প্রতীকী ছবি
পাত পেড়ে বসে পাশের লোকটি বিষম খেলে কি ত্রাহি-ত্রাহি রব উঠবে রেস্তরাঁয়? পারস্পরিক দূরত্বের জমানায় কি অন্তরঙ্গ ভাবে বসতে পারবেন কোনও দম্পতি? নভশ্চরের মতো বর্মবস্ত্রে সজ্জিত আপ্যায়নকারীদের উপস্থিতিই কি ক্রমশ স্বাভাবিক বলে ভাবতে শিখব আমরা?
আনলক-১ পর্বে আড়াই মাস বাদে সোমবার, ৮ জুন থেকে শহরের ভোজশালাগুলি খোলার কথা। কিন্তু স্পষ্ট নির্দেশিকার অভাবে কে, কোন নিয়ম মেনে চলবেন, তা নিয়ে রীতিমতো ধন্দে বিভিন্ন রেস্তরাঁ কর্তৃপক্ষ। কোভিড-পরবর্তী পরিস্থিতি বা অতিমারিকে সঙ্গী করে জীবনযাপনের দিনকালে কী ভাবে টিকে থাকবে আতিথেয়তা-শিল্প? বিষয়টা পরিষ্কার করে মে মাসেই বিশদ নির্দেশিকা প্রকাশ করেছিল কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কিন্তু এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কী অভিমত, তা স্পষ্ট নয়। এত শত ধন্দেই অনেক রেস্তরাঁ আবার ৮ জুনের পরেও দরজা বন্ধ রাখারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কলকাতা শহরে একাধিক রেস্তরাঁর পরিচালক, একটি সর্বভারতীয় রেস্তরাঁ-গোষ্ঠী যেমন এখনই অতিথি আপ্যায়ন শুরু করতে চায় না। গুরুসদয় দত্ত রোডে একটি রেস্তরাঁর হেঁশেল থেকেই তারা ‘টেক অ্যাওয়ে’ পদ্ধতি চালু রেখেছে। ওই রেস্তরাঁ-গোষ্ঠীর অন্যতম আধিকারিক দেবাশিস ঘোষ বললেন, ‘‘এখনও তো রাত ন’টার মধ্যে ঝাঁপ বন্ধ করার তাড়া থাকবে। তাই এখনই রেস্তরাঁ খোলার পথে যাব না।’’ খানা-পিনা-গানার জন্য বিখ্যাত পার্ক স্ট্রিটের একটি রেস্তরাঁর কর্তা আনন্দ পুরী পরিস্থিতি আরও যাচাই করতে চান। কারও কারও অভিমত, তেমন লোক না-হলে এসি, বিদ্যুতের খরচ বহন করে শেষমেশ ঢাকের দায়ে মনসা বিকোনোর দশা হতে পারে। অনেক রেস্তরাঁ এই টানাটানির বাজারে ঝাঁপ বন্ধ করার পথেও হাঁটতে পারে বলে আশঙ্কা পূর্ব ভারতের হোটেল-রেস্তরাঁ অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা সুদেশ পোদ্দারের।
জানবাজারের কাছে বছরভর মহা ব্যস্ত একটি মাছ-ভাতের হোটেলের কর্ণধার দেবযানী সেন অবশ্য পরিবহণ আরও স্বাভাবিক না-হলে হেঁশেল চালুর কথা ভাবতেই পারছেন না। ‘‘আমাদের অতিথিরা সাধারণ অফিসকর্মী। বেশির ভাগই শহরতলি থেকে আসবেন। মাঝ জুলাইয়ের আগে মনে হয় না হোটেল খুলতে পারব।’’ ছোট কেবিন ধরনের রেস্তরাঁগুলি কেউ ‘টেক-অ্যাওয়ে’ চালাচ্ছে। তবে উত্তর কলকাতার অ্যালেন-মিত্র কাফের কর্তৃপক্ষ শঙ্কিত, দূরত্ব রক্ষা নিয়ে বেশি ঝকমারিতে ঘোর সঙ্কটে পড়তে হবে। চাঁদনি চকে শহরের সাবেক চিনা রেস্তরাঁর বর্তমান কর্ণধার তরুণ চট্টোপাধ্যায়ের আবার অন্য আশঙ্কা। ‘‘প্রথমে কর্মচারীদের করোনা পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চাই! কেউ এক জন সংক্রমিত হলে প্রতিষ্ঠানটিই ফের বন্ধ করতে বাধ্য হব।’’— বলছেন তিনি। তরুণবাবুর বক্তব্য, পানশালাগুলি চালু করতে দিলে রেস্তরাঁ খুলবেন তিনি।
কর্মীদের ফেস শিল্ড, মাস্ক, গ্লাভস দেওয়ার পাশাপাশি ছোঁয়াচ এড়াতে হোয়াটসঅ্যাপে মেনুর পিডিএফ সরবরাহের পরিকল্পনা করেছেন একটি রেস্তরাঁ চেনের কর্ণধার শিলাদিত্য ও দেবাদিত্য চৌধুরী। কিন্তু এক-একটি টেবিলে লোক বসানোর আদর্শ বিন্যাস নিয়েও অনেকেই সংশয়ে। পার্ক স্ট্রিটে জনপ্রিয় দু’টি পুরনো রেস্তরাঁর কর্ণধার নীতিন কোঠারি জানান, সতর্কতা-বিধি মানার জন্য খরচ বাড়বে। ‘‘তবে রেস্তরাঁয় এসে সবাই বাঁশের হাতা-চামচ বা একবার ব্যবহারের উপযোগী পাত্রে খেতে চাইবেন, এটা এখনও মনে হচ্ছে না। একটা ন্যূনতম আস্থা না-থাকলে কি লোকে রেস্তরাঁয় আসে?’’—বলছেন তিনি। অভিজাত বাসনকোসন বজায় রেখে বরং পরিচ্ছন্নতায় জোর দেওয়ার পক্ষপাতী তিনি। যা পরিস্থিতি, তাতে কিছুটা হলেও রেস্তরাঁয় খাওয়ার খরচও বাড়তে পারে। তবে অতিথিরা সবাই টেবিল বুক করে খেতে আসবেন, এ ব্যবস্থা না-পসন্দ বেশির ভাগ রেস্তরাঁকর্তারই।