বাজিমাত: ছট উপলক্ষে ফের প্রকাশ্যে চলছে বাজি বিক্রি। বুধবার, মুচিবাজারে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
কিছু ফাটানো হয়েছে। বাজেয়াপ্তও হয়েছে অনেক। তবু পুলিশেরই হিসাব বলছে, এখনও অধরা রয়ে গিয়েছে প্রচুর বাজি। অর্থাৎ, কালীপুজো এবং দীপাবলির পরেও শহরে মজুত থেকে গিয়েছে নিষিদ্ধ বাজি! ভয় ছিল, ছটপুজোর রাতে সেই সব বাজিই ঘুম কেড়ে নেবে না তো?
বাস্তবে দেখা গেল, কালীপুজো বা দীপাবলির মতো না হলেও সেই ভয়কেই কিছুটা সত্যি করে বুধবার, ছটপুজোর বিকেল থেকে নিষিদ্ধ বাজি ফাটল শহরে। যা নিয়ে পুলিশ কন্ট্রোল রুম এবং পরিবেশকর্মীদের কাছে বিকেল থেকে শুরু করে অভিযোগ আসা চলল গভীর রাত পর্যন্ত। বহু জায়গাতেই অতিষ্ঠ বাসিন্দাদের অভিযোগ, সন্ধ্যার পরে পাড়ার জলাশয়ের দিকে ছটের ভিড় যত এগিয়েছে, বিশাল সাউন্ড বক্সে তারস্বরে গানের পাশাপাশি ততই বেড়েছে বাজির দাপট। পুলিশ সূত্রের খবর, সব চেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে যাদবপুর, সার্ভে পার্ক, কসবা, বড়বাজার, ট্যাংরা, বেলেঘাটা ও কাশীপুর থেকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বড় জলাশয়ের থেকেও বেশি বাজি ফেটেছে এলাকার কৃত্রিম জলাশয়ের কাছে। সেখানে সে ভাবে পুলিশের নজরদারি না থাকাকেও এর জন্য দায়ী করেছেন তাঁরা।
বালিগঞ্জে একটি বস্তির জলাশয়ের সামনে দেখা গেল, রাত সাড়ে ১০টাতেও রাস্তা আটকে বাজি ফাটাচ্ছেন কয়েক জন। পাশেই তারস্বরে বাজছে তাসা। এক মাঝবয়সি বললেন, ‘‘সব উৎসবেই বাজি ফেটেছে। তা হলে আমাদেরটাই বা বাদ যাবে কেন?’’ তিলজলা রোডে আবার জলাশয়ে যাওয়ার জন্য লোকভর্তি লরিতে ওঠার আগে চকলেট বোমায় আগুন ধরাতে ব্যস্ত এক যুবককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, এটা কি সবুজ বাজি? তাঁর উত্তর, ‘‘সবুজ বাজি কাকে বলে জানি না। এতে সবুজ কেন, কোনও রং-ই হবে না। শুধু জোরে শব্দ হবে।’’
ছট ও জগদ্ধাত্রী পুজোতেও পরিবেশবান্ধব সবুজ বাজি ছাড়া অন্য সব ধরনের বাজি বিক্রি ও ফাটানো নিষেধ। তবে প্রথমে সব বাজিই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। তখন বাজি ব্যবসায়ীদের বড় অংশ বলতে শুরু করেন, এ বছর বাজি বিক্রি করতে দেওয়া হবে ভেবে ইতিমধ্যেই তাঁরা প্রচুর বাজি মজুত করে ফেলেছেন। পরে শুধুমাত্র সবুজ বাজিতে ছাড় দেওয়ায় আশঙ্কা তৈরি হয়, বিক্রি করতে না পারলে বিস্ফোরক আইনের বিধি মেনে ওই সব নিষিদ্ধ বাজি নির্দিষ্ট সেফ হাউসে রাখার ব্যবস্থা করবেন তো তাঁরা? না কি বিপজ্জনক ভাবে সেগুলি ফেলে রাখা হবে জনবসতির কোনও গুদামে? অনেকে আবার ছটপুজোয় গোপনে সেই বাজি বিক্রি করে হাল্কা হতে চাইবেন বলেও ভাবা হয়েছিল। বুধবার রাতে বাজি ফাটতে দেখে অনেকেরই প্রশ্ন, তা হলে কি মজুত থাকা বাজিই ফাটল ছটে?
এর জন্য অনেকেই পুলিশকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। কারণ, কলকাতা পুলিশ সূত্রেই খবর, কালীপুজোর আগের দিন পর্যন্ত শহর থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোগ্রাম বাজি উদ্ধার করেছিল তারা। সেখানে কালীপুজো এবং দীপাবলির দিনে বাজি উদ্ধার হয়েছে যথাক্রমে ১৬৮৩.৮ এবং ২০৮.৬ কিলোগ্রাম। এমনিতে শহরের ছোট দোকানে একসঙ্গে ১৫ কেজি এবং অপেক্ষাকৃত বড় জায়গায় ১৫০ কেজি বাজি বিক্রির লাইসেন্স দেওয়া হয়। তবে বিক্রির আগে বা পরে অত পরিমাণ বাজি কোথাও মজুত রাখা যায় না।
অর্থাৎ, পুলিশের উদ্ধার করা প্রায় সাত হাজার কেজি বা কোটি টাকার কাছাকাছি দামের বাজি ছড়িয়ে ছিল এ শহরেই। এখানেই প্রশ্ন, ধরা না পড়া বাজির পরিমাণ তা হলে আরও কত? ছটপুজোর আগে সে সব বাজেয়াপ্ত করতে কেন আরও বেশি সক্রিয় হল না পুলিশ?
বাজির বিষয়ে নজরদারির দায়িত্বপ্রাপ্ত কলকাতা পুলিশের রিজ়ার্ভ ফোর্সের এক শীর্ষ কর্তা বললেন, ‘‘কী করে কী করা হবে, কোনটা সবুজ বাজি আর কোনটা নয়, সেই ধোঁয়াশাই তো কাটেনি!’’ ছটের দ্বিতীয় দিনের পাশাপাশি এই ধোঁয়াশাতেই কি পার হয়ে যাবে জগদ্ধাত্রী পুজোও? উত্তর মিলবে আগামী কয়েক দিনেই।