘটনা ঘটেছে।
যাঁর প্রতিনিধিত্ব নিয়ে ঘটনার জল আদালতের দরজা অবধি গড়িয়েছে, সেই বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতের নির্দেশনামা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘তুলসী মামলাকারীদের সংগঠিত করেছেন কি না, বলতে পারব না। তবে যখন আমার বিরুদ্ধে স্কুলে পোস্টার পড়েছিল, তখন সহকর্মী হিসেবে তুলসী কোনও প্রতিবাদ করেননি।’’