প্রতীকী চিত্র।
করোনার কারণে অন্যান্য বোর্ডের পরীক্ষার মতো এ বছর বাতিল হয়েছিল সিবিএসই বোর্ডের দশম শ্রেণির পরীক্ষাও। তবে মূল্যায়নের ভিত্তিতে এ শহরের বেশ কয়েকটি স্কুলের পরীক্ষার্থীরা পেল ১০০ শতাংশের কাছাকাছি নম্বর। ১০০ শতাংশ নম্বরও পেয়েছে কেউ কেউ। মূল্যায়নে প্রাপ্ত এই নম্বরে পরীক্ষার্থীরা খুশি হলেও জানাচ্ছে, অফলাইনে লিখিত পরীক্ষা দিয়ে এই নম্বর পেলে আরও বেশি খুশি হত তারা।
এ বার সিবিএসই দশম শ্রেণিতে ৫০০-র মধ্যে ৫০০ পেয়ে স্কুলে প্রথম হয়েছে শ্রীশিক্ষায়তনের ছাত্রী সানিয়া ঘোষ। তার মতে, লিখিত পরীক্ষা না হলেও মূল্যায়নের জন্য প্রস্তুতিতে কোনও ফাঁক রাখেনি সে। সানিয়ার কথায়, “স্কুলের ইউনিট টেস্ট, প্রি-বোর্ডের নম্বরের উপরে মূল্যায়ন হয়েছে। পরীক্ষা বাতিল হবে না জানলেও প্রতিটি ইউনিট টেস্টই মন দিয়ে পড়ে দিয়েছিলাম। ফলে প্রতিটি ইউনিট টেস্টেই ভাল নম্বর পেয়েছি। প্রি-বোর্ড অনলাইন ও অফলাইন— দু’ভাবেই হয়েছে আমাদের স্কুলে।” তবে লিখিত পরীক্ষা দিয়ে এই নম্বর পেলে আরও বেশি তৃপ্তি পেত সে, এটাই আপাতত আফশোসের জায়গা সানিয়ার।
সাউথ পয়েন্ট স্কুল থেকে ৫০০-র মধ্যে ৪৯৮ (৯৯.৬০ শতাংশ) পেয়েছে ১১ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে এক জন অর্ণজা চট্টোপাধ্যায় বলছে, “পরীক্ষার নম্বরে খুব খুশি। তবে অফলাইনে পরীক্ষা দিতে পারলে আরও খুশি হতাম।” কিন্তু ‘করোনার সময়ের দশম শ্রেণির ব্যাচ’ বলে কেউ উপহাস করলে? তার উত্তর দিতেও তৈরি আছে অর্ণজা। তার কথায়, “সারা বছর স্কুলের নজরদারিতে অনলাইন টেস্ট থেকে শুরু করে কুইজ— কত কিছু হয়েছে। অফলাইনে প্রি-বোর্ড পরীক্ষা হয়েছে। সেই ৮০ নম্বরের পরীক্ষায় দূরত্ব-বিধি মেনে, মাস্ক পরে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মারাত্মক বাড়াবাড়ির মধ্যেও মাথা ঠান্ডা রেখে পড়াশোনা করেছি। সুস্থ থেকে মন দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার মধ্যে মানসিক চাপও ছিল।”
সাউথ পয়েন্ট স্কুল থেকে এ বার পরীক্ষা দিয়েছিল ঝাড়গ্রামের ছ’জন পরীক্ষার্থী। তারাও মনে করছে, অতিমারি পরিস্থিতিতে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার চ্যালেঞ্জ কম ছিল না। হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে ৭৩ শতাংশের কিছু বেশি নম্বর পেয়েছে রুমা হাঁসদা ও সাগেন কিস্কুরা। কম্পিউটার বা ল্যাপটপ নয়, অনলাইন ক্লাস তো বটেই, এমনকি তারা পরীক্ষাও দিয়েছে মোবাইলে। রুমার কথায়, “বোর্ডের পরীক্ষার আগে তিন মাস রাত জেগে পড়াশোনা করেও অনেকে ভাল ফল করে থাকে। কিন্তু আমরা সারা বছর ধরে পড়েছি।”
৪৯৮ নম্বর পেয়ে দিল্লি পাবলিক স্কুল রুবি পার্কের ছাত্রী সিয়া মালিক জানাচ্ছে, এই নম্বর কঠোর পরিশ্রমেরই ফল। মা বন্দনা মালিক বলেন, “মেয়েকে দেখেছি, সারা বছর পড়াশোনা করেছে। ফাঁকি দেয়নি।”
শহরের বেশ কিছু স্কুল থেকে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশেরও বেশি নম্বর পেয়েছে, এমন পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক। অনেকেই জানাচ্ছে, অন্য বছরের তুলনায় এ বারের প্রস্তুতিটা ছিল অন্য রকম। তাই পরীক্ষা বাতিল হওয়ার ঘোষণায় ভেঙে পড়েছিল অনেকেই। তার মধ্যেও ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে সেই দুঃখ অনেকটা কমেছে তাদের। মহাদেবী বিড়লা ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমির প্রিন্সিপাল অঞ্জনা সাহা জানান, স্কুলের সার্বিক ফলাফল ভাল হয়েছে। ২২৭ জন পরীক্ষার্থীর সকলেই পাশ করেছে। তার মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি নম্বর পেয়েছে ১১৭ জন। ৯৯.৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে স্কুলের মধ্যে প্রথম হয়েছে বর্ণিকা ফতেচন্দকা নামে এক ছাত্রী।