—প্রতীকী চিত্র।
কোনও স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুল চত্বরকে ‘নো প্লাস্টিক জ়োন’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। প্লাস্টিক বা প্লাস্টিকের তৈরি সামগ্রী আনলে জরিমানা ধার্য করার পথে হাঁটছে কোনও কোনও স্কুল। শহরের কিছু স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, পঠনপাঠনের মাধ্যমেই চলছে প্লাস্টিক বর্জনের সচেতনতা।
গড়িয়ার বালিয়া নফরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়কে ‘নো প্লাস্টিক জ়োন’ বলে ঘোষণা করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষিকা গার্গী মুখোপাধ্যায় জানালেন, সব ছাত্রী এবং অভিভাবককে জানানো হয়েছে, স্কুল চত্বরে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ। পড়ুয়াদের বলা হয়েছে, প্লাস্টিকের জিনিস নিয়ে যেন তারা স্কুলে না আসে। এমনকি, স্কুলের ডাস্টবিনেও প্লাস্টিকের তৈরি কোনও জিনিস ফেলা যাবে না। গার্গী বলেন, ‘‘প্লাস্টিক যে সভ্যতার শত্রু, তা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্রীদের বুঝিয়েছি আমরা। এখন স্কুলে প্রার্থনার সময়ে বার বার এই বিষয়টি বলে দেওয়া হচ্ছে। অভিভাবকদের হোয়াটসঅ্যাপেও জানানো হচ্ছে।’’ তিনি আরও জানান, স্কুলের ভিতরে যেখানে-সেখানে যাতে অন্য কোনও আবর্জনা না ফেলা হয়, সে দিকেও কড়া নজর দেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি ক্লাসঘরে ডাস্টবিন রাখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
শিয়ালদহের টাকি গার্লসের প্রধান শিক্ষিকা শম্পা চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, পড়ুয়াদের প্লাস্টিক নিয়ে সচেতনতার বার্তা দিতে স্কুলে প্লাস্টিক আনলে ১০০ টাকা করে জরিমানা ধার্য করা হচ্ছে। স্কুলের চাইল্ড ক্যাবিনেট পড়ুয়াদের ব্যাগ পরীক্ষা করে। সেখানে প্লাস্টিকের প্যাকেটে করে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়া কিছু এনেছে দেখা গেলে তাকে ১০০ টাকা জরিমানা করছে চাইল্ড ক্যাবিনেট। পরের দিন অভিভাবকের কাছ থেকে সেই টাকা আনছে ওই পড়ুয়া। শম্পা বলেন, ‘‘যে মুহূর্তে কোনও পড়ুয়ার ১০০ টাকা জরিমানা ধার্য করা হচ্ছে, দেখা যাচ্ছে, পরের বার সে আর একই ভুল করছে না। এক বার জরিমানা দেওয়ার পরে যদি ওই পড়ুয়া আর প্লাস্টিক না আনে, তা হলে বছরের শেষে তাকে সেই ১০০ টাকা ফেরতও দেওয়া হচ্ছে।’’ তিনি জানান, এ রকম ভাবে গত বছর ১০০ জন পড়ুয়াকে জরিমানা করা হয়েছিল। দেখা গিয়েছে, তারা পরবর্তী কালে আরও কখনও সেই একই ভুল করেনি।
কেষ্টপুর এলাকার দেশপ্রিয় বালিকা বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষিকা নাজ়রিন নাহার জানান, তাঁদের স্কুলের কাছেই রয়েছে কেষ্টপুর খাল। সেখানে প্লাস্টিক ফেললে খালের নাব্যতা হারিয়ে কী ভাবে আশপাশের এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়, তা বোঝানো হয়েছিল পড়ুয়াদের। প্লাস্টিকের কুপ্রভাবের কথা বলেই তা বর্জনের পথে হাঁটছেন তাঁরা। তাই স্কুলে মিড-ডে মিলের থালা-বাটি-গ্লাস, সব স্টিলের করা হয়েছে। যারা মিড-ডে মিল খায় না, তাদেরও বলা হয়েছে স্টিলের টিফিন বক্স আনতে। নাজ়রিন বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের পাশাপাশি অভিভাবকদের সঙ্গে দেখা হলে তাঁদেরও সচেতন করছি।’’ যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য জানান, শুধু প্লাস্টিক নয়, স্কুলের পরিবেশ সম্পর্কে পড়ুয়াদের সচেতন করতে বারান্দায় তিন ধরনের ডাস্টবিন রাখা হচ্ছে— সবুজ, সাদা-নীল এবং লাল। সবুজ ডাস্টবিনে পচনশীল জৈব বর্জ্য, সাদা-নীলে অপচনশীল অজৈব বর্জ্য এবং লাল ডাস্টবিনে প্লাস্টিক এবং বৈদ্যুতিন বর্জ্য পৃথক ভাবে ফেলার শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে পড়ুয়াদের।
যদিও বেলগাছিয়া মনোহর অ্যাকাডেমির শিক্ষিকা সুমনা সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘প্লাস্টিক বর্জন নিয়ে পড়ুয়াদের সচেতন করা হয় ঠিকই। তবে, অনেক গরিব পড়ুয়া প্লাস্টিকের বোতলেই জল আনে। কারণ, তাদের পক্ষে স্টিলের বোতল কেনা সম্ভব নয়। সাধারণ পানীয় জলের প্লাস্টিকের বোতলেও জল আনে অনেকে। ওদের কী ভাবে জলের বোতল আনতে বারণ করব?’’
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে সব স্কুল প্লাস্টিক বর্জন নিয়ে পড়ূয়াদের সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করছে, তাদের উদ্যোগ খুবই ভাল। সব স্কুলকেই এই চেষ্টা করতে হবে। এ ভাবে পড়ুয়াদের মধ্যে সচেতনতা বাড়লে তারা পরবর্তী কালে সমাজকে সচেতন করতে পারবে, ছোট থেকেই সামাজিক দায়বদ্ধতা বাড়বে তাদের। স্কুলের মাধ্যমে এই সচেতনতা ছড়ালে তার ব্যাপ্তি অনেক বড় হবে।’’