Jadavpur University

যাদবপুরে বড় ভাঙন এসএফআইয়ে, তোপ সিপিএমের বিরুদ্ধেও

এসএফআই-এর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক দেবরাজ দেবনাথের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে গণইস্তফা পত্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২০ ২০:১১
Share:

ভোটের আগে ভাঙন যাদবপুরে এসএফআইয়ে। —ফাইল চিত্র

ভোটের মুখে বড় ধাক্কা খেল এসএফআই। ১৯ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংসদ নির্বাচন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার মাস দেড়েক আগে নেতৃত্বকে কড়া চিঠি লিখে সংগঠন ছেড়ে দিলেন বিদায়ী ছাত্র সংসদের সভানেত্রী-সহ ৩১ জন। ধর্ষণের অভিযোগ থাকা ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া, উপদলীয় কার্যকলাপে প্রশ্রয়, আদর্শচ্যুত হওয়া, পুরুষতান্ত্রিকতা, নারীবিদ্বেষ, ব্রাহ্মণ্যবাদ— এই রকম এক গুচ্ছ গুরুতর অভিযোগ সিপিএম এবং এসএফআই নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তুলেছেন দলত্যাগীরা।

Advertisement

শনিবার এই গণইস্তফার ঘটনা ঘটেছে। এসএফআই-এর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক দেবরাজ দেবনাথের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে গণইস্তফা পত্র। সংগঠনের কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদককেও ইস্তফা পত্রের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে।

যাঁরা সংগঠন ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন, তাঁরা কিন্তু এসএফআই-এর সাধারণ সদস্য নন। বিদায়ী ছাত্র সংসদের সভানেত্রী সোমাশ্রী চৌধুরী-সহ যে ৩১ জন ইস্তফাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন, তাঁদের অধিকাংশই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএফআই-এর সামনের সারির মুখ। চিঠির শুরুতেই এক ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে নেতৃত্বকে। সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় আঞ্চলিক কমিটির ওই প্রাক্তন সম্পাদকের বিরুদ্ধে শুধু এসএফআই-এর জেলা কমিটির কাছে নয়, সিপিএমের জেলা নেতৃত্বের কাছেও অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ দল বা ছাত্র সংগঠন করেনি বলে চিঠিতে লেখা হয়েছে।

Advertisement

অভিযোগ আরও অনেক। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএফআই-কে এখন যাঁরা নিয়ন্ত্রণ করছেন, তাঁদের অনেকেই নারীবিদ্বেষী— অভিযোগ দলত্যাগীদের। ছাত্রীদের পোশাক নিয়ে বা সিগারেট খাওয়া নিয়ে তাঁরা নানা রকম নীতি পুলিশি ফলান বলে দাবি করা হয়েছে ইস্তফা পত্রে।

শুধু এসএফআই নয়, সিপিএম নেতৃত্বকেও আক্রমণ করেছেন দলত্যাগীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএফআই-এর বৈঠকগুলিকে সিপিএমের লোকাল কমিটির বৈঠকে পরিণত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। জাতপাতের প্রশ্নে সিপিএম নেতৃত্বকে আক্রমণ করেছেন সোমাশ্রীরা। দলিত বা পিছিয়ে পড়ার শ্রেণির কেউ দলের নেতৃত্বে উঠে আসতে পারেন না, সিপিএমে সব বড় পদ এখনও উচ্চবর্ণের দখলে— লিখেছেন বিক্ষুব্ধরা। সিপিএমের সেই প্রবণতাই দলের ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর মধ্যে চারিয়ে গিয়েছে বলে তাঁরা দাবি করেছেন।

এ ছাড়া সংগঠনের মধ্যে একটি অংশ বহু বছর ধরে প্রভাবশালী উপদল গড়ে তুলেছেন বলে দলত্যাগীরা নিজেদের ইস্তফা পত্রে লিখেছেন। ওই উপদলের অনুগত বা ঘনিষ্ঠ না হলে সংগঠনের নেতৃত্বে পৌঁছনো যায় না— অভিযোগ তাঁদের এমনও। যাঁর উদ্দেশে এই চিঠি লেখা হয়েছে, এসএফআই-এর বিশ্ববিদ্যালয় লোকাল কমিটির সেই সম্পাদক দেবরাজ দেবনাথ নিজেও ওই উপদলের অংশ— এ কথা লিখে কটাক্ষ ছুড়ে দেওয়া হয়েছে দেবরাজের দিকে।

এসএফআই বা সিপিএম এখন আর কোনও বিপ্লবী দল নয়, মার্কসবাদের সঙ্গে এই দল বা সংগঠনের কোনও সম্পর্ক নেই। মত দলত্যাগীদের।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগে এসএফআই-এর সংগঠন যথেষ্ট মজবুত ঠিকই। কিন্তু একসঙ্গে এত জনের দলত্যাগের ধাক্কা ভোটের মুখে সামলানো খুব সহজ নয়।

বিষয়টি নিয়ে সিপিএম এবং এসএফআই নেতৃত্ব যথেষ্ট অস্বস্তিতে। সিপিএমের কেউ এখনও মুখ খোলেননি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনে এই ভাঙন প্রসঙ্গে। এসএফআই নেতা দেবরাজ দেবনাথও এ বিষয়ে সংগঠনের বাইরে মুখ খুলতে অস্বীকার করেছেন। কিন্তু যাঁরা সংগঠন ছাড়লেন, তাঁরা নিজেদের ইস্তফা পত্রের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন ইতিমধ্যেই। ফলে দল ও সংগঠনের বিরুদ্ধে ঠিক কী অভিযোগ উঠেছে, তা আর গোপন নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement